অফিস সহকারী দুলালের দাপটে দিশেহারা শিক্ষকরা!

বরগুনা প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৯ আগস্ট ২০২২, ১৯:৪৪ | প্রকাশিত : ২৯ আগস্ট ২০২২, ১৯:১৫

বরগুনা সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী দুলাল কৃষ্ণ মালাকারের (দুলাল বাবু) বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা, ঘুষ বাণিজ্য, কাঙ্খিত উৎকোচ না পেয়ে শিক্ষকদের নানাভাবে হয়রানিসহ একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগের প্রতিকার চেয়ে ৩০ জুলাই বরগুনা জেলা প্রাথমিক অফিসার বরাবরে লিখিত আবেদন করেছেন বরগুনা সদর উপজেলা বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত ৪৭ জন শিক্ষক।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এম এম মিজানুর রহমান অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, দুলাল কৃষ্মের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, সহকারী শিক্ষকদের ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রাপ্য ১৩তম গ্রেডের বকেয়া বিল (২০২২ সালের ১৫ জুন পর্যন্ত) প্রদানের জন্য সদর উপজেলার প্রায় ৬শ’ সহকারী শিক্ষকের কাছ থেকে এক হাজার টাকা করে অন্তত ছয়লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছেন। ঘুষ নেওয়ার পরও এখনো পর্যন্ত শিক্ষকদের বকেয়া বিল দিতে পারেননি।

শিক্ষকদের অভিযোগ, দুলাল কৃষ্ণ এসব ঘুষ বাণিজ্যে ব্যস্ত থাকার কারণে ২০২১-২২ অর্থ বছরে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের স্লিপ, ক্ষুদ্র মেরামত, রুটিন মেইনটেন্যান্স, বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্ট এবং বিভিন্ন বিদ্যালয়ের আনুষঙ্গিক খরচের (হিসাবরক্ষণ অফিস থেকে পাওয়া) ৩৯ টি চেক নির্ধারিত সময়ে (২৬ জুলাই) অফিসের ব্যাংক হিসেব নম্বরে জমা দিতে পারেননি। যার টাকার অঙ্ক ১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। যার কারণে উক্ত টাকা অর্থ মন্ত্রণালয়ে চলে গেছে। এ টাকা পুনরায় পেতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হবে। শিক্ষকদের দাবি, দুলাল কৃষ্ণের দায়িত্বে অবহেলা এবং শিক্ষকদের কাছ থেকে এসব টাকার কাঙ্খিত উৎকোচ না পাওয়ায় ইচ্ছাকৃতভাবে নির্ধারিত সময়ে ব্যাংকে চেক জমা করেননি।

দুলাল কৃষ্ণের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়, তিনি শিক্ষকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময় অবসর প্রাপ্ত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আ. মজিদের স্বাক্ষর জাল এবং একই স্মারক ব্যবহার করে নির্ধারিত মেয়াদের আগেই শিক্ষকদের স্থায়ীকরণে আদেশ দেন। বরগুনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ের ২০১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর তারিখে একটি অফিস আদেশে ৪৩ জন শিক্ষককে স্থায়ীকরণ করা হয়েছে। যার স্মারক নম্বর ১৮৪৯/৪০। যে স্মারক নম্বরটি ভূয়া বলে দাবি আবেদনকারীদের। কারন এ তালিকার ২১ নম্বর ক্রমিকে খালেদা আক্তার রিনার যোগদানের তারিখ ১৯ জুন ২০১৬, ৩০ নম্বর ক্রমিকে সহকারী শিক্ষিকা মোসা. মাহফুজা আক্তার লায়লার যোগদানের তারিখ ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ এবং ৩৭ নম্বর ক্রমিকে সহকারী শিক্ষিকা মাহমুদা বেগমের যোগদানের তারিখ ১৯ জানুয়ারি ২০১৬। কিন্তু তাদের দু’বছরের আগেই ২০১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর চাকরিতে স্থায়ীকরণের আদেশ দেওয়া হয়েছে। যেখানে স্থায়ীকরণের জন্য অন্তত ৩ বছর চাকরির বয়স থাকতে হবে বলে শিকার করেছেন অভিযুক্ত অফিস উচ্চমান সহকারী দুলাল কৃষ্ণ।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, দুলাল কৃষ্ণ মালাকার দীর্ঘদিন একইস্থানে চাকরি করার সুবাদে অনেকটা বেপরোয়া হয়ে গেছেন। বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়রানির পাশাপাশি যখন যে শিক্ষা কর্মকর্তা আসেন, তার (দুলাল কৃষ্ণের) নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হয়। অন্যথায় ওই কর্মকর্তা বেশিদিন স্থায়ী হতে পারেন না। তিনি দীর্ঘ ২৮ বছর বরগুনা সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসে দায়িত্বরত আছেন। এরমধ্যে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ এবং দুর্নীতির অভিযোগের কারণে অন্যত্র বদলি করে শিক্ষা বিভাগ। তবে ২ বছর পরই তিনি পুনরায় পূর্বের স্থানে চাকরিতে বহাল আছেন।

এ বিষয়ে সদর উপজেলার গাজী মাহমুদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক খালেদা আক্তার রিনা বলেন, সম্ভবত ২০১৯ সালে আমার স্থায়ীকরণের কাগজপত্র অফিসে জমা দিয়েছি। তারপর কিভাবে কোন তারিখে আফিস আমার চাকুরি স্থায়ীকরণ করেছে তা সঠিক জানা নাই। স্থায়ীকরণের কাগজপত্র অফিসে জমা দেওয়ার সঠিক তারিখ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার আলমিরার তালায় সমস্যা হওয়ার কারণে কাগজপত্র আটকা পড়েছে। অন্যদিকে বাঁশবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মাহমুদা বেগমের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো অফিসের বিষয়। আর কোনো কথা না বলে ফোন কেটে দেন।

এছাড়াও তিনি সদর উপজেলার ২২৮টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪৮টি বিদ্যালয় কোভিড-১৯ এর বিভিন্ন মালামাল ক্রয়ের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা উপজেলা শিক্ষা অফিসারের ব্যাংক হিসেবের অনুকূলে (জনতা ব্যাংক, বরগুনা শাখা) বরাদ্ধ দেওয়া হলেও উক্ত টাকা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দিতে গরিমসি করছেন। কড়ইতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো. মোস্তাফিজুর রহমান লিটন বলেন, কয়েকজন শিক্ষকের সহযোগিতায় অফিস সহকারী দুলাল বাবুর বেপরোয়া আচরণ, ঘুষ বাণিজ্য এবং শিক্ষক হয়রানি কোনোভাবেই থামছে না। তাকে উৎকোচ না দিয়ে ওই অফিসে কোনো কাজ করা সম্ভব হয় না। যদি কোনো শিক্ষক তার চাহিদামতো উৎকোচ দিতে না পারে, তাহলেই তাকে নানা ভাবে হয়রানি শুরু করেন। তাই আমরা প্রায় অর্ধশত শিক্ষক/ শিক্ষিকা নিরুপায় হয়ে তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। যদি তার এসব কর্মকান্ড থামানো না হয়, তাহলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।

এসব অভিযোগের বিষয়ে দুলাল কৃষ্ণ মালাকার বলেন, ভুলবশত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে (২৬ জুলাই ২০২২) চেকগুলো জমা হয়নি। এগুলো পুর্নরায় পাওয়ার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আপনাকে উৎকোচ না দেওয়ায় ইচ্ছাকৃত ভাবে চেকগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাঠানো হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে দুলাল কৃষ্ণ বলেন, এসব অভিযোগ সত্য নয়। চাকুরি স্থায়ীকরণের জন্য ৩ বছর সময় লাগে বলে জানান দুলাল কৃষ্ণ। তবে দু’বছরের আগে কিছু শিক্ষকের চাকুরি কিভাবে স্থায়ীকরনের আদেশ হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি ঢাকায় আছি বরগুনা এসে আপনার সাথে কথা বলবো।

চেক জমা না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বরগুনা সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো: নাছির উদ্দিন বলেন, অফিসের উচ্চমান সহকারির ভুলের কারনে নির্ধারিত সময়ে ৩৯টি চেক ব্যাংকে জমা হয়নি।

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এম এম মিজানুর রহমান বলেন, সদর উপজেলা শিক্ষা অফিস নির্ধারিত সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৩৯টি চেক জমা দেননি। ভুলবশত নির্ধারিত সময়ে চেক জমা করেননি এমনটি আমাকে জানানো হয়েছে। তবে এটি দায়িত্বের অবহেলা, তাই এ ব্যাপারে জবাব চেয়ে চিঠি দেওয়া হবে। দুলাল কৃষ্ণের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি তাদের অভিযোগ পেয়েছি এবং আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে জানাবো।

(ঢাকাটাইমস/২৯আগস্ট/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :