‘শারীরিক সম্পর্কই’ কাল হলো নাসিমার!

প্রকাশ | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২২:৫৯ | আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২০:১৫

শেরপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

`শারীরিক সম্পর্কই‘ কাল হয়েছে নাসিমা বেগমের। তার লাশ উদ্ধারের পর মঙ্গলবার বিকালে ক্লুলেস এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করতে গিয়ে শেরপুরের নালিতাবাড়ী থানা পুলিশের কাছে দেওয়া আসামিদের জবানবন্দিতে এমন তথ্য উঠে আসে। এ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে ইতোমধ্যে দুইজন গ্রেপ্তার হয়েছেন।

 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, উপজেলার বিশগিরিপাড়া এলাকার মৃত. আফাজ উদ্দিন ছেলে নজরুল ইসলাম (৩০) এবং একই গ্রামের আব্দুল রশিদ ওরফে গারো রশিদের ছেলে হেলিম মিয়া ওরফে ইলিম (৪০)।

 

এর আগে গেল ২৫ আগস্ট বিকালে উপজেলার বিশগিড়িপাড়ার বন বাগানের ঝোপ থেকে মাটি চাপা দেয়া অবস্থায় নাসিমার পচা গলা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

 

নাসিমা চার সন্তানের জননী এবং নালিতাবাড়ীর মানিককূড়া গ্রামের আমির হোসেন মন্ডলের স্ত্রী। তার স্বামী গ্রাম পুলিশের একজন সদস্য।

 

গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ মিয়া জানান, গেল ২৫ আগস্ট আসরের নামাজের সময় নাসিমা নজরুলের বাড়িতে যায় এবং তার কাছে ৫০ টাকা দাবি করে। ওই সময় নজরুল টাকা নাই বলে জানায়। পুনরায় টাকা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলে নজরুল নাসিমাকে ৫০ টাকা দেয়।

 

এ সময় নাসিমা নজরুলকে জিজ্ঞাসা করে তার বউ বাড়িতে আছে কিনা। নজরুল জানায় তার বউ বাড়িতে নেই। তখন নাসিমা নজরুলকে উদ্দেশ করে বলে বউ ছাড়া এতদিন থাকস কেমনে। এই কথা বলে সে নজরুলকে পাশের বাগানে যেতে বলে। পরে নজরুল এবং নাসিমাকে নিয়ে পাশের একটি বাগানের বড়ই গাছের নিচে জঙ্গলের ভেতর যায়। সেখানে তারা শারীরিক সম্পর্ক করে। সেখানে তারা ২০-২৫ মিনিট অবস্থান করে। পরে সেখান থেকে চলে আসার সময় স্থানীয় হেলিম মিয়া তাদের পথ রোধ করে দাঁড়ায়।

 

তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ মিয়া আরো জানায়, এ সময় হেলিম নাসিমাকে আবারও বড়ই গাছের নিচে নিয়ে যায়। এবং তাকে হুমকি দিয়ে বলে তার গলায় থাকা রুপার চেইন, কানের দুল ও নাকে থাকা স্বর্ণের নাকফুল না দিলে এ ঘটনা এলাকায় প্রকাশ করে দিবে। নাসিমা ওইসব দিতে অস্বীকার করে। পরে ক্ষিপ্ত হয়ে হেলিম নাসিমার গলায় থাকা উড়না দিয়ে গলায় পেচিয়ে ধরে। সেই সঙ্গে এ কাজে নজরুলকে সহযোগিতা করতে বলে। পরে দুই দিক থেকে দুইজনে উড়না দিয়ে টান দিলে নাসিমা কাতরাতে কাতরাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

 

আব্দুল লতিফ মিয়া বলেন, এর পরপর  হেলিম নাসিমার বুকের উপর ৩-৪ টি স্বজোরে লাথি মেরে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এ সময় লাশ গুম করার জন্য মাটি চাপা দিতে হেলিম নজরুলকে তার বাড়ি থেকে কোদাল নিয়ে আসতে বলে। পরে নজরুল কোদাল নিয়ে এসে ঘটনাস্থলের সামান্য দূরে জঙ্গলের ভিতর নাসিমার লাশ মাটি চাপা দেয়। এর আগে নাসিমার শরীরের থাকা স্বর্ণ ও রুপার অলংকার লুট করে হেলিম।

 

নালিতাবাড়ী থানা পুলিশের ওসি এমদাদুল হক জানান, ওই নারীর লাশ উদ্ধারের ১১ দিনের মাথায় এই ক্লুলেস হত্যা রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব হয়েছে। এর আগে নিহতের পিতা নাদির আলী ওরফে নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।

 

পরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ঢাকার বংশাল থেকে অভিযুক্ত নজরুলকে গেল ৪ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেয়া জবানবন্দিরর সূত্র ধরে হেলিমকে আইনের আওতায় আনা হয়।

 

ওসি এমদাদুল হক আরও জানান, এ ঘটনার রহস্য ভেদ করতে সার্বক্ষণিক দিক নির্দেশনা দিয়েছেন অর্থ ও প্রশাসন বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার  মোহম্মদ আবু বকর সিদ্দিক এবং নালিতাবাড়ী সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আফরোজা নাজনীন।

 

(ঢাকাটাইমস/ ৬সেপ্টেম্বর/এআর)