কিংবদন্তি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গাজী মাজহারুল আনোয়ার

মাহাবুবুর রহমান সেলিম
| আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২০:৫৯ | প্রকাশিত : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২০:৩৯
মাহাবুবুর রহমান সেলিম (বামে), গাজী মাজহারুল আনোয়ার (ডানে)

বাংলাদেশের কিংবদন্তি গীতিকার ও বস্তুনিষ্ঠ সুরকার এবং একজন চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক। সুর সৃষ্টিতে একজন দুরন্ত পারফরমার গাজী মাজহারুল আনোয়ার। শ্রেষ্ঠত্ব গাথা ব্যতিক্রমী ও অনন্য কিংবদন্তি দেশবরেণ্য সুরকার। জীবনে একটা দীর্ঘ সময় তিনি জয় করেছেন অগণিত শ্রোতা-দর্শকের মন-প্রাণ তার সৃষ্টিসুরের মূর্ছনায়।

স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য স্বাধীন দেশের সর্বপ্রথম পুরস্কার বাংলাদেশ প্রেসিডেন্ট গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন তিনি। এই পরম শ্রদ্ধেয় মানুষটির পাঁচবার জাতীয় পুরস্কার এবং বেশ কয়েকবার ‘বাচসাস’ পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা তার প্রাপ্তির ঝুলিতে। ২০০২ সালে একুশে পদক, ২০২১ সালে লাভ করেন স্বাধীনতা পুরস্কার।

'আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল', 'একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গায়', ‘যদি আমাকে জানতে সাধ হয়, বাংলার মুখ তুমি দেখে নিও’ 'গানের খাতায় স্বরলিপি লিখে', 'এই মন তোমাকে দিলাম', 'একতারা তুই দেশের কথা বল রে একবার বল' , 'জয় বাংলা বাংলার জয়', 'আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো গন্ধ বিলিয়ে যাই', 'সাগরের তীর থেকে মিষ্টি কিছু হাওয়া এনে’ 'আমার মন বলে তুমি আসবে ' 'সবাই বলে বয়স বাড়ে আমি বলি কমে রে' কত শত জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন তিনি।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ২০ হাজারের বেশি গান রচনা করেছেন এই কিংবদন্তি সংগীতকার। বিবিসি বাংলার তৈরি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ২০টি গানের তালিকায় তার ছিল তিনটি গান।

১৯৪৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার তালেশ্বর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে তার জন্ম। ১৯৬৪ সালে তৎকালীন বেতার পাকিস্তান রেডিও থেকে গান লেখা শুরু করেন। পরবর্তীকালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকেই নিয়মিত গান, নাটক রচনা করেন। তার পরিচালিত চলচ্চিত্রের সংখ্যা ছিল ৪১। প্রথম পরিচালিত ছবি ‘নান্টু ঘটক’ ১৯৮২ সালে মুক্তি পায়।

অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও প্রগতিশীল অগ্রসর চিন্তার দৃঢ় বন্ধনে ছিল তার জীবনচর্চা। তার অপূর্ব সৃষ্টিতে সাংস্কৃতিক অঙ্গন ছিল ভরপুর। তাকে নিয়ে ইতিহাস চিরদিন কথা বলবে ও তিনি বেঁচে থাকবে মানবসভ্যতার ক্যালেন্ডারে।

জন্ম ও মৃত্যু এটাই সত্য কিন্তু অনেক মৃত্যু আমাদের ভীষণ কষ্ট ও বেদনা দেয়। গাজী মাজহার আমাদের এই বিশাল সাংস্কৃতিক অঙ্গন ছেড়ে চলে গেছেন। যার ফলে নেমে এসেছে সর্বত্রই শোকের ছায়া। ওনার রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। আর চিরদিন বেঁচে থাকবেন মানুষের হৃদয়ের গভীর অন্তস্থলে।

তার অনন্য সৃষ্টি যা শিল্পী বশির আহমেদের কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হয়েছিল ‘অনেক সাধের ময়না আমার বাধন ছিঁড়ে যায়’; আজ সকল বাঁধন ছিঁড়ে উনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন না-ফেরার দেশে। সোমবার ৫ সেপ্টেম্বর বনানী কবরস্থানে মায়ের কবরে শায়িত হবেন চিরনিদ্রায়।

লেখক: সভাপতি, শিল্প চুড়া সাহিত্য সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন; প্রধান নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক একাত্তর কণ্ঠ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :