দুয়ার খুলছে অষ্টম চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতুর
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আরও একটি স্বপ্ন পূরণ আজ
প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম-বরিশাল-মোংলা-খুলনা মহাসড়কের বেকুটিয়াতে কঁচা নদীর ওপর নির্মিত '৮ম চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু উদ্বোধন হবে আজ। সকাল ১০টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুটির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের আরো একটি স্বপ্ন।
সেতুটি খুলে যাওয়ায় পিরোজপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিতে আসবে আমূল পরিবর্তন। বরিশালের সঙ্গে খুলনার সড়ক যোগাযোগে থাকবে না কোনো ফেরি। ব্যবসার ক্ষেত্রে দ্রুত যাতায়াত করা যাবে বিধায় ব্যবসায়ীরা পাবেন ব্যাপক সুবিধা। পাশাপাশি বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা জেলার সঙ্গে যশোর ও খুলনার দূরত্ব এক ঘণ্টারও বেশি কমে যাবে।
গুরুত্বপূর্ণ এ সেতুটি চালু হলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে খুলনা হয়ে বরিশাল, কুয়াকাটা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার স্বপ্নের দুয়ার খুলে যাবে। এর ফলে গতি আসবে এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে। উদ্বোধনের পরপরই তা যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে জানান পিরোজপুর জেলা প্রশাসক মো. জাহেদুর রহমান।
২০১৬ সালের ১ নভেম্বর চীনা প্রেসিডেন্ট শি-জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরকালে সেতুটি নির্মাণে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। এর দুবছর পর ২০১৮ সালের ১ অক্টোবর সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চীনের ৬৫৪ কোটি টাকার অনুদানসহ প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটির কাজ শেষ হয় গত ৩০ জুন। গত ৭ আগস্ট চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়াং ই'র উপস্থিতিতে সেতুটি বাংলাদেশ সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়।
৯টি স্প্যান ও ১০টি পিলার বিশিষ্ট ৯৯৮ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৩ দশমিক ৪০ মিটার প্রস্থের সেতুটির নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৮৮৯ কোটি টাকা। চীনা অনুদানের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার ২৪৪ কোটি টাকা নিজস্ব অর্থায়ন করে সেতুটি নির্মাণে। ৪২৯ মিটার ভায়াডাক্টসহ ডাবল লেনের সৈতুটির দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৪২৭ মিটার এবং প্রস্থ ১০ দশমিক ২৫ মিটার। সেতুটি জেলার কাউখালী উপজেলার বেকুটিয়া অংশ ও পিরোজপুর সদর উপজেলার কুমিরমারা অংশকে যুক্ত করেছে।
দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের দুই বিভাগকে এক করা সেতুটি একই সঙ্গে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, পায়রা ও মোংলা সমুদ্র বন্দর এবং বেনাপোল ও বাংলাবান্ধা স্থল বন্দরকে সরাসরি সড়ক পথে সংযুক্ত করবে। যার ফলে সড়ক পথে এ দুই অঞ্চলের ১৬টি জেলার সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ও যাতায়াতের সুযোগ তৈরি হবে।
দীর্ঘ কর্মযজ্ঞ শেষে এখন স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখার প্রতিক্ষায় প্রহর গুনছেন এ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। সেতুটি ঘিরে এই অঞ্চলের কৃষি, ব্যবসা বাণিজ্য ও শিক্ষার প্রসার ঘটবে বহুগুন। এই সেতু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা গতিশীল করার পাশাপাশি অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন ঘটাবে।
২০০০ সালে পিরোজপুর সরকারি বালক মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঁচা নদীর বেকুটিয়া অংশে অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুটি স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
ঢাকাটাইমস/০৪সেপ্টেম্বর/আরকেএইচ