ফিল্মি স্টাইলে খুন, মিল্কীকে হত্যা করে বাঁচতে পারেননি তারেকও, কোথায় তার সঙ্গীরা?

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১:০৫ | প্রকাশিত : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:০৯

নিজেদের মধ্যে রেষারেষিতে খুন হন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কী। এই হত্যাকাণ্ডের নয় বছর পার হলেও এখন মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ হয়নি।

গুলশানে শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনের সড়কে ফিল্মি স্টাইলে মিল্কী হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। এ ঘটনায় র‌্যাব ও সিআইডি তদন্ত করে সর্বশেষ ১৮ জনের নামে চার্জশিট দেয় আদালতে। চার্জশিটভুক্ত সব আসামিই পলাতক। এর মধ্যে এক আসামি র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়।

ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার দৃশ্য শপার্স ওয়ার্ল্ডের একটি সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ে। এতে দেখা যায়, মোটরসাইকেলে এসে ফিল্মি স্টাইলে কয়েকজন ব্যক্তি গুলি ছোড়ে। তাৎক্ষণিক তাদের পরিচয় জানা না গেলেও পরে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার দক্ষিণ যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক এস এম জাহিদ সিদ্দিক তারেক গুলি করেন বলে জানায় র‌্যাব।

মিল্কী হত্যাকাণ্ডের রাতেই তারেককে উত্তরার ফরচুনা হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরদিন ৩০ জুলাই র‌্যাবের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান তারেকসহ দুজন। পরে চার্জশিট থেকে তারেকের নাম বাদ দেয় তদন্ত সংস্থা।

২০১৩ সালের ২৯ জুলাই রাতে রাজধানীর গুলশানের শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে রিয়াজুল হক খান মিল্কীকে পরিকল্পিতভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়।

পরদিন মিল্কির ছোট ভাই মেজর রাশেদুল হক খান মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুল আলম ওরফে আরিফসহ ১২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করে গুলশান থানায় হত্যা মামলা করেন।

মিল্কী হত্যা মামলা দায়েরের এক দিন পর এই মামলা তদন্তে র‌্যাবকে দায়িত্ব দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

মিল্কি হত্যা মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মহানগর আদালতের পিপি আব্দুল্লাহ আবু ঢাকাটাইমসকে বলেন, মামলাটি বর্তমানে দ্রুত বিচার ট্যাইবুনাল-১ এ সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। তবে আসামিরা এখন কে কোথায় রয়েছে তা মামলার নথি না দেখে বলতে পারবেন না।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যমতে, মিল্কীকে হত্যার জন্য বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও সফল হননি তারেক। পরে তার ব্যক্তিগত গাড়ির চালক মারুফ রেজা সাগরের স্ত্রী ফাহিমা ইসলাম লোপার সঙ্গে পরকীয়া করে মিল্কির সব তথ্য জেনে নেন তারেক। এরপর তার তথ্যমতে হত্যা করা হয় মিল্কীকে।

সম্প্রতি শাহজাহানপুরে খুন হন আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু। এ মামলায় মারুফ রেজা সাগরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দা পুলিশ। তবে তার সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

জানা যায়, মিল্কি হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল ঘটনার পরেই আমেরিকায় চলে যান।

মিল্কীর চালকের স্ত্রী ফাহমিদা ইসলাম লোপাসহ তিন আসামি জামিনে বের হয়ে নিরুদ্দেশ। তবে একটি সূত্রে বলছে, লোপা বর্তমানে আমেরিকায় অবস্থান করছেন।

এ ছাড়া এ মামলায় বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার হওয়া নয়জনের মধ্যে সবাই জামিনে বেরিয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন।

চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার বিচার চলছে দ্রুত বিচার ট্যাইবুনাল-১ এ। আদালত সূত্র জানায়, মিল্কীর ছোট ভাই ও মামলার বাদী মেজর রাশেদুল হক খান এবং মিল্কীর গাড়িচালক মারুফ রেজা সাগরসহ তিনজনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ছয়জন আসামি দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

মিল্কী হত্যা মামলার তদন্তে প্রথমে দায়িত্ব পান র‌্যাবের সহকারী পুলিশ কাজেমুর রশিদ। ২০১৪ সালের ১৫ এপ্রিল ১১ জনকে অভিযুক্ত করে তিনি আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। কিন্তু মামলার এজাহারে থাকা টিপু ও আরিফের নাম বাদ দিয়ে চার্জশিট দাখিল করায় নারাজি দেন বাদীপক্ষ। পরে আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জণ্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন।

২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার উত্তম কুমার বিশ্বাস অধিকতর তদন্ত শেষে ১১ জনসহ আরও সাতজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেন। নতুন সাতজনের তালিকায় আরিফ নাম এলেও টিপুর নাম আসেনি। পরে মতিঝিলের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন টিপু। আর পলাতক আছেন আরিফ।

২০১২ সালের ৩ জুলাই ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সম্মেলনে ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট সভাপতি ও ওয়াহিদুল আলম আরিফ সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ২০১৩ সালের ২৬ জুলাই মিল্কী হত্যার পর থেকে ওয়াহিদুল ইসলাম আরিফ পলাতক।

দ্বিতীয় অভিযোগপত্রে সাত আসামি

তুহিন রহমান ফাহিম, সৈয়দ মুজতবা আলী রুমী, মোহাম্মদ রাশেদ মাহমুদ ওরফে আলী হোসেন রাশেদ ওরফে মাহমুদ, সাইদুল ইসলাম ওরফে নুরুজ্জামান, সুজন হাওলাদার, ডা. দেওয়ান ফরিউদ্দৌলা ওরফে পাপ্পু ও মামুন উর রশীদ।

প্রথম অভিযোগপত্রের ১১ জন আসামি

মিল্কির গাড়িচালক মারুফ রেজা সাগরের স্ত্রী ফাহিমা ইসলাম লোপা, সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল, আমিনুল ইসলাম ওরফে হাবিব, জাহাঙ্গীর মন্ডল, সোহেল মাহমুদ ওরফে সোহেল ভূঁইয়া, চুন্নু মিয়া, আরিফ ওরফে আরিফ হোসেন, সাহিদুল ইসলাম, ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ, রফিকুল ইসলাম চৌধুরী ও শরীফ উদ্দিন চৌধুরী ওরফে পাপ্পু।

হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার বিষয়ে মামলার চার্জশিটে বলা হয়, রিয়াজুল হক খান মিল্কীর দ্রুত রাজনৈতিক উত্থান হয় এবং মতিঝিল এজিবি কলোনি এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন তিনি। এ কারণে আসামি তারেক ওরফে কিলার তারেকের (ক্রসফায়ারে নিহত) এককভাবে বাংলাদেশ রেলওয়ে, পূর্ব মতিঝিল ডিভিশন, ডিপিডিসি, বিএডিসি, খাদ্য, সিএমএমইউ, ক্রীড়া পরিষদ, কৃষিসহ অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে টেন্ডারগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছিল না।

মিল্কিকে তারেক পথের কাঁটা মনে করে একাধিকবার হত্যার উদ্যোগ নেন তারেক। প্রতিবারই তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ায় মতিঝিল এলাকার বাইরে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কিলার তারেক মিল্কীর ব্যক্তিগত গাড়ির চালক সাগরের স্ত্রী লোপার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। লোপার মাধ্যমে মিল্কীর অবস্থান জেনেই হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।

(ঢাকাটাইমস/০৩সেপ্টেম্বর/এএইচ/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :