চট্টগ্রাম ক্লাবে পাঞ্জাবি পরে প্রবেশ নিষিদ্ধ কেন?

প্রকাশ | ১৬ আগস্ট ২০২২, ১৮:৫১ | আপডেট: ১৬ আগস্ট ২০২২, ১৮:৫৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বাঙালি পুরুষের পরিধেয় বস্ত্রের মধ্যে অন্যতম পাঞ্জাবি। সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এই পোশাকটি সব বয়সী বাঙালি পুরুষের গায়ে থাকে চোখে পড়ার মতো। আর সেই পোশাকটিই কি না নিষিদ্ধ অভিজাত চট্টগ্রাম ক্লাবে!

শুনতে অবাক লাগলেও পাঞ্জাবি পরিহিত কেউ ঢুকতে পারেন না বন্দরশহরের প্রাচীনতম এই ক্লাবে। ক্লাব কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে এতটাই জোর দেন যে ইতোপূর্বে বেশ কয়েকজন স্বনামধন্য ব্যক্তি পাঞ্জাবি পরে ঢুকতে গিয়ে রীতিমতো অপমানিত হয়েছেন।

বন্দরনগরীর এস এস খালেদ রোডে অবস্থিত চট্টগ্রাম ক্লাবের বয়স এখন দেড়শ বছরের কাছাকাছি। ১৮৭৮ সালে তৎকালীন বৃটিশ শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত এই সামাজিক প্রতিষ্ঠানটি দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীনতম ক্লাব হিসেবে বিবেচিত।

বৃটিশদের ক্লাব হিসেবে যাত্রা করায় এখানে নিয়মনীতিও মানা হতো বৃটিশ কায়দায়। ফলে ক্লাব সদস্যদের ‘ড্রেস কোড’ তৈরি করা হয়েছিল বিদেশি সাহেবদের সংস্কৃতি মেনে। সেদিন গত হয়ে দেশ ভাগ এবং তার পরবর্তী বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও চট্টগ্রাম ক্লাব ছাড়তে পারেনি বৃটিশদের অনেক নিয়মকানুন।

সেসব নিয়ম মানতে কর্তৃপক্ষের কড়াকড়িতে রীতিমতো বিব্রত পরিস্থিতিতে পড়তে হয় এখানে অনুষ্ঠানের আয়োজকদের। সচেতন মহল বারবার এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও ক্লাব কর্তৃপক্ষ তা আমলে নেন না বলেই অভিযোগ।

চট্টগ্রাম ক্লাবে পাঞ্জাবি পরে প্রবেশ করতে না দেওয়ার বিস্তর অভিযোগ থাকলেও সবচেয়ে বেশি নাড়া দেয়ার ঘটনা ঘটেছিল প্রয়াত মোহাম্মদ খালেদের সঙ্গে। দৈনিক আজাদীর দীর্ঘকালের সম্পাদক মোহাম্মদ খালেদকে পাঞ্জাবি পরার কারনে চট্টগ্রাম ক্লাবে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরে তিনি আর কখনও চট্টগ্রাম ক্লাবে যাননি।

কয়েকবছর আগে বেসরকারি একটি ব্যাংকের অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন দেশের স্বনামধন্য একটি শিল্পগ্রুপের চেয়ারম্যান। পাঞ্জাবি পরায় তাকে ক্লাবে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

২০২১ সালে শীর্ষ কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে আরেকটি ব্যাংকের অনুষ্ঠানে পাঞ্জাবি পরে যাওয়ায় একজন শীর্ষ ব্যবসায়ীকে বের করে দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছিল আয়োজক প্রতিষ্ঠান।

অভিযোগ রয়েছে, অনুষ্ঠানের ভেন্যু ভাড়া নেওয়ার সময় ড্রেসকোডের বিষয়ে ক্লাব কর্তৃপক্ষ থেকে কিছু বলা না হলেও অনুষ্ঠানে কেউ পাঞ্জাবি পরে এলেই তাকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। পাঞ্জাবি পরে এসে এমন অনেক অতিথিকেই গেট থেকে বিদায়ের ঘটনা ঘটে হরহামেশাই।

কেন এত বিতর্ক:

চট্টগ্রাম ক্লাবের সদস্য এবং অতিথিদের নির্ধারিত ড্রেসকোড টি-শার্ট কিংবা শার্টের সঙ্গে পরতে হবে ফরমাল সু বা ক্লাব নির্দেশিত স্যান্ডেল। কিন্তু পাঞ্জাবি পরে প্রবেশ করতে পারবে না ক্লাবে। এমনকি ক্লাব নির্দেশিত ড্রেসকোডের ব্যত্যয় ঘটলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।

ক্লাবটির সদস্যদেরই কেউ কেউ বলছেন, ঐহিত্যবাহী হিসেবে চট্টগ্রাম ক্লাবের নির্দিষ্ট ড্রেসকোড থাকতেই পারে। তাই বলে বাঙালির সমাজ-সংস্কৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক নিয়ম থাকা উচিত নয়। স্বাধীনতার এত বছর পরেও ব্রিটিশদের নিয়ম কেন মানতে হবে? প্রশ্ন তাদের। ব্রিটিশদের এই কালো নিয়ম পরিবর্তন জরুরি বলেও মত দিচ্ছেন তারা।

তবে ক্লাবের বর্তমান চেয়ারম্যান নাদের খানের মতে, ড্রেসকোড মেনেই আসতে হবে ক্লাবে এবং বাই-লস মেনেই ক্লাব পরিচালনা করতে হবে।

জানা গেছে, মেমোরেন্ডাম অ্যান্ড আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন অব চট্টগ্রাম ক্লাব লিমিটেড ও সদস্যদের নিয়ন্ত্রণে বাই-লস অনুযায়ী ক্লাব পরিচালিত হয়। মেমোরেন্ডাম অ্যান্ড আর্টিকেল পরিবর্তন করতে হলে ইজিএমের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে নির্বাচিত কমিটি চাইলে বাই-লসে যে কোনো ধরনের পরিবর্তন বা সংশোধন আনতে পারে। যা বিভিন্ন সময়ে উভয়ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছে।

চট্টগ্রাম ক্লাবের চেয়ারম্যান নাদের খান বলেন, ‘সন্ধ্যা ৭টার পরে ক্লাবে আসতে হলে ড্রেসকোড মানতেই হবে। ক্লাবের নির্ধারিত নিয়ম-নীতির বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই আমাদের। তবে এ নিয়ম পরিবর্তনে সদস্যরা এজিএম ও ইজিএমের মাধ্যমে সংশোধনী আনতে পারেন।’

(ঢাকাটাইমস/১৬আগস্ট/এসএন/ডিএম)