৪৪ বছরে কি বিয়ের বয়স পেরিয়ে যায়? প্রশ্ন অন্তরার

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:২৬ | প্রকাশিত : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:০২

ছদ্মনাম অন্তরা। বাড়ির বড় মেয়ে। বয়স ৪৪। বড় হয়েছেন গ্রামে। পড়াশোনা, চাকরি এবং নিজের ক্যারিয়ার গোছাতে লম্বা সময় কেটে গেছে তার। কখন যে বিয়ের বয়সও লুকিয়ে লুকিয়ে চলে যাচ্ছে টেরও পাননি। তার বাবা নেই, ফলে বাবার দায়িত্ব বড় মেয়ে হিসেবে অন্তরার কাঁধেই পড়ে। ছোট ভাইবোনদের বড় করা, তাদের পড়াশোনার দায়িত্ব, পরিবার চালানো সবই তাকে করতে হয়েছে। বলা চলে অন্তরার হাতের ওপর দিয়ে সবাই বড় হয়েছে, প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এমনকি সবার বিয়েও হয়ে গেছে।

সবার জন্য করতে গিয়ে অন্তরা নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন, নিজের দিকে নজর দেওয়ার সময় পাননি। সব ভাইবোন প্রতিষ্ঠিত হয়ে যার যার মতো চলে গেছে। তিনি মায়ের সঙ্গেই আছেন এই নগরে। এখন তার উপলব্ধি এসেছে, বিয়ে করার বয়স কি পেরিয়ে গেল? ৪৪ বছর বয়সে একজন নারীর এমন প্রশ্ন খুবই হাতাশার, বেদনার। তিনি যখন দোটানায় ভুগছেন তখন কোনো কোনো দিক থেকে পাত্রের সন্ধান আসছে, কিন্তু তারা কেউ ডিভোর্সি, কারও সন্তান আছে, এমন সংখ্যাই বেশি। যাদের বয়স ৫০-এর উপরে।

অন্তরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন, এমন বাস্তবতায় তিনি বিয়ে করবেন কি না। একাকী বাকি জীবন কি কাটিয়ে দিতে পারবেন? সারারাত জেগে জেগে তিনি নানা ধরনের দুশ্চিন্তা করেন, মানসিক অশান্তি নিয়ে কর্মস্থলে বেরিয়ে পড়েন। আর্থিক টানাপোড়েন না থাকলেও তার সংশয় বিয়ে নিয়ে। এমনকি বিয়েটা না করলে খুব কি ক্ষতি হয়ে যায়- সে প্রশ্ন তার মনের মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে।

পুরো বিষয়টি তিনি খুলে বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশন অ্যান্ড কাউন্সিলিং বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানমের কাছে।

এবার আসা যাক মেহতাব খানম তাকে কী পরামর্শ দিয়েছেন? তিনি অন্তরার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং বলেন, বোঝা যাচ্ছে তুমি নিঃস্বার্থভাবে পরিবারের অভিভাবক হয়ে উঠেছিলে। বাবার অবর্তমানে এক সংগ্রামের মধ্যদিয়ে তোমাকে পরিশ্রম করতে হয়েছে, উপার্জন করতে হয়েছে এবং সবকিছু সামাল দিতে হয়েছে। জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়গুলো তুমি ব্যয় করতে সংকোচ করোনি। অন্তরার বিয়ের প্রসঙ্গটি টেনে মেহতাব খানম বলেন, বিয়ে যদিও একটি সামাজিক, আইনগত এবং ধর্মীয় বন্ধন, তার পাশাপাশি এটি একজন মানুষের একাকিত্ব ঘোচানোর মাধ্যম। সবাই একা জীবন কাটাতে পারে না। প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর আমরা মনে মনে বিশেষ কাউকে খুঁজতে থাকি যে কি না আমাদের অফুরান ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব দিয়ে আগলে রাখবে। মানুষের চাহিদার সঙ্গে এ সময়টায় শারীরিক চাহিদাও ভর করে।

তিনি অন্তরাকে প্রশ্ন করেন, তোমার জীবনে এমন কারও উপস্থিতি কতটা তীব্রভাবে অনুভব করছো সেটি একটু ভাবো। এছাড়া যেহেতু বিয়ের প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলছো, সে বিষয়টি মাথায় রেখে সম্ভাব্য কিছু মানুষের সাথে পরিচিত হয়ে বোঝার চেষ্টা করো, তাদের কারও সঙ্গে তোমার যায় কি না। তোমার এই সময়টা তার বোঝার সক্ষমতা আছে কি না। এ ক্ষেত্রে ডিভোর্সি বা বিপত্নীক কি না, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে দুজনের মাঝে বোঝাপড়ার বিষয়টি। এছাড়া পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বিশ্বাস এগুলো তো আছেই। উপরোক্ত বিষয়গুলো নিশ্চিত হওয়ার পর অন্তরাকে তিনি পরামর্শ দেন, তুমি চাইলে সম্পর্ক যত্ন করে এগিয়ে নিতে পারো। এক্ষেত্রে তোমার কিছু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে হবে, লক্ষ্য পূরণের জন্য কিছু মানুষের সঙ্গে পরিচিত হতে হবে এবং আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

(ঢাকাটাইমস/৪ সেপ্টেম্বর/এমএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :