আ.লীগ নেতা টিপু হত্যাকারীদের পরিচয় জানলে চমকে উঠবেন

প্রকাশ | ১৬ আগস্ট ২০২২, ২৩:৩৬ | আপডেট: ১৭ আগস্ট ২০২২, ১১:২০

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

রাজধানীর বৃহত্তর মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যায় কারা জড়িত, পরিচয় কী— এসব তথ্য উঠে এসেছে পুলিশের তদন্তে। ওই ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করেন তার স্ত্রী ফারজানা ইসলাম ডলি। ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মোট গ্রপ্তার ২৪ জন। আর টিপুকে হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

টিপু হত্যার ‘প্রধান সমন্বয়কারী’ সুমন শিকদার ওরফে কিলার মুসা। আর কিলিং মিশন চালাতে শামীম হোসাইন ওরফে মোল্লা শামীম মোটরসাইকেলে বহন করে শুটার আকাশকে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তবে টিপুকে গুলি করার সময় তার মাইক্রোবাসের পাশে রিকশায় থাকা বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া আফনান প্রীতি নামে এক শিক্ষার্থীও গুলিতে নিহত হন। আহত হন টিপুর গাড়ি চালক মুন্না। কিন্তু শিক্ষার্থীর পরিবার কোনো মামলা করেনি ওই ঘটনায়।

এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ডিবি ও র‌্যাব ২২ জনকে গ্রেপ্তার করলেও কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারছিলেন না। গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়, মোল্লা শামীমকে পেলে এই মামলার তদন্তে গতি আসবে। মোল্লা শামীমকে গ্রেপ্তার করতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ব্যর্থ হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে সোমবার রাতে ভারতে চলে যাবার সময় বেনাপোল বন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। এরপর তার দেওয়া তথ্যে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

আ.লীগ নেতা টিপু হত্যাকাণ্ডের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন তিনজন। তারা হলেন- স্যুটার মাসুম মোহাম্মদ আকাশ, নাসির উদ্দিন ওরফে মানিক ও সুমন সিকদার ওরফে মুসা। হত্যার পরিকল্পনাকারী মুসা কিলিং মিশন চালানোর ১২ দিন আগে দেশ ছাড়েন। পরে ওমান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। দেশে ফেরান ডিবি।

টিপু হত্যাকাণ্ডের দুদিন পরেই শুটার আকাশকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। তার কাছ থেকে পরিকল্পনাকারী মুসার নাম সামনে চলে আসে। এরপরে র‌্যাব হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। তবে এই হত্যাকাণ্ডে একে একে ২৪ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের অস্ত্র পাওয়ায় আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার যারা:

জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চাঁদপুর মতলব থানার মোবারক হোসেনের ছেলে স্যুটার মাসুম মোহাম্মদ আকাশ। বর্তমানে থাকতেন পশ্চিম মাদারটেক সবুজবাগে, রাজধানীর দক্ষিণ কমলাপুর এলাকার মোহাম্মদ আলী ইমামের ছেলে আবুল হোসেন মোহাম্মদ আরফান উল্লাহ ইমাম খান ওরফে দামাল থাকতেন মধ্য বাড্ডায়, নোয়াখালীর চাটখিলের মৃত একেএম বজলুর রহমানের ছেলে নাসির উদ্দিন ওরফে মানিক থাকেন উত্তর মুগদা ও সিরাজগঞ্জ বেলকুচির মৃত হামিদুল ইসলাম খান রানার ছেলে মারুফ খান থাকেন উত্তর শাহজাহানপুর।

২ এপ্রিল র‌্যাবের হাতে যারা গ্রেপ্তার:  

শরিয়তপুরের নড়িয়া থানার মৃত ইসমাঈলের ছেলে নাসির উদ্দিন ওরফে কিলার নাসির থাকতেন সবুজবাগে, নোয়াখালীর শিবপুরের আব্দুর রহিমের ছেলে মোহাম্মদ ওমর ফারুক থাকতেন উত্তর মুগদায়, রংপুরের গংগাচড়ার মৃত মকসেদুল হকের ছেলে মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশ থাকেন খিলগাঁও নন্দিপাড়া ও চট্টগ্রাম পটিয়ার মৃত আবু সাইদের ছেলে আবু সাহেল শিকাদার ওরফে স্যুটার সালেহ থাকতেন মিরপুর।

এছাড়া ফেনীর দাগনভূইয়ার মৃত আজ্বা. মকবুল আহমেদের ছেলে মশিউর রহমান থাকেন সিদ্ধেশ্বরী, চট্টগ্রাম রাউজানের শাহজাহান সিরাজের ছেলে ইয়াসির আরাফাত সৈকত থাকেন রূপনগর, চট্টগ্রাম পটিয়ার আবু তালেব শিকদারের ছেলে সেকেন্দার শিকদার ওরফে আকাশ থাকেন উত্তরা দক্ষিণখান, রাজধানীর শাহজাহানপুর এলাকার মৃত আবদুল কাদেরের ছেলে হাফিজুল ইসলাম ওরফে হাফিজ, হাতিরঝিল নয়াটোলা এলাকার কামাল আহমেদের ছেলে ইসতিয়াক আহম্মেদ ‍জিতু, মতিঝিল ফকিরাপুলের আবুল হোসেনের ছেলে ইমরান হোসেন ওরফে জিতু থাকতেন নিজ এলাকায়, ঝালকাঠির নলছিটি এলাকার শহিদুজ্জামানের ছেলে রাকিবুর রহমান ওরফে রাকিব থাকেন মতিঝিল ব্যাংক কলোনিতে ও চট্টগ্রাম আনোয়ারা এলাকার আবু সাইদ সিকদার ওরফে আবু সৈয়দ সিকাদারের ছেলে সুমন সিকদার ওরফে মুসা থাকেন রাজধানীর পল্লবীতে।

৩১ জুলাই গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা:

লক্ষীপুর মান্দারীর মৃত আবুল কাশেমের ছেলে মাহবুবুর রহমান টিটু থাকেন মিরপুর, মানিকগঞ্জ সদর এলাকার মৃত জাওয়াহের আলী খানের ছেলে জুবের আলম খাস ওরফে রবিন থাকেন শান্তিনগর, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের মোখলেছুর রহমানের ছেলে আরিফুর রহমান সোহেল ওরফে ঘাতক সোহেল থাকেন মতিঝিল ও মুন্সিগঞ্জ সদর এলাকার মৃত তমিজউদ্দিনের ছেলে খাইরুল ইসলাম ওরফে খাইরুল থাকেন ওয়ারী।

১ আগস্ট গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন:

বরিশালের বাকেরগঞ্জের মৃত চাঁন মিয়ার ছেলে সোহেল শাহরিয়ার (৪১) থাকেন শাহজাহানপুর ও ফরিদপুরের ভাঙ্গার শহিদ রেজার ছেলে মারুফ রেজা সাগর (৪১) থাকেন এজিবি কলোনি মতিঝিল।

১৫ আগস্ট গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন:

শামীম হোসাইন ওরফে মোল্লা শামীম, তৌফিক হাসান ওরফে বাবু, সুমন হোসেন ওরফে সুমন, এহতেশাম উদ্দিন চৌধুরী ওরফে অপু ও শরিফুল ইসলাম হৃদয়।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এই গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের মধ্যে শামীম হোসাইন ওরফে মোল্লা শামীম ও তৌফিক হাসান ওরফে বাবুকে টিপু হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে। আর সুমন হোসেন ওরফে সুমন, এহতেশাম উদ্দিন চৌধুরী ওরফে অপু ও শরিফুল ইসলাম হৃদয়কে গ্রেপ্তার দেখানো হবে অস্ত্র মামলায়।

(ঢাকাটাইমস/১৬আগস্ট/এএইচ/কেএম)