বরগুনায় ছাত্রলীগের দ্বন্দ্বের সুযোগ নিলো পুলিশ

প্রকাশ | ১৬ আগস্ট ২০২২, ২৩:২০ | আপডেট: ১৭ আগস্ট ২০২২, ০৯:৫৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বরগুনায় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর উপস্থিতিতে ছাত্রলীগকে পুলিশের লাঠিপেটার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর গত দুদিন ধরে এ নিয়েই চলছে আলোচনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ নিয়ে নানান প্রতিক্রিয়া-মতামতের ঝড় চলছে। এরপর বরগুনা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশকে ধন্যবাদ জানানো নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয় সাইবার স্পেসে।

অন্যদিকে এ ঘটনার রেশ ধরে লাঠিপেটায় নেতৃত্ব দেয়া বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মহররম আলীকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে বরিশাল রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়। তবে লাঠিপেটার পরপরই সাংবাদিকদের কাছে নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তার বরখাস্ত দাবি করেছিলেন এমপি শম্ভু।

এ ঘটনায় খন্ড খন্ড কয়েকটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এর একটি ভিডিওতে শম্ভু ওই পুলিশ কর্মকর্তার বাকবিতন্ডা চলতে দেখা যায়। সেখানে পুলিশ কর্মকর্তা শম্ভুকে বলছিলেন, ‘আমাদের গাড়ি কেনো ভাঙবে?  সরকারি গাড়িতে  কেনো হাত দিলো আপনার ছাত্রলীগ?’ প্রতিউত্তরে এমপি শম্ভু বলেন, ‘হাউ ডেয়ার ইউ, তুমি আমাকে এভাবে প্রশ্ন করতে পারো না। আই অ্যাম দ্য গভর্ণমেন্ট অ্যান্ড আই অ্যাম দ্য অথরিটি। আমি সরকার এবং তুমি সরকারের লোক। সরকারের দেওয়া গাড়ি মানে আমার দেওয়া, তো আমার দেওয়া গাড়ি আমার ছেলেরা যদি ভেঙ্গে থাকে, আমি তোমাকে নতুন গাড়ি দিবো।’

আরেকটি ভিডিওতে পুলিশ কর্মকর্তা মহররম আলী এমপি শম্ভুর সামনেই ছাত্রলীগের একজনকে জোরে চেচিয়ে আঙুল উর্ধ্বমুখি করে বলেন, ‘চুপ, গাড়ি ভাঙার প্রতিশোধ হবে কিন্তু।’ পরিস্থিতি শান্ত করতে শম্ভু বলছিলেন, ‘আপনারা মামলা দেন।’ ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘মামলাতো দেবোই।’ এর মধ্যেই শুরু হয় উপর্যুপুরি লাঠিপেটা। 

এ বিষয়ে বরগুনা -১ আসনের এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমি পুলিশকে বুঝিয়ে বলেছি, যে গাড়ি ভেঙেছে তাকে সনাক্ত করুন। মামলা দিন। কে ভেঙেছে বলেন আমরা নিজেরা তাকে ধরে আইনের হাতে সোপর্দ করবো। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্যই ছিলো ছাত্রলীগকে মারবে। মাইর থামানোর জন্য আমি বহু চেষ্টা করেছি। কিন্তু এতো পুলিশ আনছে..। কোনো কমান্ড শোনে না পুলিশে। পুলিশের কথাই পুলিশ শোনে না।’ 

প্রসঙ্গত, গত সোমবার জাতীয় শোক দিবসের দুপুরে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কমপ্লেক্সে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে যান জেলা ছাত্রলীগের নবঘোষিত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে ফেরার সময় বরগুনা শিল্পকলা একাডেমির সামনে পৌঁছালে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত গ্রুপের সদস্যরা তাদের ওপর হামলা চালান। এতে দুই গ্রুপের নেতা-কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শহরজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে। এখনও চলছে তার রেশ।

এর আগে দীর্ঘ আট বছর পর গত ১৭ জুলাই বরগুনা শহরের সিরাজ উদ্দীন টাউন হল মিলানায়তনে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ২৪ জুলাই রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি অনুমোদন দেন।

এতে জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৩৩ সদস্যের নাম প্রকাশ করা হয়। এরপর থেকেই সদ্যঘোষিত এ কমিটি প্রত্যাখ্যান করে বরগুনা শহরে পদবঞ্চিতরা প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। লাঠিচার্জের ঘটনার পর বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মহররম আলীর বরখাস্ত দাবি করলেও পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে মহররম আলীকে ধন্যবাদ জানিয়েছে জেলা ছাত্রলীগের নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সোমবার সন্ধ্যার পর বরগুনা প্রেস ক্লাবে আয়োজিত দোয়া ও আলোচনা সভায় সংসদ সদস্য শম্ভু মহররম আলীর বরখাস্ত দাবি করার কিছুক্ষণ পরই পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন ছাত্রলীগ সভাপতি ও সম্পাদক। শম্ভু সাংবাদিকদের জানান, পুলিশের গাড়ি ভাঙার ঘটনায় অপরাধীকে চিহ্নিত করে বিচার ও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলার পরও পুলিশ তার সামনেই ছাত্রলীগ সদস্যদের পিটিয়েছে। জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহরম আলী ‘মূলধারার’ নয় দাবি করে তার সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগও তোলেন এমপি।

এর কিছুক্ষণ পরই সংবাদ সম্মেলনে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল কবির রেজা জেলা পুলিশকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, শোক দিবসের আলোচন সভায় কোনো ছাত্রলীগ সদস্যকে পুলিশ লাঠিচার্জ করেনি। যাদের পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে তারা ছাত্রলীগের শোক মিছিলে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে।

(ঢাকাটাইমস/১৬ আগস্ট/আরআর)