চট্টগ্রামের ফ্লাইওভার ট্র্যাজেডি: ৯ বছরেও শেষ হয়নি বিচার

প্রকাশ | ১৭ আগস্ট ২০২২, ১৫:০৩ | আপডেট: ১৭ আগস্ট ২০২২, ১৫:৩৮

চট্টগ্রাম ব্যুরো, ঢাকাটাইমস

চট্টগ্রামে বহদ্দারহাটে ফ্লাইওভারের গার্ডার চাপায় ১৭ জনের মৃত্যুর ঘটনার প্রায় ১০ বছর পার হলেও এ ঘটনায় দায়ীদের বিচার শেষ হয়নি এখন পর্যন্ত। অনেক বেশি সাক্ষী থাকায় তাদের হাজির করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন জটিলতার কারণে মামলাটির বিচার শেষ হতে সময় লাগছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে মামলাটির ১৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন  মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী। তিনি আরও জানিয়েছেন, একজন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে মামলাটি ক্লোজ করার বিষয়ে ভাবছেন তারা।

জানা গেছে, দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ ও ৩৩৮ ধারায় ৮ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এই মামলায় বিচার কাজ চলছে। আসামিদের মধ্যে ৭ জনই প্রকৌশলী, একজন কর্মচারী। এতে সাক্ষী রাখা হয়েছে ২৭ জনকে। অপরাধ প্রমাণিত হলে ৩০৪ ধারায় তাদের সর্বোচ্চ ১০ বছর ও ৩৩৮ ধারায় সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ডের কথা উল্লেখ রয়েছে দণ্ডবিধিতে।

তবে মামলার এজহারে নাম থাকলেও আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্রে সিডিএর তিন কর্মকর্তা, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ তিন জন এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মতিনসহ ১৮ জনের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।

মামলার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর অনুপম চক্রবর্তী বলেন, মামলাটি শেষ পর্যায়ে। এর মধ্যে ২৭ জনের মধ্যে ১৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে।  আগামী ৩ অক্টোবর এ মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের সময় নির্ধারণ করেছেন আদালত। ৩ তারিখে সাক্ষী হিসেবে চিকিৎসক পুলুক কুমার বিশ্বাস আসার কথা রয়েছে। তার সাক্ষী হয়ে গেলে মামলাটি ক্লোজ করতে পারবো বলে মনে করছি। কারণ মামলার আইওর সাক্ষী আমরা নিয়েছি।  

এ ক্ষেত্রে চাঞ্চল্যকর এই মামলাটির বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মামলাটি ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে চলছিল। সেখানে তারা ১৮টা সাক্ষী নিয়েছে। ২০২০ সালে মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে চতুর্থ অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলাটি এসেছে। তারপর করোনার কারণে আমাদের কার্যক্রম অনেকদিন বন্ধ রাখতে হয়েছে। আমরা একজনের সাক্ষ্য নিয়েছি। এখন আরেকজন ডাক্তারের সাক্ষ্য নিতে পারলে মামলাটা আশা করি ক্লোজ করা যাবে।’

মামলায় যাদের বিচার হচ্ছে তারা কারা এমন প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর অনুপম চক্রবর্তী বলেন , ‘অভিযুক্তদের সকলেই ইঞ্জিনিয়ার, একজন শুধু তাদের কর্মচারী।’

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট এলাকায় বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের স্টিলের গার্ডার ধসে পড়ে ১৭ জন নিহত হয়। সেই ঘটনায় আহত হয় অর্ধশতাধিক। এর আগে ২৯ জুন, ২০১২ সালে বহদ্দারহাটের এই নির্মাণাধীন ফ্লাইওভার থেকে ১৩০ ফুট দীর্ঘ কংক্রিটের গার্ডার ভেঙে পড়েছিল।

ওই বছরের ২৬ নভেম্বর চান্দগাঁও থানার তৎকালীন এসআই আবুল কালাম আজাদ ২৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলায় ফ্লাইওভার প্রকল্পের পরিচালক চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নির্বাহী প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান, সহকারী প্রকৌশলী তানজিব হোসেন ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী সালাহ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীসহ ২৫ জনকে আসামি করা হয়। অন্য আসামিদের মধ্যে ছিলেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর আখতার অ্যান্ড পারিসা ট্রেড সিস্টেমসের ১০ জন এবং বেসরকারি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএআরএম অ্যাসোসিয়েটসের ১২ জন। তদন্ত শেষে ২০১৩ সালের ২৪ অক্টোবর পুলিশ আট জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। 

পরে ২০১৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর চান্দগাঁও থানার তৎকালীন পরিদর্শক তদন্ত এস এম শহীদুল ইসলাম মামলাটির চার্জশিট আদালতে জমা দেন। এতে ১৮ জনকে বাদ দেয়া হয়। এজহারভুক্ত ৭ জন সহ মোট ৮ জনকে অভিযুক্ত করা হয় চার্জশিটে। 

২০১৪ সালের ১৮ জুন  চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ এস এম মজিবুর রহমানের আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করে আট আসামির বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দেন। বর্তমানে চতুর্থ অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভূঁঞার আদালতে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।

মামলায় অভিযুক্তরা হলেন—ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর আখতারের সে সময়ের প্রকল্প ব্যবস্থাপক গিয়াস উদ্দিন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনজুরুল ইসলাম, প্রকল্প প্রকৌশলী আব্দুল জলিল, আমিনুর রহমান, আব্দুল হাই, মো. মোশাররফ হোসেন রিয়াজ, মান নিয়ন্ত্রণ প্রকৌশলী শাহজান আলী ও রফিকুল ইসলাম। তাদের মধ্যে রফিকুল ইসলামের নাম মামলার এজাহারে ছিল না। তদন্ত শেষে পুলিশ তার নাম অভিযোগপত্রে যুক্ত করেন।

২০১০ সালে এম এ মান্নান (বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার) ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ শুরু করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। নির্মাণ কাজ শেষে ২০১৩ সালের ১২ অক্টোবর ফ্লাইওভারটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর ফ্লাইওভারটি কার্যকর না হওয়ায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে আরাকান সড়কমুখী র‌্যাম্প নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিডিএ। ৩২৬ মিটার দীর্ঘ এবং ৬ দশমিক ৭ মিটার চওড়ার র‌্যাম্পটি নির্মাণ শেষে ২০১৭ ডিসেম্বরে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।

(ঢাকাটাইমস/১৭আগস্ট/এআর)