পার্সেল প্রতারণা: কুলি থেকে ‘কোটিপতি’ হোতার সঙ্গে ৫ বিদেশিসহ ধরা ১১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৭:২৩ | প্রকাশিত : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৭:২০

বিদেশি প্রতারকদের ফাঁদে পা দিয়ে লাখ লাখ টাকা খোয়াচ্ছেন দেশের অনেক মধ্যবিত্ত থেকে ধনাঢ্য ব্যক্তি। নাইজেরিয়া, আ্যঙ্গোলিয়ান ও কম্বোডিয়াসহ বেশকিছু দেশের প্রতারকরা হাতিয়ে নিচ্ছে বাংলাদেশিদের টাকা।

এমন পার্সেল প্রতারণা চক্রের মূলহোতাসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এসময় একটি বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগজিন, ২৮টি মোবাইল, একটি কম্পিউটার, ৪৯১টি এটিএম কার্ড, ২৬টি চেক বই, তিনটি ওয়ারলেস পকেট রাউটার, একটি প্রাইভেটকার, সাড়ে ৩ লাখ জাল টাকা, নগদ ১১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ও ২৬৩টি সিমকার্ড জব্দ করা হয়।

ডিবি দাবি করছে, চক্রের মূলহোতা নিজের গ্রেপ্তার এড়াতে গাড়িতে ও তার সঙ্গে সব সময় নেটওয়ার্ক জ্যামার ব্যবহার করত। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরেও তাকে গ্রেপ্তার করা যাচ্ছিলো না।

সোমবার রাতে তাদেরকে রাজধানীর মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের ওয়েব বেজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।

এভাবে টাকা কামিয়ে কুলি থেকে ‘কোটিপতি হয়েছেন বিপ্লব লস্কর’। রাজধানীতে তার রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট ও প্লট। বিদেশিদের প্রতারণার শতাধিক ঘটনার সঙ্গে বিপ্লব লস্করের সম্পৃক্ততার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- বাংলাদেশি মূলহোতা বিপ্লব লস্কর, তার সহযোগী সুমন হোসেন ইমরান, মহসীন হোসেন শাওন, ইমরান হাসান ইকবাল, নাজমুল হক রনি, মোসা. নুসরাত জাহান। এছাড়া নাইজেরিয়ান নাগরিক চিডি, ইমানুয়েল, জন, আঙ্গোলিনার নাগরিক উইলসন ডে কনসিকাউ, ক্যামেরুনের নাগরিক গুলগ্নি পাপিনি।

মঙ্গলবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবিপ্রধান) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, পার্সেল প্রতারক কখনো বাংলাদেশে বসে আবার কখনো দেশের বাইরে থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বন্ধুত্ব গড়ে পার্সেলে ডলার অথবা মূল্যবান উপহার পাঠানোর ফাঁদ পেতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

দেশি-বিদেশি প্রতারক সদস্যরা বিভিন্নপন্থায় সাধারণ মানুষের ফেসবুক আইডি, হোয়াটসঅ্যাপ, ই-মেইল সংগ্রহ করে ইউএস আর্মি, ইউএস নেভীসহ বিভিন্ন পরিচয় ব্যবহার করে টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলত। সম্পর্কে একটি পর্যায়ে দামি উপহার স্বর্ণ, মূল্যবান পাথর, হিরা, বিশাল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা, ডলার/ইউরো ইত্যাদি পাঠানোর কথা বলে ফাঁদে ফেলে।

এরপর সেগুলো ব্যক্তির নাম ঠিকানা উল্লেখ করে ভুয়া পার্সেলের ছবি পাঠায়। প্রতারিত ব্যক্তিরা সরল বিশ্বাসে পার্সের গ্রহণের অপেক্ষায় থাকেন। প্রতারক চক্রের কলিং বিভাগে কর্মরত বাংলাদেশী প্রতারকরা বিভিন্ন অপারেটরের নম্বর ব্যবহার করে নিজেকে কাস্টমস অফিসার পরিচয় দিয়ে জানায়, কিং এক্সপ্রেস সার্ভিস থেকে একটি পার্সেল এসেছে। পার্সেলটি ছাড়াতে কাস্টমস হাউজ ফি বাবদ মোটা অংকের টাকা পরিশোধ করতে হবে।

ডিবিপ্রধান বলেন, পার্সেল পাওয়ার আশায় কথিত কাস্টমস কর্মকর্তার দাবি করা টাকা পাঠিয়ে দেয়। এরপর কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী ব্যক্তি আবারও ফোন করে জানায়, বিদেশি বন্ধুর পাঠানো পার্সেলে বিপুল পরিমাণ অবৈধ ডলার রয়েছে। যা ছাড়াতে আরো বেশি টাকা প্রয়োজন। এই টাকা দিতে ব্যর্থ হলে প্রতারিত ব্যক্তির নামে মানি লন্ডারিং আইন অন্যান্য আইনে মামলা হবে বলে মিথ্যা ভয়ভীতি দেখায়।

প্রতারিত ব্যক্তিরা মামলার ভয়ে প্রতারকদের দেওয়া বিভিন্ন ব্যাংক আ্যকাউন্টে দাবিকৃত টাকা পাঠালে আবারও ফোন করে পুলিশ এবং সাংবাদিক জেনে যাওয়ায় তাদের ম্যানেজের কথা বলে আরো বড় অংকের টাকা দাবি করে এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকে। প্রতারকরা তাদের দাবি করা টাকা তাদের সরবরাহকৃত ব্যাংক আ্যকাউন্টে জমা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতারণার শিকার হওয়া ব্যক্তিকে সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্লক করে দিত।

হারুন বলেন, কুলি থেকে ‘কোটিপতি হয়েছেন গ্রেপ্তার বিপ্লব লস্কর’। রাজধানীতে তার রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট ও প্লট। বিদেশিদের প্রতারণার শতাধিক ঘটনার সঙ্গে বিপ্লব লস্করের সম্পৃক্ততার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। নিজেরে গ্রেপ্তার এড়াতে গাড়িতে ও তার সঙ্গে সব সময় নেটওয়ার্ক জ্যামার ব্যবহার করতেন। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরেও তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদ আরও বলেন, বিদেশি প্রতারক চক্রটি গ্রেপ্তার নুসরাতের মতো বহু বাংলাদেশিদের সহায়তায় এভাবে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিলো। চক্রটি প্রতারণায় ব্যবহৃত ব্যাংক আ্যকাউন্টগুলো বিভিন্ন ব্যক্তির পাসপোর্ট জাল করে বিভিন্ন ব্যাংকে শত শত আ্যকাউন্ট ও ক্রেডিট কার্ড নিয়েছে। এ সব ব্যাংকের চেক ও এটিএম কার্ড ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত টাকা তুলে নিত। আর এই টাকা তোলা ও টাকা ভাগাভাগির কাজটি করত বিপ্লব লস্কর। সে বিদেশি নম্বর ব্যবহার করে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে সরাসরি তদারকি করত।

(ঢাকাটাইমস/সেপ্টেম্বর/এসএস/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অপরাধ ও দুর্নীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অপরাধ ও দুর্নীতি এর সর্বশেষ

চাকরির পরীক্ষার আগেই মিলত উত্তর, চুক্তি ১২-১৪ লাখ টাকায়: ডিবি

আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সক্রিয় সদস্য গ্রেপ্তার

আন্তর্জাতিক শিশু পর্নোগ্রাফি চক্রের মূলহোতা গ্রেপ্তার, বিপুল কনটেন্ট জব্দ

এফডিসিতে সাংবাদিকদের উপর হামলা: ১১ সদস্যের তদন্ত কমিটি

স্ত্রীসহ নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ডিবিতে যা বলেছেন কারিগরি বোর্ডের চেয়ারম্যান

শেরপুরের ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি মামলার আসামি ঢাকায় গ্রেপ্তার

খেলনার প্যাকেটে আমেরিকা থেকে এসেছে কোটি টাকার গাঁজার চকলেট-কেক

সাবেক আইজিপি বেনজীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক

উপবৃত্তির টাকা দেওয়ার নামে প্রতারণা, গ্রেপ্তার ৮

সনদ জালিয়াতি: কারিগরি বোর্ডের ওএসডি চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছে ডিবি

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :