সর্বজনীন পুষ্টির ডিমও সাধারণের নাগালের বাইরে

ওমর ফারুক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৮ আগস্ট ২০২২, ০৯:০৬

বাজারে ডিম এখন চড়া দামের পণ্য। এক হালি ডিম কিনতে খরচ পড়ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। দেশে এর আগে এত চড়া দামে ডিম বিক্রি হয়নি। বার্ড ফ্লু ভাইরাসের কারণে ২০০৯ ও ২০১০ সালে ডিমের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছিল। এ রোগের কারণে তখন অনেক পোল্ট্রি খামার বন্ধ হয়ে ডিমের সংকট তৈরি হয়।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদশের (ক্যাব) পণ্যমূল্য তালিকায় দেখা যায় ২০১০ সালে প্রতি হালি লাল-সাদা ২৫.৩৩ টাকা, দেশি ৩০.৩৩ টাকা এবং হাঁসের ডিম ২৯.৮৩ টাকায় বিক্রি হতো। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফার্মের এক হালি লাল ডিমের দাম ৩৬ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করেছে। এই প্রবণতা কয়েক মাস আগেও দেখা গেছে।

এ হিসাবে এক ডজনের দাম ১০০ থেকে ১১০ টাকায় ঘোরাফেরা করেছে। মাস দুয়েকের ব্যবধানে সে দাম এখন গিয়ে ঠেকেছে ১৬০ টাকায়।

বর্তমানে মুরগির খাবারের দাম ও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিকেই ডিমের দাম বাড়ার মূল কারণ বলছেন ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টরা।

গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীতে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম ডজনে ৪০ টাকা বেড়ে ১৬০ টাকায় উঠেছে। ডিমের সঙ্গে ব্রয়লার মুরগিও কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, ২০০৮-০৯ ও ২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশে মুরগির ডিমের হালির গড় দাম ছিল ২৭ টাকার আশপাশে। সর্বশেষ গত জুলাইয়ে গড় দাম ছিল ৪০ টাকার কিছু কম।

ডিমের সংকটের বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, ডিমের বাজার স্থিতিশীল করতে প্রয়োজনে বিদেশ থেকে আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কিন্তু তা কতটা যুক্তিযুক্ত, এমন প্রশ্ন উঠছে সংশ্লিষ্ট মহলে।

ডিমের দাম যখন কম থাকে, তখন ফার্মের মুরগির বাদামি ডিম সাধারণত প্রতি হালি ৩০ থেকে ৩২ টাকায় বিক্রি হয়। যখন বাড়ে, তখন তা ৪০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। যে টাকায় এক হালি ডিম পাওয়া যায়, তা দিয়ে মাছ-মাংস কোনোটিই কেনা সম্ভব নয়। ডিম খুব অল্প খরচে একটি পুষ্টিকর খাবারের উৎস। কিন্তু তার দাম বেড়ে যাওয়াতে বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পোল্ট্রি শিল্পের প্রায় ৭০ শতাংশই আমদানিনির্ভর। মুরগির খাদ্য, পরিবহন ব্যয়, জ্বালানির দাম ও ডলারের দর বেড়ে যাওয়ায় মুরগি ও ডিমের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে মুরগির বাচ্চার দাম না পাওয়ায় দেশে এখন মুরগি ও ডিমের উৎপাদন সঙ্কটে পড়েছে। সব মিলিয়ে দাম বাড়ছে। বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, কয়েক মাস ধরেই আন্তর্জাতিক বাজারে মুরগির খাদ্য তৈরির সামগ্রী যেমন ভুট্টা ও সয়ামিলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানি খরচ আরও বেড়ে গেছে। এসব কারণে মুরগির খাদ্য উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে।

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিকেও পোল্ট্রি ও ডিমের দাম বৃদ্ধিকে অন্যতম কারণ দেখিয়ে তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মুরগির খাবার পরিবহনে আগের চেয়ে খরচ বেড়ে গেছে। প্রায় ৮০ ভাগের মতো।

ফার্মের মুরগির খাদ্য তৈরি করা হয় ভুট্টা থেকে। এই খাদ্য তৈরি করতে প্রয়োজন হয় সয়ামিলের। সম্প্রতি বিশ্ববাজারে এসব পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে দেশে ভুট্টা আমদানির হার কমে গেছে। সব মিলে গত দুই মাসের মধ্যেই ফার্মের মুরগি ও ডিম উৎপাদন খরচ প্রায় ২৫ শতাংশ বেড়ে গেছে বলে দাবি করেন পোল্ট্রি মালিকরা।

পোল্ট্রির খাদ্যের দাম বৃদ্ধির পর লোকসান হওয়ার কারণে অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে দাবি করে নজরুল বলেন, অনেক খামার বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করেও ন্যায্য মূল্যে বাচ্চা বিক্রি করতে না পেরে ব্যাপকভাবে লোকসান হয়েছে হ্যাচারির। দীর্ঘদিন এভাবে ক্ষতির মুখে পড়ে অনেক হ্যাচারি বন্ধ হয়ে গেছে। আর হ্যাচারি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে মুরগির উৎপাদন কমে গেছে।

দুই মাস আগে সপ্তাহে প্রায় ২ কোটি ১৭ লাখ বাচ্চা উৎপাদন থাকলেও সেখানে বর্তমানে উৎপাদন নেমে এসেছে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখে। ফলে চাহিদার তুলনায় কমে গেছে ডিম উৎপাদন।

দেশের তিনটি জায়গায় ডিমের দর নির্ধারণ করা হয়। এই দরকে কেন্দ্র করেই দেশব্যাপী ডিমের দর ওঠানামা করে। জায়গা তিনটি হলো রাজশাহী, ঢাকা ও কিশোরগঞ্জ। ব্যবসায়ীদের ভাষ্যমতে, পাবনাতেও দর বাঁধা হয়। তবে তার প্রভাব বাজারে পড়ে না। আরেক দল ব্যবসায়ীর মতে, কিশোরগঞ্জেও ঢাকার দরেই বেচাকেনা হয়। পাইকারি দরের সঙ্গে খুচরা ব্যবসায়ীরা পরিবহন খরচ ও মুনাফা যোগ করে বিক্রি করেন।

ডিমের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে বাজারে জিনিসপত্রের দাম, মুরগীর খাদ্য, পরিবহন খরচ ইত্যাদির গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাছাড়া চাহিদার চেয়ে উৎপাদন কম হলেই ডিমের দাম বেড়ে যায়।

(ঢাকাটাইমস/১৮আগস্ট/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :