কেয়ার মেডিকেল কলেজে অনুমোদন ছাড়াই ভর্তি, সনদ নিয়ে বিপাকে শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৮ আগস্ট ২০২২, ২১:৪২ | প্রকাশিত : ১৮ আগস্ট ২০২২, ২১:১৯

অনুমোদন ছাড়াই রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কেয়ার মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি করে কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) অনুমোদন না থাকায় এখন ইর্ন্টানশিপ করতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। ফলে সনদ নিয়ে বিপাকে পড়েছে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী।

বৃহস্পতিবার সকালে কলেজ কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন প্রতারণার জেরে মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের ক্যাম্পাসের সামনে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। অন্যান্য মেডিকেল কলেজে তাদের মাইগ্রেশনের দাবিতে গত ৬ আগস্ট থেকে আন্দোলন করছে তারা। কিন্তু কেয়ার মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনো কর্ণপাত করছে না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

বেসরকারি কেয়ার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি ২০১৩ সালে রাজধানীর ইকবাল রোডে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৪ সাল থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু হয় এই কলেজে। কিন্তু বেসরকারি মেডিকেল কলেজ পরিচালনা নীতিমালা পরিপূর্ণ করতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে ভর্তি নিষেধাজ্ঞা দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বাতিল হয় কলেজের সনদও।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কলেজটিতে শিক্ষার কোনো ধরনের পরিবেশ নেই। শ্রেণিকক্ষ, ল্যাবসহ নানা প্রয়োজনীয় জিনিসের সংকট প্রকট। শিক্ষাদান ও প্রশিক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষকও নেই।

আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থী রায়হান হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘কলেজের অবহেলার কারণে আমাদের ভবিষৎ হুমকির মুখে। কলেজের সনদ বাতিল করা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও কলেজ প্রশাসন মিথ্যা কথা বলে শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়েছে। এখন আমরা অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন আছে এমন মেডিকেল কলেজে মাইগ্রেশন করার দাবি জানাচ্ছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশনের আওতায় না থাকায় তারা ইন্টার্নশিপ করতে পারছেন না জানিয়ে রায়হান হোসেন বলেন, ‘প্রথম দিকে আমাদের ও অভিভাবকদের বলত, রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা হবে যদি আমরা ডিউটিতে জয়েন করি। প্রায় ১৯-২০ দিন ডিউটি শেষে কোনো অগ্রগতি নেই।’

কলেজের নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগে জানা যায়, ২০১৬-১৭ সেশনের ভর্তির পরে ২০১৭-১৮ সেশন থেকে ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পরে হাইকোর্টের রিটের ওপর ভিত্তি করে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ২০১৭-১৮, ২০১৯-২০, ২০২০-২১ সেশন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা হয়।

বিগত বছরগুলোতে রিটের ওপর ভিত্তি করে ভর্তি নেওয়া হলেও ২০২১-২২ সেশনে ভর্তি কার্যক্রম পুরোপুরিভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষ থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষের সাথে বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত কথা বললে তারা বরাবরের মতোই রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার মিথ্যা আশ্বাস দেয়।

শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেন, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীর আগস্ট ২০২১ এ চূড়ান্ত পেশাগত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। পরবর্তীতে নভেম্বর ২০২১ থেকে তাদের ইন্টার্নশিপ শুরু করার কথা থাকলেও বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন না থাকায় বিগত নয় মাসেও তারা ইন্টার্নশিপ শুরু করতে পারেননি তারা।

জানা গেছে, করোনাসহ বিশেষ মানবিক বিবেচনায় ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ২০২০ সালে ইন্টার্ন করার সুযোগ দিয়েছিল বিএমডিসি। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানের ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ইন্টার্নশিপের সুযোগ পায়নি। এজন্য গত এপ্রিল মাসে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছিলেন শিক্ষার্থীরা।

কেয়ার মেডিক্যাল কলেজের বিভিন্ন অসঙগতি তুলে ধরে শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে রয়েছে-

একাডেমিক ও ক্লিনিক্যালের প্রতি বিষয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। একাডেমিক ও ক্লিনিক্যালের প্রতি বিষয়ে পর্যাপ্ত সংখ্যক বিভাগীয় প্রধান, লেকচারার, সিএ ও রেজিস্ট্রার নেই।

নীতিমালা অনুযায়ী হাসপাতালে পর্যাপ্ত বেড নেই। অধিকাংশ সময় সকল ওয়ার্ড রোগীশূন্য থাকে। পূর্ণাঙ্গ অপারেশন থিয়েটার ও আইসিও নেই। সিসিও ও এনআইসিও থাকলেও সেখানে অপারেশন ও ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা নগণ্য।’

কোনো ক্লিনিক্যাল ক্লাস হয় না। প্রফেশনাল পরীক্ষার জন্য রোগী ভাড়া করে নিয়ে আসা হয়। কলেজ ভিজিটের সময় কর্তৃপক্ষ রোগী ভাড়া করে আনে এবং কেয়ার নার্সিং কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের রোগী সাজিয়ে দেখানো হয়। কক্ষ স্বল্পতার জন্য মেডিকেল ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস, আইটেম (পরীক্ষা) লাইব্রেরি ও কনফারেন্স রুমে নেওয়া হয়ে থাকে।

নীতিমালা অনুসারে পর্যাপ্ত ফ্লোর স্পেস, গ্যালারি রুম এবং অবকাঠামো নেই। যেগুলো রয়েছে সেগুলো একই সাথে মেডিকেল কলেজ ও নার্সিং কলেজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা সামগ্রী, যেমন: অ্যাম্বুলেন্স, উন্নত অপারেশন থিয়েটার, ল্যাপারোস্কপি, এনডোস্কোপি, সিটি স্ক্যান, এমআরআই ইত্যাদি নেই। এ বিষয়ে কলেজ কর্তৃক্ষকে বারবার অবগত করলেও তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু একাডেমিক কার্যক্রম চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী: যেমন- আলাদা রিডিং রুম, ল্যাব ফ্যাসিলিটি, ল্যাব পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ মাইক্রোস্কোপ, এনাটমিক্যাল, প্যাথলজিক্যাল, ল্যাবরেটরি সামগ্রী ও পূর্ণাঙ্গ ডিসেকশন রুম নেই।

(ঢাকাটাইমস/১৮আগস্ট/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :