কুষ্টিয়ায় মাল্টিলেভেল কোম্পানি খুলে প্রতারণা, তিন মাদ্রাসা শিক্ষকসহ গ্রেপ্তার ৮

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৭ আগস্ট ২০২২, ২০:৪৭

এসবিএসএল নামে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানি খুলে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে সেই তিন মাদ্রাসা শিক্ষকসহ আট প্রতারককে র‌্যাব সদস্যরা গ্রেপ্তার করেছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছেন সানরাইজ বিজনেস সার্ভিস লিমিটেড নামের মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানীর চেয়ারম্যান ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা থানার চর আউশিয়া গ্রামের মনিরুল ইসলামের ছেলে মো. সাজ্জাদ হোসেন (২৯), কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর পদ্মপুকুর গ্রামের আব্দুল গফুরের ছেলে মহসিন আলী (৩১), কোম্পানির ফিন্যান্স ডিরেক্টর কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার গোবরা গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে মো. ইমরান হোসেন (২৮), কোম্পানির কর্মী কুমারখালী উপজেলার বেতবাড়ীয়া গ্রামের জলিল বিশ্বাসের ছেলে মো. হাসান আলী (২৮), মহেন্দ্রপুর গ্রামের মৃত আমজাদ হোসেনের ছেলে মো. আব্দুল হান্নান (৪৩), ওয়াশি গ্রামের মৃত লিয়াকত আলীর ছেলে মো. মোস্তফা রাশেদ পান্না (৪৭), বাঁশ গ্রামের আলাউদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে মো. আইয়ুব আলী (২৮), এবং বহল বাড়িয়া এলাকার আলতাফ শেখের ছেলে মো. হাফিজুর রহমান (২৮)।

শনিবার বেলা ১১টায় র‌্যাব-১২ কুষ্টিয়া ইউনিটের কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার মো. ইলিয়াস খান সংবাদ সম্মেলন করে ৮ জনের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এই প্রতারক চক্রটি কুষ্টিয়া জেলায় সানরাইজ বিজনেস সার্ভিস লিমিটেড নামের একটি মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি খুলে গ্রাহকদেরকে অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যায়। কোম্পানিটির প্রতারণার ফাঁদে পড়ে প্রায় ৩শ পরিবার সর্বশান্ত হয়েছে। কুষ্টিয়া ছাড়াও উক্ত কোম্পানি ঝিনাইদহ, মাগুরা, যশোর, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা, পাবনা, রাজশাহী জেলা পর্যন্ত প্রতারণার জাল বিস্তৃত করে। প্রতারণার কৌশল হিসেবে কোম্পানির নিজস্ব ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপ্লিক্যাশন তৈরি করে গ্রাহকদেরকে বিভিন্নভাবে প্রলুব্ধ করে গ্রাহকদের ১২শ টাকা দিয়ে কোম্পানির আইডি খুলতে বলা হতো। প্রতি আইডি থেকে প্রতিদিন ১০ টাকা ও আইডি বাবদ প্রদানকৃত ১২শ টাকার সমমূল্যের পণ্য দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হতো। শুরুর দিকে কিছু গ্রাহক টাকা ও পণ্য পাওয়ার কারণে অনেকেই আইডি খুলতে উৎসাহিত হয়েছিল। এক সময় গ্রাহকদের লভ্যাংশের টাকা না দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মগোপনে চলে যায় প্রতারক চক্রটি। লগ্নিকৃত টাকা হারিয়ে শত শত গ্রাহক দিশেহারা হয়ে পড়ে।

চক্রটির প্রতারণার বিষয়ে একজন ভুক্তভোগী গ্রাহক গত ২৬ আগস্ট কোম্পানির চেয়ারম্যানসহ একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে কুমারখালী থানায় দণ্ডবিধি ৮০৬/২০/৩২৩/৩০৭/৫০৬ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৩৫।

এরই ধারাবাহিকতায় সিপিসি-১, কুষ্টিয়া ক্যাম্প র‌্যাব-১২'র একটি আভিযানিক দল র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার সহায়তায় শুক্রবার (২৬ আগস্ট) রাত সাড়ে ১১ টার সময় কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন এলাকা হতে উক্ত এমএলএম কোম্পানীর প্রতারক চক্রের ০৫ জন সদস্য এবং পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃতদের দেওয়া তথ্যমতে উক্ত কোম্পানির আরও তিনজনকে ঝিনাইদহ জেলা ও ঢাকার মিরপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করেছে। উক্ত এসবিএসএল কোম্পানির বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর ও কুমারখালী থানায় ২টি মামলা রয়েছে। এছাড়া কোম্পানীর চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেনের বিরুদ্ধে ২টি চেক জালিয়াতির মামলা, ম্যানেজিং ডিরেক্টর মহসিন আলীর বিরুদ্ধে ১টি চেক জালিয়াতি ও ৫টি স্ট্যাম্প জালিয়াতির মামলা এবং ফিন্যান্স ডিরেক্টর ইমরান হোসেনের বিরুদ্ধে ২টি চেক জালিয়াতির মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার রাতে কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে তিন মাদ্রাসা শিক্ষকসহ পাঁচজনকে ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সন্ধান না পেয়ে বৃহস্পতিবার ভুক্তভোগী দুটি পরিবার কুমারখালী থানায় এ ব্যাপারে সাধারণ ডায়েরি করেন। গ্রেপ্তারকৃত ৮ জনের মধ্যে নিখোঁজ হওয়া ওই ৫ জন ব্যক্তিও রয়েছেন।

(ঢাকাটাইমস/২৭আগস্ট/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :