গার্ডার তুলে ক্রেন চালানো শিখছিলেন চালকের সহকারী, এতেই পাঁচ প্রাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৮ আগস্ট ২০২২, ১৭:০৯ | প্রকাশিত : ১৮ আগস্ট ২০২২, ১৭:০০

উত্তরায় বিআরটি প্রকল্পের গার্ডার দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ক্রেনটির চালকের হালকা যানের লাইসেন্স থাকলেও ভারী যানের লাইসেন্স ছিল না। ঘটনার সময় ক্র্যানটি চালাচ্ছিলেন চালকের সহকারী, যিনি গার্ডার তুলে ক্র্যান চালানো শিখছিলেন। ধারণক্ষমতার বেশি ওজনের গার্ডার তোলা পুরনো ক্রেনটির ফিটনেস পরীক্ষাও এবার করা হয়নি। এসব ক্রটির কারণেই প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানায় র‌্যাব।

র‌্যাব বলছে, বিআরটি প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না গেজুবা গ্রুপ কোম্পানির (সিজিজিসি) কাছ থেকে ভারি সরঞ্জাম সরানোর দায়িত্ব পেয়েছিল 'ইফসকন বাংলাদেশ লিমিটেড'। তারা অন্য একটি প্রতিষ্ঠান থেকে মাসিক ভাড়া চুক্তিতে ক্রেনটি সরবরাহ করে। এর ধারণক্ষমতা ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টন। কিন্তু গার্ডারের ওজন ৭০ টন।

উত্তরায় গার্ডারচাপায় পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্তদের ধরতে বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালায় র‌্যাব। এ সময় ক্রেনচালক, তার সহকারী এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাকর্মীসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে বাহিনীটি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘দুর্ঘটনার দিন ক্রেনটির চালক আল আমিন হৃদয় তার আসনে ছিলেন না। রাকিব হোসেন নামে তার এক সহকারী ক্রেনটি চালাচ্ছিলেন, যদিও ক্রেন চালানোর কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না তার।’

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- ক্রেন চালক আল আমিন হোসেন হৃদয়, তার সহকারী রাকিব হোসেন, দুর্ঘটনাস্থলে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ফোর ব্রাদার্স গার্ড সার্ভিসের ট্রাফিকম্যান মো. রুবেল, মো. আফরোজ মিয়া, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সেফটি ইঞ্জিনিয়ার জুলফিকার আলী শাহ, হেভি ইকুইপমেন্ট সরবরাহের দায়িত্বে নিয়োজিত ইফসকন বাংলাদেশ লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী ইফতেখার হোসেন, হেড অব অপারেশন আজহারুল ইসলাম মিঠু, ক্রেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বিল্ড ট্রেড কোম্পানির মার্কেটিং ম্যানেজার তোফাজ্জল হোসেন তুষার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা রুহুল আমিন মৃধা ও মঞ্জুরুল ইসলাম।

থার্ডপার্টি প্রতিষ্ঠান বিল্ড ট্রেড ইঞ্জিনিয়ার লিমিটেড মাসিক ভাড়ায় ক্রেন সরবরাহ করে বলে জানান কমান্ডার মঈন। বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কর্মকর্তা গ্রেপ্তার রুহুল আমিন ও মার্কেটিং ম্যানেজার তুষার ক্রেনের ভাড়া, চুক্তি, ড্রাইভার নিয়োগ, ক্রেনের ফিটনেস যাচাইসহ অন্যান্য দায়িত্বে ছিলেন। তারা অতিরিক্ত লাভের জন্য অল্প পারিশ্রমিকে ভারি গাড়ি চালানোর লাইসেন্স ছাড়া অপারেটর আল আমিনকে নিয়োগ দেন। ক্রেনের সর্বশেষ ফিটনেস গেল বছর যাচাই করা হলেও এ বছর তা করা হয়নি। এই গাফিলতির কারণে রুহুল আমিন ও তুষারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

১৫ আগস্ট রাজধানীর উত্তরার জসিমউদ্দিন রোড এলাকায় বিকাল চারটার দিকে বিআরটি প্রকল্পের গার্ডার সরানো হচ্ছিল। সড়ক খোলা থাকায় সেখানে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক ছিল। একটি গার্ডার সরানোর সময় ক্রেন কাত হয়ে গেলে সেটি নিচে প্রাইভেটকারের ওপর পড়ে। এতে ঘটনাস্থলে একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা হয়।

আটক ব্যক্তিরা র‌্যাবকে যা জানালেন

ঘটনার দিন দুপুর দুইটা থেকে ক্রেনচালক আল আমিন ও রাকিব সেটি চালনা করছিলেন। একটি গার্ডার স্থাপন শেষে দ্বিতীয় গার্ডার তোলার সময় ক্রেনটি একদিকে কাত হয়ে যায়। এতে প্রায় ৭০ টন ওজনের গার্ডারটি একটি প্রাইভেটকারের ওপর পড়ে। এ সময় হেলপার রাকিব ক্রেন চালাচ্ছিলেন। ক্রেন অপারেটর আল আমিন বাইরে থেকে নির্দেশনা দিচ্ছিলেন।

ফিটনেস যাচাই না করেই গুরুত্বপূর্ণ ব্যস্ত সড়কে ভারি গার্ডার স্থাপনের কাজ করছিল তারা। গার্ডার স্থাপনের সময় অতিরিক্ত একটি সহায়ক ক্রেন উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তা সেখানে ছিল না।

ট্রাফিকম্যান রুবেল ও আফরোজ তিন মাস আগে এই প্রকল্পে যোগ দেন। তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কোনো প্রশিক্ষণ ছিল না।

(ঢাকাটাইমস/১৮আগস্ট/এসএস/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :