দাম কমাতে প্রয়োজনে ডিম আমদানি, বাণিজ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন

প্রকাশ | ১৭ আগস্ট ২০২২, ১৮:০৮ | আপডেট: ১৭ আগস্ট ২০২২, ১৮:১৯

এমএস নাঈম, ঢাকাটাইমস

ডিমের দাম কমাতে প্রয়োজনে আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়ার যেকথা বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন তার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পোল্ট্রি সেক্টরের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিম আমদানির প্রয়োজন নেই। তাদের যুক্তি, দেশে দিনে চার কোটি ডিম উৎপাদন হয়। বাজারে চাহিদাও প্রায় সমান। দাম কমাতে উৎপাদন বাড়ানোর দিকেই জোর দিতে হবে।

আমদানি করলেই দাম কমবে এমন ধারণার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছে দেশের প্রাণিসম্পদ সেক্টরের অন্যতম শীর্ষ সংগঠন এনিমেল হেলথ কোম্পানিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আহকাব)।

সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট নজরুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বাণিজ্যমন্ত্রী কোন চিন্তা থেকে প্রয়োজনে আমদানির কথা বলেছেন আমি জানি না। আমি মনে করি, আমাদের ডিম আমদানির কোনো প্রয়োজন নেই। বরং আমরা কিভাবে ডিম উৎপাদনের পরিমান বাড়াতে পারি সেই দিকেই নজর দেওয়া উচিত।’

দেশের বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দামই অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। ডিমের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। বুধবার বাজারে প্রতি হালি ডিম বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা দরে।

বুধবার সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর ব্রিফিংয়ে ডিমের দাম নিয়ে তার কাছে প্রশ্ন রাখেন সাংবাদিকরা। মন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন ছিল—ডিমের দাম অস্বাভাবিক বাড়ার বিষয়ে আমদানির কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে কি না।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দাম কমানোর স্বার্থে প্রয়োজনে ডিম আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে একটু সময় তো লাগবে। আমরা একটু দেখি। যদি এমনটাই হয় যে, ডিম আমদানি করলে পরে এটা কমবে, তাহলে আমরা আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলবো। আমরা কৃষি, মৎস্যসহ কয়েকটা মন্ত্রণালয় মিলে কীভাবে ডিমের দাম কমানো যায় সে বিষয়ে আলোচনা করব। তবে সবকিছু কিন্তু রাতারাতি করা সম্ভব না।’

তবে ডিমের দাম বাড়েনি বলেই দাবি করছেন আহকাব প্রেসিডেন্ট নজরুল ইসলাম। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘যাতায়াত ব্যয় এবং পোল্ট্রি ফিডের দাম বাড়ায় ডিমের দামে তার প্রভাব পড়েছে। দেশের বাজারে যতগুলো প্লোটিন যুক্ত খাবার পাওয়া যায় তারমধ্যে এখনও সবচেয়ে কম দাম ডিমের।’

ডিমের দাম বাড়ার পেছনে ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়াও একটি কারণ হিসেবে দেখাচ্ছেন তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আমান উল্লাহ।

তার ভাষ্য, পোল্ট্রি খাদ্যগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ইউক্রেন যুদ্ধ এবং তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে পোল্ট্রি খাদ্যের দামও বেড়েছে। এছাড়া ব্যবসা মন্দার কারণে  অনেকেই খামার বন্ধ করে দিয়েছে।

আমান উল্লাহ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এসব কারণে ডিমের উৎপাদন কমেছে। অনেক খামারি ব্রয়লায় মুরগির দাম বেশি দেখে বিক্রি না করে ডিম রেখে দিয়েছে বাচ্চা ফুটানোর জন্য। এছাড়া ডিমের বাজার ভালো দেখে অনেকে ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়েছে।’

ডিমের দামবৃদ্ধির যৌক্তিকতা কতটুকু জানতে চাইলে তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এটা কোনো অবস্থায় ঠিক নয়। এভাবে দাম বেড়ে গেলে সাধারণ মানুষ চলবে কেমন করে?’

‘তবে আমি মনে করি ডিমের দাম কমবে। যেমন আজ (বুধবার) প্রতিটি ডিম বিক্রি হয়েছে দশ টাকা ৩০ পয়সা করে। যা খুচরা বাজারে বিক্রি হবে ১১ টাকা ২৫ পয়সায়। ধীরে ধীরে দাম আর কমে যাবে বলে আশা করছি’—যোগ করেন আমান উল্লাহ।

বিদেশ থেকে ডিম আমদানির কোনো প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশে—ক্যাবের প্রেসিডেন্ট গোলাম রহমান। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে একটি শিল্পই রয়েছে যা থেকে দ্রুত ফলাফল আসে আর তা হল পোল্ট্রি শিল্প। মাত্র ৩ মাসেই পোল্ট্রি শিল্প থেকে ফলাফল আসে।’

দাম বেড়েছে বলে আমদানি করতে হবে কেন প্রশ্ন রেখে ক্যাব প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এই শিল্পে সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা না করে কেন বিদেশ থেকে ডিম আমদানি করতে হবে? বরং এই শিল্পে আরও সরকারি সহযোগিতা বাড়িয়ে এবং পোল্ট্রি ফিডের দাম কমিয়ে ডিম উৎপাদন বাড়াতে হবে।’

(ঢাকাটাইমস/১৭আগস্ট/ডিএম)