১০ হাজার কোটি ডলার পোশাক রপ্তানির লক্ষ্য

বীর সাহাবী, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৮ আগস্ট ২০২২, ১২:৫৪ | প্রকাশিত : ১৮ আগস্ট ২০২২, ১০:৩৮

সরকারের নীতিসহায়তা পাওয়ার সঙ্গে গ্যাস-বিদ্যুতের সরবরাহ ঠিক থাকলে চলমান মন্দা পরিস্থিতিতেও ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ। সংগঠনটির ধারণা, ২০৩০ সালে পোশাক শ্রমিকের সংখ্যা দাঁড়াবে ৬০ লাখে।

বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। সংগঠনটির নেতারা মনে করেন, চীন থেকে গত কয়েক বছরে অনেক ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে এসেছে। আগামী ৮ বছরে এর পরিমাণ আরও বাড়বে।

চীন যেহেতু পরিবেশগত কারণে টেক্সটাইল থেকে সরে আসছে, ফলে সেগুলো সঙ্গত কারণেই বাংলাদেশের দিকেই আসবে বলে মনে করছে বিজিইএমএ।

এছাড়া দীর্ঘদিন ধরেই পোশাক খাতে পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ ও নতুন নতুন বাজার খোঁজার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছিল। বিজিএমইএ বলছে, উৎপাদনশীলতা ৬০ ভাগ বাড়িয়ে ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের সব দেশেই বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি করতে চান তারা।

পোশাক খাতের মালিকদের দাবি, বাংলাদেশেই এখন সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পরিবেশবান্ধব কারখানা কাজ করছে। ২০১২ সালের নভেম্বরে তাজরীন ফ্যাশনসে আগুনে শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যু ও ২০১৩ সালের এপ্রিলে সাভারে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় এক হাজারের বেশি শ্রমিক মারা যান। এরপর বেশ কয়েক বছর ধরে পোশাক কারখানাগুলোর কর্মপরিবেশ নিয়ে কাজ করে ‘অ্যাকর্ড’ ও ‘অ্যালায়েন্স’-এর মতো বিদেশি ক্রেতাদের জোটগুলো।

বিজিএমইএর সভাপতি মো. ফারুক হাসান বলেন, ‘বর্তমানে আমরা যেসব পোশাক রপ্তানি করি, তার সঙ্গে বেশি মূল্য সংযোজিত হয় এমন পোশাক উৎপাদনের টার্গেট নিয়েছি। সেই সঙ্গে আমরা টেকনিক্যাল টেক্সটাইল রপ্তানিতেও জোর দিচ্ছি। আমরা আশা করছি, ২০৩০ সাল নাগাদ পোশাক খাতে রপ্তানি আয় ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে।’

আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ২০টি লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যমে টেকসই পোশাক শিল্প গড়তে একটি রোডম্যাপ তৈরির কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, তিনটি আলাদা গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেই কাজ করছে।

গত ২০২১–২২ অর্থবছরে ৪ হাজার ২৬১ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। অর্থাৎ, ১০ হাজার কোটি ডলারের লক্ষ্য অর্জনে আগামী ৮ বছরের মধ্যে বাড়তি ৫ হাজার ৭৮৪ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করতে হবে।

এর আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বা ২০২১ সালে ৫০ বিলিয়ন বা ৫ হাজার কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল বিজিএমইএ। ২০১৪ সালে এই লক্ষ্য ঘোষণার পর একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছিল সংগঠনটি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত করোনাসহ নানা কারণে লক্ষ্যমাত্রাটি অর্জিত হয়নি।

বিজিএমইএ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, ‘বাজার সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে এই লক্ষ্য অর্জন করতে চান তারা। সবাই ভালোভাবে কাজ করতে পারলে এটা সম্ভব। ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও এটা সম্ভব হবে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও গত কয়েক বছরের প্রবৃদ্ধিই এই খাতের উদ্যোক্তাদের লক্ষ্য নির্ধারণে সাহসী করে তুলেছে।’

এ বছর ১১ বিলিয়ন ডলার বেশি শিপমেন্ট হয়েছে জানিয়ে শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, ‘এটা আমাদের টার্গেটের কাছাকাছি। আমরা চেষ্টা করব আগামী ৮ বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলারের টার্গেট অর্জন করতে।’

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিও আশা করছেন ২০৩০ সালের আগেই পোশাক রপ্তানি ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। এক্ষেত্রে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য হলো তৈরি পোশাক। বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার কারণে আমাদের আরও ৫ থেকে ৬টি পণ্য বছরে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি করবে।’

সম্প্রতি তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের সংগঠনটি টেকসই পোশাক শিল্প গড়তে ২০টি লক্ষ্য ঘোষণা করে। ২০৩০ সালের মধ্যে এসব লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে চায় সংগঠনটি। তার মধ্যে একটি হলো— পোশাকের রপ্তানি ১০ হাজার কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়া।

বিজিএমইএর ২০টি লক্ষ্যের মধ্যে অন্যতম হলো- কার্বন নিঃসরণ ৩০ শতাংশ কমানো, টেকসই কাঁচামাল ব্যবহার ৫০ শতাংশে উন্নীত করা, শোভন কাজের পরিবেশ শতভাগ নিশ্চিত করা, পানির অপচয় ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনা, ক্ষতিকর রাসায়নিকের ব্যবহার শতভাগে নামিয়ে আনা, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার ২০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া, গ্যাস–বিদ্যুতের ব্যবহার ৩০ শতাংশ হ্রাস, নারী–পুরুষের সমতা শতভাগ নিশ্চিত করা, কর্মসংস্থান ৬০ লাখে উন্নীত করা, উৎপাদনশীলতা ৬০ শতাংশে উন্নীত করা, পৃথিবীর সব দেশে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি করা ইত্যাদি।

(ঢাকাটাইমস/১৮আগস্ট/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :