বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গোলা: মিয়ানমারের দূতকে ডেকে কড়া প্রতিবাদ ঢাকার
মিয়ানমারের যুদ্ধবিমান থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গোলা ছোড়ার ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত উ অং কিয়াউ মো-কে তলব করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এই বিষয়ে একটি কূটনৈতিক আনুষ্ঠানিক পত্রও হস্তান্তর করা হয়।
রবিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার অনুবিভাগের মহাপরিচালক মিয়া মাইনুল কবির রাষ্ট্রদূতকে সমন করেন।
এ বিষয়ে একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আজ সকালে রাষ্ট্রদূতকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তলব করা হয়। প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী তার সঙ্গে বৈঠক হয়। গোলাবারুদের ঘটনায় বাংলাদেশের অসন্তুষ্টির বিষয়টি তাকে জানানো হয়।’
তিনি বলেন, সীমান্তে মিয়ানমারের অভিযানের কারণে বাংলাদেশের প্রভাব বিষয়ে কড়া প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি তাদের এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।
এর আগে শনিবার সকালে মিয়ানমারের যুদ্ধবিমান থেকে দুটি গোলা এসে পড়েছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তের বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। এর ফলে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ওই এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
তবে মিয়ানমারের যুদ্ধবিমান থেকে গোলা পড়ার ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর ওই সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। পাশাপাশি নিরাপত্তা টহল জোরদার করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তুমব্রু সীমান্তের রেজু আমতলী বিজিবি বিওপির আওতাধীন সীমান্ত পিলার ৪০ ও ৪১-এর মাঝামাঝি স্থানে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দুটি যুদ্ধবিমান ও দুটি ফাইটিং হেলিকপ্টার টহল দেয়।
এসময় মিয়ানমারের যুদ্ধবিমান থেকে প্রায় ৮ থেকে ১০টি গোলা আর হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। এর মধ্য থেকে দুটি গোলা এসে সীমান্ত থেকে আনুমানিক ১২০ মিটার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে পড়ে।
স্থানীয় ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ চৌধুরী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মিয়ানমার সীমান্তের অভ্যন্তরে বিদ্রোহী ও মিয়ানমার বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি হচ্ছে। দিনে ২৫ থেকে ৪০টি মর্টারশেল বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসে। এতে আতংক বিরাজ করাটা স্বাভাবিক। তবে সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিবি সদর দপ্তরের পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল ফয়জুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা তথ্য পেয়েছি। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।’
নাইক্ষ্যংছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) টানটু সাহা ঢাকা টাইমসকে জানান, পরপর দুটি অবিস্ফোরিত মর্টার শেল মিয়ানমার থেকে উড়ে এসে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু জিরো পয়েন্ট সীমান্তে পড়ে।
এর আগে গত রবিবারও মিয়ানমার থেকে ছোড়া দুটি মর্টার শেল বান্দরবান সীমান্তের ঘুমধুম এলাকার জনবসতিতে পড়ে। সেগুলো বিস্ফোরিত হয়নি এবং কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ঘটনার পরদিন সোমবার ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানায় ঢাকা।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠান শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের এ বিষয়ে বলেন, ‘মর্টার শেলগুলো হঠাৎ করে চলে এসেছে। তাদেরকে (মিয়ানমার) আমরা জিজ্ঞেস করেছি, তারা ভবিষ্যতে সতর্ক থাকবে বলেছে।’
এদিকে শনিবার গোলা পড়ার ঘটনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, মিয়ানমারের আর কোনো নাগরিককে বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না। এছাড়া ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে রবিবার তলব করা হয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/০৪সেপ্টেম্বর/কেআর/এসএম)