রাশিয়া থেকে তেল আমদানি: পরিশোধন ও বিনিময় পদ্ধতি নিয়ে চিন্তা

প্রকাশ | ১৯ আগস্ট ২০২২, ০৭:৪৬

ওমর ফারুক, ঢাকাটাইমস

ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে বিশ্বের কমবেশি দেশই জ্বালানি সংকটের মুখে পড়েছে। বাংলাদেশও এই সংকটের বাইরে নেই। পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কেনার বিষয়ে ইতিবাচক অবস্থান নিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এ বিষয়ে কাজ করছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।

তবে রাশিয়া থেকে তেল কিনতে কয়েকটি বাধাও আছে। এর মধ্যে অন্যতম দুটি হলো পরিশোধন প্রক্রিয়া ও বিনিময় পদ্ধতি। রাশিয়ার ক্রুড তেল ভারী হওয়ার কারণে সেটি পরিশোধনের সক্ষমতা বাংলাদেশের নেই। আর রাশিয়ার কাছ থেকে দেশটির মুদ্রা রুবলে কিনতে হবে।

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাশিয়ার জ্বালানি তেল রপ্তানি কমেছে। ফলে তেল বিক্রিতে এশিয়া ও আফ্রিকায় নতুন বাজার খুঁজছে দেশটি। এরইমধ্যে রাশিয়া থেকে রুবলে ‘খুব সস্তায়’ তেল কিনছে ভারত।

রাশিয়া পূর্বে বাংলাদেশকেও বেশ কয়েকবার অপরিশোধিত জ্বালানি তেল (ক্রুড অয়েল) বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছিল। তবে সেই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি বাংলাদেশ। কিন্তু জ্বালানি সংকটের কারণে এখন বাংলাদেশ রাশিয়া থেকে তেল কিনতে আগ্রহী।

সবশেষ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানির বিষয়টি পর্যালোচনার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারপ্রধানের নির্দেশের পর কাজ শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ পেট্রেলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সূত্রে জানা যায়, রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান রসনেফট চট্টগ্রাম সমুদবন্দর পর্যন্ত প্রতি ব্যারেল ডিজেল ৫৯ ডলারে বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করতে ইচ্ছুক। এছাড়া তুরস্কভিত্তিক তাতারস্তান ট্রেড হাউস জিটুজি ভিত্তিতে ক্রুড অয়েল বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে। সূত্র মতে, বিপিসি এবং জ্বালানি মন্ত্রনালয় এ বিষয়ক যাবতীয় প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে।

বিপিসি সূত্র জানায়, রসনেফট, তাতারস্তান, ফ্লিট এনার্জিসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তেল বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে। রাশিয়ার তেলের ক্ষেত্রে সমস্যা হলো, তাদের ক্রুড অয়েল অনেক বেশি ভারী। সেটা পরিশোধনের সক্ষমতা রিফাইনারির নেই। রাশিয়া যদিও আরেকটি ক্রুড অয়েলের স্যাম্পল পাঠিয়েছে। সেটি পরীক্ষা করা হচ্ছে।

এর আগে মে মাসে বাংলাদেশে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছিলো রশিয়া। তবে সে তেল বাংলাদেশের রিফাইনারিতে ‘পরিশোধনযোগ্য নয়’ জানিয়ে প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হয়নি বলে জানিয়েছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

বিনিময় পদ্ধতির বিষয়ে বিপিসির উর্ধতন এক কর্মকর্তা বলেন, এটি নিয়ে একটু জটিলতা রয়েছে। রাশিয়া চাচ্ছে রুবলে লেনদেন করতে। সুইফটে নিষেধাজ্ঞার কারণে ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারে দাম পরিশোধে কিছুটা ঝামেলা রয়েছে। আমাদের দেশেও যথেষ্ট রুবল নেই। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। সার্বিক সমস্যার সমাধানের জন্য বিপিসি, জ্বালানি মন্ত্রনালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি মাসের ২৭ বা ২৮ তারিখ আলোচনায় বসতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের পরে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ রাশিয়া আগে প্রতিদিন প্রায় ৫ মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল রপ্তানি করত, যার অর্ধেকের বেশি যেত ইউরোপে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলে ১৩০ ডলার ছাড়িয়ে গেলেও এখন তা কিছুটা কমে এসেছে। কিন্তু তেল আমদানির খরচ বেড়ে যাওয়ায় ভর্তুকি কমাতে আর ডলার বাঁচাতে সরকার অগাস্টের শুরুতে জ্বালানি তেলের দাম ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে, যার প্রভাবে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে অনেকটা। তেল বাঁচাতে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনও কমিয়ে দিয়েছে, পরিস্থিতি সামাল দিতে রুটিন করে সব এলাকায় লোড শেডিং করতে হচ্ছে।

রাশিয়া থেকে কমমূল্যে তেল বিক্রির প্রস্তাবকে ইতিবাচক হিসেবে দেখেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। এর ফলে দেশের বাজারে তেলের দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারনা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইজাজ হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘রাশিয়ার তেল বিক্রির প্রস্তাব আমাদের জন্য ইতিবাচক। বিশ্ববাজারে অনেক স্থানে জ্বালানি তেলের দাম কমে গেছে। রাশিয়া থেকে যদি আমরা কম দামে তেল আনতে পারি, তাহলে দেশের বাজারে তেলের দাম অনেকটাই কমে যাবে।’

তবে এ বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দিচ্ছেন, রাশিয়ার ওপর যেহেতু পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তাই সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করে জ্বালানি তেলের বিষয়ে তাদের সঙ্গে চুক্তি করা উচিত।’

বিপিসির তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে গড়ে ৪ হাজার ৫৫০ লাখ মেট্রিক টনের মতো ডিজেলের চাহিদা আছে। এর পুরোটাই আমদানি করা হয়। মোট ডিজেলের ১০ শতাংশ ব্যবহার হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে এবং বাকি ৯০ শতাংশ ব্যবহার হয় যানবাহনসহ অন্যান্য খাতে।

(ঢাকাটাইমস/১৯আগস্ট/ডিএম)