হোল্ডিং ট্যাক্সের টাকা আত্মসাৎ, সিটি করপোরেশনের ব্যাংক হিসাব, একক স্বাক্ষর জাহাঙ্গীরের!

প্রকাশ | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:৩২ | আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:৫৮

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বরখাস্তকৃত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে অনায়াসেই দুর্নীতির বরপুত্র বলা যায়। তিনি কি পুকুর চুরি করেছেন? নাকি সিনা চুরি? নাকি এর চেয়েও বেশি কিছু?

আপনি যখন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ থেকে অব্যাহতি পাওয়া বরখাস্তকৃত মেয়র জাহাঙ্গীরের অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির দালিলিক প্রমাণসহ দেখবেন, জানবেন তখন হাজারো প্রশ্ন জাগবে আপনার মনে। কী তুঘলকি সব কাণ্ডই না ঘটিয়েছেন জাহাঙ্গীর! অর্থ আত্মসাৎ করার জন্য তার নেওয়া একাধিক পদক্ষেপ রীতিমতো দুর্নীতির এক একটি উদাহরণ হয়ে আছে।

ঢাকা টাইমস গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বরখাস্তকৃত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের অনেক দুর্নীতির তথ্যভিত্তিক দালিলিক প্রমাণ পেয়েছে।

সিটি করপোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্সের ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা একক নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করে বরখাস্তকৃত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম আত্মসাৎ করেছেন বলে ঢাকা টাইমস তথ্যানুসন্ধানে সুস্পষ্ট প্রমাণ পেয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যপ্রমাণে দেখা যায়, ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বেসরকারি প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেডের কোনাবাড়ি শাখায় জাহাঙ্গীর আলমের একক স্বাক্ষরে সিটি করপোরেশনের নামে একটি অ্যাকাউন্ট (হিসাব নং-০১৩৫১১১০০০০৫৭৮) খোলেন। ঢাকা টামইমস তথ্যানুসন্ধানে জানতে পারে, এই ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২৭/০২/২০২০ সালে ইস্পাহানি ফুডস লিমিটেডের নামে ৫০ লাখ টাকা জমা হয়। আবার এই টাকা জনৈক শামীম হোসেন (চেক নং-৯৩৩২৮২৭) উত্তোলন করেন। একইভাবে ২০২০ সালের ৫ মার্চ ফিন-বাংলা এপারেলস লিমিটেড-এর ৩০ লাখ টাকার একটি পে-অর্ডার প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেডে জমা হয়। যা কিনা তৎকালীন মেয়র জাহাঙ্গীর নিজেই উত্তোলন করেন (চেক নং- ৯৩৩২৮২৮)। ঢাকা টাইমসের অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ২০২০ সালের ৮ জুন হানিওয়েল গার্মেন্টস লিমিটিড ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড টঙ্গি শাখা থেকে এক কোটি টাকার একটি পে-অর্ডার জাহাঙ্গীর আলমের একক স্বাক্ষরিত সিটি করপোরেশনের প্রিমিয়ার ব্যাংকে জমা করে। এই টাকা পরবর্তীতে জনৈক শহিদুল নগদ উত্তোলন (চেক নং- ৫০৬১৯২) করেন। বিভিন্ন সূত্রে আরও জানা যায়, এই প্রিমিয়ার ব্যাংকেই জিএমএস কম্পোজিট নিটিং ইন্টারন্যাশনাল ৩০ লাখ টাকার একটি পে-অর্ডার দেয়, যা ২০২০ সালের ১০ আগস্ট জমা হয়। এই টাকা চেকের মাধ্যমে নগদ উত্তোলন করেন (চেক নং- ৫০৬১৯১) পলো চাকমা। গাজীপুরের একাধিক সূত্র ঢাকা টাইমসকে নিশ্চিত করেছে, এই পলো চাকমা বরখাস্তকৃত মেয়র জাহাঙ্গীরের বাড়ির কর্মী। অনুসন্ধানে ঢাকা টাইমস আরও জানতে পারে, ২০২০ সালের ১৮ আগস্ট জিএমএস কম্পোজিট নিটিং ইন্টারন্যাশনাল পৃথক দুটি পে- অর্ডারে সর্বমোট ৫০ লাখ টাকা দেয়, যা তৎকালীন মেয়র জাহাঙ্গীরের একক স্বাক্ষরিত অ্যাকাউন্টেই জমা করা হয়। বিস্ময়করভাবে এখানেও জনৈক শহিদুল পৃথক দুটি চেক (চেক নং- ৫০৬১৯৩ ও ৫০৬১৯৪) নগদ উত্তোলন করেন।  

সরকারের নিয়ম অনুযায়ী, সিটি করপোরেশনের মেয়র কোনোভাবেই একক নামে কোনো হিসাব পরিচালনা করতে পারেন না। বিষয়টি এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাও নিশ্চিত করেছেন।

প্রশ্ন উঠেছে, একক স্বাক্ষরে সিটি করপোরেশনের নামে ব্যাংক হিসাব খুলে জমাকৃত ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা উত্তোলন করে সেই ব্যাংক হিসাব বন্ধ করা নিয়েও। ঢাকা টাইমস একাধিক সূত্রে নিশ্চিত হয়েছে, এই টাকা বরখাস্তকৃত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করেছেন। সূত্রগুলো জানায়, মূলত বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের হোল্ডিং ট্যাক্সের টাকাই পে-অর্ডারের মাধ্যমে এই অ্যাকাউন্টগুলোতে জমা করে তা জাহাঙ্গীর আলম নিজের মতো করে ব্যবহার করেছেন।

কেন এভাবে একক নামে সিটি করপোরেশনের নামে অ্যাকাউন্ট খুলে জমাকৃত ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা উত্তোলনের পর আবার সেই অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়? বিষয়টি জানার জন্য ঢাকা টাইমসের পক্ষ থেকে বারবার জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি কোনো সাড়া দেননি।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত পদাধিকারীরাও বিষয়টি তদন্তাধীন বলে ঢাকা টাইমসের কাছে বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করেছে ঢাকা টাইমস। কিন্তু সাড়া মেলেনি।

মেয়র থাকাকালে জাহাঙ্গীর আলম যে সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন এটি তার একটি সুনির্দিষ্ট উদাহরণ মাত্র । ঢাকা টাইমস এমন আরও সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছে। শিগগিরই তা সবিস্তারে তুলে ধরা হবে।

চলবে--

(ঢাকাটাইমস/৪সেপ্টেম্বর/এআরডি)