শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র সফল হতে দেবে না জনগণ

অধ্যাপক ড. ফরিদ আহমেদ
| আপডেট : ২০ আগস্ট ২০২২, ১৩:১৮ | প্রকাশিত : ২০ আগস্ট ২০২২, ১৩:০৯

আগস্ট মাস শোকের। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। বাঙালি তাকে জাতির পিতার আসনে বসিয়েছে। জনগণের ভালোবাসার বিনিময়ে তিনি দেশকে এনে দিয়েছেন স্বাধীনতা। বিদেশে অবস্থান করায় ১৫ আগস্ট বেঁচে যাওয়া বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনাকে গ্রেনেড হামলা করে প্রাণনাশের চেষ্টা হয়েছে এই আগস্ট মাসেই। আল্লাহ তাকে বাঁচিয়েছেন সেই ভয়াবহ হামলা থেকে।

১৯৪৭ সালে বাংলা দুই ভাগে বিভক্ত হলে হারিয়ে যায় বাঙালির পরিচয়। সেই হারিয়ে যাওয়া পরিচয়কে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি ব্যারাক থেকে উদ্ধার করেন অকুতোভয় বাঙালির লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে। সেই যুদ্ধে ছিলেন লক্ষ লক্ষ আওয়ামী লীগের কর্মী, প্রায় তিন লাখ মুক্তিযোদ্ধা, দুই লাখ মা-বোন যারা হারিয়েছেন সম্ভ্রম। আরও ছিল সাড়ে সাত কোটি বাঙালির স্বপ্ন ও সমর্থন।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতার সংগ্রাম করেছে বাঙালি, এনেছে স্বাধীনতা, উড়িয়েছে বিজয়ের পতাকা। আমাদের সেই বিজয়ে প্রাণ দিয়ে যুদ্ধ করেছিল ভারতীয় সৈনিকেরা। সঙ্গে ছিলেন মহামতি ইন্দিরা গান্ধী। পরবর্তী সময়ে ঘাতকের বুলেটে প্রাণ দিয়েছেন ইন্দিরা গান্ধী, তার ছেলে রাজীব গান্ধী।

অনেক সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে জলাঞ্জলি দিয়ে রাজাকারদের দলে যোগ দেন মোশতাক, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, লে, জেনারেল এরশাদ। কিন্তু বাঙালি তাদের স্বাধীনতার আকাশে আবার উড়িয়েছে পতাকা, ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে। কিন্তু দলের লোভী নেতারা যেমন মোশতাক, জিয়া ও এরশাদের হাত ধরে স্বাধীনতাকে জিম্মি করেছে, তেমনি একদল সুশীল যারা ছিল ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে, তারা আবার ক্ষমতায় বসায় জামাত-শিবির, রাজাকারদের খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে।

জনতা যখন জেগে উঠে তখন সুশীলরা আবার স্বাগত জানায় সেনাশাসন। ২০০৬ সালে তারা মাইনাস ফর্মুলা নিয়ে আসে। শিরোনাম ছিল ‘মাইনাস টু’, কিন্তু অন্তরে ছিল মাইনাস হাসিনা। সুশীলরা প্রথমে সফল হয়েছিল বিএনপিকে ভাঙতে। এরপর চেষ্টা চলে আওয়ামী লীগকে ভাঙতে। কিন্তু বাঙালি সেদিন ভুল করেনি। সুশীলদের সেই চেষ্টাকে ধূলিসাৎ করে দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক ও জনতা।

সেই শিক্ষকরা আজ আমলাদের দুই ধাপ নিচে স্থান পেয়েছেন! বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন কমিশন গঠন করে উচ্চ স্থান করে দিয়েছিলেন শিক্ষকদের। সেগুলো এখন আমলা পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তাকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি আরও বলেছেন, কোথায় ছিল আওয়ামী লীগের নেতারা যখন ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলো। খুবই যৌক্তিক প্রশ্ন। কোথায় ছিল আওয়ামী লীগের নেতারা যখন ১/১১ সরকার যখন মাইনাস হাসিনা প্রজেক্ট নিয়েছিল?

আজ অনেকেই অনেক কাহিনী শোনান। কিন্তু সেসব কাহিনী দিয়ে যারা সুবিধা ভোগ করেন, তারা কি এখনও সঠিক পথে আছেন? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ১৯৭৫ সালে যারা দল থেকে দূরে সরে গিয়েছিল, তারা কিন্তু আবার ফিরে এসেছে নতুন রূপে। তাদের আপনি যে ভালোবাসা দিয়েছেন তার মূল্য কি দিচ্ছে? যাদের আপনি মন্ত্রী বানিয়েছেন তাদের আমলনামা কি আপনার কাছে নেই? আপনি কি তাদের ব্যাপারে সতর্ক আছেন?

১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করেছিলেন সেই তুখোড় ছাত্রনেতা জনাব তোফায়েল আহমেদকে দেখতে গিয়েছিলাম। তিনিই ডাকসুর নেতৃত্বে ছিলেন এবং ‘বঙ্গবন্ধু’ খেতাবটি বঙ্গবন্ধুকে দিয়েছিলেন। তাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছে অনেক। ১/১১-এর সময় সুশীলরা তাকে টার্গেট করেছিল। তিনি কিন্তু তাদের ফাঁদে পা দেননি। সবাই জানে রক্ষীবাহিনী প্রস্তুতি নিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের দমন ও বিতাড়ন করতে। কারা রক্ষীবাহিনীকে সেটা করতে দেয়নি?

বঙ্গবন্ধু নেই তাই বলে বাংলাদেশ কি আবার পূর্ব পাকিস্তান হবে? যখন শুনলেন বাংলাদেশ বেতার থেকে রেডিও বাংলাদেশ হয়ে গেল, জয় বাংলা থেকে জিন্দাবাদ হয়ে গেল, তখনও কি উনারা বোঝেননি- আসলে আমাদের কি সর্বনাশ হতে চলেছে? জনাব তোফায়েল আহমেদ জয় বাংলার সঙ্গে যেমন আপোষ করেননি, তেমনি আপোষ করেননি বঙ্গবন্ধুর রক্তের সঙ্গে ১/১১-এর প্রলোভনে। দলকে অটুট রেখেছিলেন ষড়যন্ত্রের হাত থেকে। পরাজিত হয়েছিল ১/১১-এর কুশীলবরা। পরিত্যাজ্য হয়েছিল মাইনাস ফর্মুলা।

আজ আবার সেই মাইনাস ফর্মুলা নিয়ে ঘুরছে দেশে-বিদেশে ওই ১৯৭৫ সালের ঘাতক ও সুশীলদের শিষ্যরা। আর তাদের লোভের বশবর্তী হয়ে সহযোগিতা করছেন দলের লোকেরাই। তারা বঞ্চিত করছে দলের ত্যাগী নেতাদের হাইব্রিড আমদানি করে। লোভী হাইব্রিডদের এখনই আলাদা করা এবং তাদের মাইনাস করা হবে সঠিক সিদ্ধান্ত। সেটা না করলে ১৯৭৫ সালের মতোই ষড়যন্ত্রের জাল ছড়াবে। বাংলার স্বাধীনতা আবার শৃঙ্খলিত হবে হায়েনাদের হাতে।

মন্ত্রিসভার শুদ্ধি অভিযান জনগণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সুযোগ আপনি অনেক দিয়েছেন সঠিক পথে চলবার জন্য। কিন্তু চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী। যে অর্জন বিগত ১৪ বছর আপনার নেতৃত্বে বাঙালি অর্জন করেছে, তাকে খাদের কিনারে নিয়ে গেছে যারা, তাদের এখন মাইনাস করার সময়। তাতে পরাস্থ হবে মাইনাস ফর্মুলাকারীরা।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জনগণ আপনাকে বঙ্গবন্ধুর মতোই ভালোবাসে। জনগণ আপনাকে বাংলার নক্ষত্র মনে করে। সেটিই আপনার শক্তি। দলের ত্যাগী নেতারা যাতে আপনার থেকে অভিমানে দূরে সরে না যায়, সেজন্য আপনাকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। বঙ্গবন্ধু যাদের বিশ্বাস করতেন তারাই বঙ্গবন্ধুর রক্তের সঙ্গে বেইমানি করেছিল। বঙ্গবন্ধু ভেবেছিলেন বাঙালি তার বুকে গুলি চালাতে পারবে না। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সেই বিশ্বাস ভুল প্রমাণিত হয়েছিল।

আপনার সঙ্গে বিশ্বাস ভঙ্গ করে বাণিজ্য করছে যারা, টাকা পাচার করছে যারা, তাদের নিয়ন্ত্রণ করা সময়ের দাবি। ‘কাজল রেখা’ গল্পটা আমার মনে পড়ে। যারা আপনাকে আগলে রেখেছে বছরের পর বছর, তারাই আপনার কাজল রেখা। মোশতাকের প্রেতাত্মা আপনার কাছেই আছে বোধহয়- তাদের মাইনাসের জনদাবি আপনি বিবেচনা করে দেখুন।

১৯৬৯-৭১ সময়ের ছাত্রনেতারা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর শক্তি। ১/১১-এর মাইনাস ফর্মুলা থেকে দেশকে বাঁচাতে ছাত্র-শিক্ষক কাঁধে নিয়েছিল জোয়াল। সেই জোয়াল আমলাদের কাঁধ থেকে সরিয়ে আবার জনতার কাঁধে ফিরিয়ে দেয়া হোক দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। বরেণ্য রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, রাশেদ খান মেননরা ফিরে আসুক নেতৃত্বে।

আজ দেখলাম এক মন্ত্রী নাকি ভারতের কাছে সুপারিশ করেছেন শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে। তিনি কদিন আগে বেহেস্ত তত্ত্ব দিয়ে সরকার ও দলকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছেন। ভারতের কাছে কেউ সুপারিশ করলেই শেখ হাসিনা সরকার টিকবে না, কারণ দেশের জনগণ ক্ষমতার মালিক। জনগণের শক্তি ও মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করে যিনি এহেন অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন, তাদের এই সব অর্বাচীন কথোপকথনে জাতি আবার বিব্রত!

দ্রব্যমূল্য মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে চলেছে। সেই সময় ভর্তুকি প্রত্যাহারে আরও সংকটে পড়েছে জনজীবন। এখন বরেণ্য নেতাদের জনগণ পাশে চায়। উন্নয়ন পরিকল্পনায় মৌলিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে জনসংযোগ রুখে দেবে মাইনাস ফর্মুলা।

শেখ হাসিনা এক অদম্য প্রতিভাবান রাজনৈতিক নক্ষত্র। আর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করে ক্ষমতায় এসেছে। বঙ্গবন্ধুর হাতে তিলে তিলে গড়া দলটি কারও পকেটে, ব্রিফকেসে কিংবা ক্যান্টনমেন্টে জন্ম নেয়নি। সেই দলটি সরকার গঠন করেছে একটি মহাজোটের শক্তি নিয়ে। সুতরাং, শেখ হাসিনার সরকার টিকিয়ে রাখতে বাংলার জনগণই যথেষ্ট। বিদেশি কোনো শক্তি তাকে যেমন ক্ষমতায় বসায়নি, তেমনি সেই সরকার টিকিয়ে রাখতে বিদেশি শক্তির প্রয়োজন নেই।

জনগণের ভালোবাসা নিয়ে আওয়ামী লীগ বেঁচে আছে। দেশের জনগণই সব সময় শেখ হাসিনাকে সরকার গঠনে শক্তি জুগিয়েছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তাকে গ্রেনেড মেরে হত্যার চেষ্টা করেছে বিরোধী পক্ষ। মহান আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে তিনি ভয় পান না। কারও সুপারিশ নয় জনগণই আগামীতে তাকে ক্ষমতায় আনবে। তিনি কেবল বাংলার রাজনীতির আকাশে এক কিংবদন্তি নন, তিনি এক বিশ্বনেতা। জনগণের ভালোবাসায় তিনি চিরজীবী হয়ে থাকবেন। ১/১১-এর সুশীল সরকার শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে গিয়ে নিজেরাই মাইনাস হয়ে গেছে। সুতরাং, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র সফল হতে দেবে না বাংলার জনগণ।

লেখক: অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :