বান্দরবান সীমান্তের ওপারে আবারো গোলাগুলি, আতঙ্ক

বান্দরবান প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৬:৫১ | প্রকাশিত : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৬:৪১
আরাকান আর্মিকে দমাতে হামলা চালাচ্ছে দেশটির জান্তা (ছবি: সংগৃহীত)

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন ফের শুরু হওয়া সহিংসতা সীমান্তে উত্তেজনা বাড়াচ্ছে। রাখাইনে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের দাবিতে লড়াইরত সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মিকে দমাতে হামলা চালাচ্ছে দেশটির জান্তা।

এদিকে সীমান্তের ওপারে মাস খানেক ধরে থেমে থেমে চলা এ হামলার ঘটনায় আতঙ্কিত ঘুমধুম ও তমব্রু সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা। এরইমধ্যে দেশটির সামরিক বাহিনীর ছোড়া গোলা দুদফায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পড়েছে। দুবারই মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত উ অং কিয়াউ মো‘কে ডেকে এর কড়া প্রতিবাদ জানায় ঢাকা।

থেমে থেমে হামলায় অস্থির সীমান্তে আবারো উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্ত এলাকার মিয়ানমার অংশে বৃহস্পতিবার আবারো গোলাগুলি শুরু হয়। এদিন সকাল ৮টা থেকে তুমব্রু সীমান্তে ভারী গুলির শব্দে স্থানীয়দের মধ্যে আবারো উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো.জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, প্রায় এক মাস ধরে সীমান্তজুড়ে গোলাগুলি চলছে। আজ সকাল থেকে আবারো গুলির শব্দ পাওয়া গেছে। মনে হচ্ছে সীমান্তে মর্টরশেল ছুঁড়ছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে গুলির শব্দে তুমব্রু সীমান্ত কেঁপে উঠে।

স্থানীয় বাসিন্দা মাহামুদুল হক বলেন, সকালে হঠাৎ পুরো ঘরবাড়ি কেঁপে উঠে। প্রথমে ভেবেছি ভূমিকম্প তবে কিছুক্ষণ পর বুঝলাম এটি মিয়ানমারের মর্টারশেল ছোঁড়ার আঘাতের শব্দ। এখন নিয়মিত গোলাগুলি হয়, আমাদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে।

বান্দরবানের পুলিশ সুপার (এসপি) তারিকুল ইসলাম তারিক সংবাদ মাধ্যমকে জানান, বিষয়টি শুনেছি। খোজঁ খবর নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে এ বিষয়ে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজির) এর পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এর আগে বিজিবি সদর দপ্তরের পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল ফয়জুর রহমান ঢাকা টাইমসকে জানিয়েছেন, ‘আমরা তথ্য পেয়েছি। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।’

সম্প্রতি হামলার সূত্রপাত:

মিয়ানমারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইরাবতী এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আরাকান আর্মি গত ২ আগস্ট রাখাইনের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন পুলিশ ফাঁড়িতে আক্রমণ শুরু করে। সবশেষ ৩১ আগস্ট একটি ফাঁড়ি দখলের পাশাপাশি ১৯ পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করে। এছাড়া আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ এবং অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে যায়।

আরাকান আর্মির এসব কর্মকাণ্ডের কড়া জবাব দিতে সীমান্তবর্তী এলাকায় সংগঠনটিকে টার্গেট করে বিমান হামলা চালায় দেশটির সেনাবাহিনী। জান্তা সৈন্যরা শক্তিবৃদ্ধি এবং কামান ব্যবহার করে ফাঁড়িটি পুনরায় দখল করতে নামে।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মিয়ানমারের গোলা:

গত ৩ আগস্ট সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তুমব্রু সীমান্তের রেজু আমতলী বিজিবি বিওপির আওতাধীন সীমান্ত পিলার ৪০ ও ৪১-এর মাঝামাঝি স্থানে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দুটি যুদ্ধবিমান এবং দুটি ফাইটিং হেলিকপ্টার টহল দেয়।

এসময় মিয়ানমারের যুদ্ধবিমান থেকে প্রায় ৮ থেকে ১০টি গোলা আর হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। এর মধ্য থেকে দুটি গোলা এসে বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে আনুমানিক ১২০ মিটার অভ্যন্তরে পড়ে।

তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি । ঘটনার পর ওই সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে যায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। পাশাপাশি নিরাপত্তা টহল জোরদার করা হয়। এ পরিস্থিতিতে সীমান্তবর্তী ওই এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

রাষ্ট্রদূত‌কে দুদফা তলব:

বাংলাদেশ ভূখণ্ডের ভেতরে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর দুটি গোলা এসে পড়ার ঘটনায় দেশটির রাষ্ট্রদূত‌ উ অং কিয়াউ মো কে দুদফা তলব করে ঢাকা। প্রথম দফায় গত ২৯ আগস্ট এবং দ্বিতীয় দফায় গত ৪ সেপ্টেম্বর কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য:

বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মিয়ানমারের গোলা পড়ার ঘটনার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘মর্টার শেলগুলো হঠাৎ করে চলে এসেছে। তাদেরকে (মিয়ানমার) আমরা জিজ্ঞেস করেছি, তারা ভবিষ্যতে সতর্ক থাকবে বলেছে।’

(ঢাকাটাইমস/০৮সেপ্টেম্বর/এসএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :