এমপির বিরুদ্ধে গিয়ে পুলিশকে ধন্যবাদ দিল বরগুনা ছাত্রলীগ

বরগুনায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনায় বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এএসপি মহররম আলীর বরখাস্ত দাবি করলেও মহররম আলীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

সোমবার সন্ধ্যার পর বরগুনা প্রেস ক্লাবে আয়োজিত দোয়া ও আলোচনা সভায় সংসদ সদস্য শম্ভু মহররম আলীর বরখস্ত দাবি করার কিছুক্ষণ পরই পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল কবির রেজা ও সাধারণ সম্পাদক তৌশিকুর রহমান ইমরান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, যে গাড়ি ভাঙচুর করেছে, তাকে তারা চিনতে পেরেছে। আমি বলেছিলাম, যে ভাঙচুর করেছে, তাকে দেখিয়ে দিন। আমি তাকে আপনাদের হাতে সোপর্দ করব। আসলে তাদের (পুলিশের) উদ্দেশ্যই ছিল ছাত্রলীগের ছেলেদের মারবে। আমি তাদের মার ফেরানোর চেষ্টা করেছি।

কিন্তু ওখানে এত পুলিশ আসছে যে সেখানে কমান্ড শুনার মতো কেউ ছিল না। দুপুরে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্বিচারে লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। ওখানে পুলিশ কর্মকর্তা মহররম আলী ছিলেন। তিনি যেসব কমান্ড করেছেন, অনেক ভুল করেছেন। আমরা চাই তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি দেখুক এবং বরখাস্ত করে তাকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসুক। আমি যেখানে উপস্থিত, সেখানে তিনি এমন কাজ করতে পারেন না। আমি তাকে মারপিট করতে নিষেধ করেছিলাম। তারা (পুলিশরা) আমার কথা শুনেননি। ইতোমধ্যে বিষয়টি দেখার জন্য বরিশালের ডিআইজি সাহেব অ্যাডিশনাল জিআইজিকে পাঠিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, কাউন্সিলের মাধ্যমে সবার মতামত নিয়ে জেলা ছাত্রলীগের কমিটি হলে আজ এত ঝামেলা হতো না। আপনারা জানেন, ছাত্রলীগ করতে হলে যে পাঁচটি শর্তের কথা প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সে শর্তগুলো কমিটিতে মানা হয়নি। আমরা আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবকদের বিষয়টি জানিয়েছি। সেখান থেকে নির্দেশনা আসার অপেক্ষা করছি।

এদিকে আলোচনা সভার পরপরই রাত সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা প্রেসক্লাবে নবনির্বাচিত জেলা ছাত্রলীগের কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, আমরা শিল্পকলা একাডেমির সামনে থেকে একটি শোক র‌্যালি নিয়ে যাওয়ার পথে আমাদের ওপর কিছু দুষ্কৃতকারী হামলা চালায়। এ সময় তারা পুলিশের গাড়ি ভাংচুর করে। পরে পুলিশ ওদেরকে লাঠিচার্জ করলে ওদের মধ্যে অনেকে আহত হয়। আমাদের মধ্যে কারো আহতের ঘটনা ঘটে নাই। যারা আহত হয়েছে তারা আমাদের ছাত্রলীগের কর্মী না। তারা দুর্বৃত্ত মহল। তারা যদি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী হতো তাহলে শোকের দিনে এমন কর্মকাণ্ড ঘটাতে পারত না! শুধু আমাদেরকেই মারেনি, তারা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করেছে। এ জন্য পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে। বরগুনার পরিবেশকে সুস্থ রাখতে পুলিশ যে কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে, এজন্য পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই। তারা তাদের সঠিক দায়িত্ব পালন করেছে।

বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি এ ঘটনায় মো. ফারুকুল হক (পিপিএম) অতিরিক্ত ডিআইজিকে পরিদর্শনের জন্য পাঠান। তিনি এ ঘটনা পরিদর্শন করে পরে পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর মল্লিক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম তারেক রহমানকে প্রদান করে তিন সদ্যস্যের কমিটি গঠন করেন। সদস্যরা হলেন, (১) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পাথরঘাটা সারকেল তোফায়েল হোসেন সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পাথরঘাটা সারকেল (২) সাহাব উদ্দিন, পিআরও পুলিশ অফিস বরগুনা।

সোমবার দুপুর ১২টার দিকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কমপ্লেক্সে ফুল দিতে যান জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে ফেরার সময় শিল্পকলা একাডেমির সামনে পৌঁছালে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত গ্রুপের সদস্যরা তাদের ওপর হামলা চালান। এতে দুই গ্রুপের নেতা-কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ ছাড়া শিল্পকলা একাডেমি ভবনে আটকে গণহারে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পেটায় পুলিশ।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শহরজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এর আগে দীর্ঘ আট বছর পর গত ১৭ জুলাই বরগুনা শহরের সিরাজ উদ্দীন টাউন হল মিলানায়তনে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ২৪ জুলাই রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির অনুমোদন দেন।

এতে জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৩৩ সদস্যের নাম প্রকাশ করা হয়। এরপর থেকেই সদ্য ঘোষিত এ কমিটি প্রত্যাখ্যান করে বরগুনা শহরে পদবঞ্চিতরা প্রতিবাদ জানাতে থাকেন।

(ঢাকাটাইমস/১৬আগস্ট/এআর)