বন্ধুত্বের সুবাদে বাসায় গেলেই সর্বনাশ!

প্রকাশ | ১৮ আগস্ট ২০২২, ১৮:২৪ | আপডেট: ১৮ আগস্ট ২০২২, ১৯:১০

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন। দুঃখিত! ভুল করে আপনার ফোনে টাকা চলে গেছে। টাকা ফেরত পাওয়ার কথা বলতে বলতে অনেক কথার ফুলঝুড়ি মেলতেন রওশন আরা রুমা। এরপর নিয়মিত কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধুত্ব শুরু। একপর্যায়ে বাসায় নিমন্ত্রণ। আর বন্ধুত্বের সুবাদে বাসায় গেলেই সর্বনাশ হয়েছে অনেকের।

বুধবার রাতে রাজধানীর উত্তরা বার-তের মোড় এলাকা থেকে ‘বন্ধু-বান্ধবী চক্রের’ তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন এই প্রতিবেদককে এসব তথ্য জানান।

গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন- চক্রের মূলহোতা মোহাম্মদ মজনু (৩২) ও তার বান্ধবী রওশন আরা রুমা (৩৩) এবং তাদের সহযোগী আব্দুস সালাম (৫০)। এ সময় তাদের কাছ থেকে নগদ ৫৬ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।

ঢাকায় নারীর প্রলোভনে বাসায় এসে সর্বস্বান্ত হয়েছেন অনেকেই। বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি চক্র সক্রিয় রয়েছে। এই বন্ধু-বান্ধবী রুমা-মজনু চক্রেও আট সদস্য রয়েছে। চক্রের কেউ তখন ডিবি, কেউ স্থানীয় প্রভাবশালী সেজে রুমার সঙ্গে ভুক্তভোগীর নগ্ন ছবি তুলে জিম্মি করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে অভিযোগ আছে।

ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, তুরাগ তৃপ্তি ফুড অ্যান্ড বেকারির মালিক আল আমিনের এমন অভিযোগের সূত্র ধরে তদন্তে নামে পুলিশ। পরে তদন্ত করতে গিয়ে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। দোকানের কর্মচারী মজনুই তার মালিক আল আমিনকে বন্ধু-বান্ধবী চক্র দিয়ে ফাঁসিয়েছেন।

ভুক্তভোগী দোকানি আল আমিন বলেছেন, গত ১১ জুলাই একটা অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসে। পরিচয় দেন রুমা নামে। এর আগে আমার মোবাইলে ৫০ টাকা ফ্লেক্সিলোড আসে। ভুলে তার টাকা চলে আসছে বলে জানান। পরে বেশ সময় কথা হয় তার সঙ্গে। এরপর এভাবে কয়েকদিন কথা বলার পর একদিন রুমা বাসায় দাওয়াত খেতে যেতে বলেন। পাশে বাসা হওয়ায় আমি সম্মতি জানাই। পরে দাওয়াত খেতে ওই বাসায় যাওয়ার সময় কর্মচারী মজনুকেও নিয়ে যান। বাসায় যাওয়ার পর মজনু বাইরে যাবেন বলে বেরিয়ে আসেন। এর কিছুক্ষণ পরেই ডিবি পরিচয়ে কয়েকজন লোক বাসায় ঢুকে।

আল আমিন বলেন, কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই মারধর শুরু করে। আর জোর করে রুমার সঙ্গে আপত্তিকর ছবি তুলে নেয়। পরে তারা ১০ লাখ টাকা দাবি করে। নতুবা তাকে গুম করারও হুমকি দেয়। একপর্যায়ে তাদের সাড়ে ৩ লাখ টাকা দেয়। এ সময় সঙ্গে থাকা ৩৭ হাজার টাকাও ছিনিয়ে নেয় তারা।

ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ব্যক্তিদের টার্গেট করে চক্রের লোকজন ফোন নম্বর সংগ্রহ করে এবং পরে রুমাকে দিয়ে টাকা চলে গেছে বলে বন্ধুত্ব করায়। এরপর বাসায় ডেকে আনে। পরে ওই চক্রের সদস্যরা ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র ধারন করে হাজির হয় নিদিষ্ট সময়ে। এদের মধ্যে কেউ ডিবি, কেউ প্রভাবশালী ব্যক্তি সাজেন।

ওসি বলেন, চক্রটির উদ্দেশ্যই টাকা আত্মসাৎ করা। তারা বিভিন্ন সময় এই কাজ করে থাকেন। তবে নিদিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না, চক্রটি এ পর্যন্ত কতজনের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গেই তারা এটা করেছেন।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রতারণার একটি মামালা হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

(ঢাকটাইমস/১৮আগস্ট/এএইচ/এএ/কেএম)