শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক যেসব খাবার

প্রকাশ | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:৩৮ | আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১:৪৮

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

অভিভাবকদের শিশু সন্তানের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সব সময় সচেতন থাকা প্রয়োজন। শিশুর মুখে পুষ্টিকর খাবার তুলে দেওয়াটা তাদেরই দায়িত্ব। বর্তমানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, অনেক অভিভাবকই শিশুকে বাইরের খাবার খেতে উৎসাহিত করেন। বিভিন্ন চিপস থেকে শুরু করে জাঙ্ক ফুড- কোনো কিছুতেই যেন মানা নেই!

শিশুদের খাবারের তালিকা অন্যদের তুলনায় সব সময় ভিন্ন হয়। কারণ শিশুদের হজম ক্ষমতা থেকে শুরু করে তাদের সব কিছুই বড়দের চেয়ে আলাদা। তাই শিশুকে খাবার খাওয়াতে হলে অবশ্যই চিন্তা করুন, কী খাওয়াবেন আর কী খাওয়াবেন না?

অনেক সময় শিশুর আবদার বা আদরের কারণে ক্ষতিকর অনেক খাবার আমরা তাকে খাইয়ে থাকি। কিন্তু মনে রাখবেন শিশুর জন্য যা ক্ষতিকর তা কখনোই খাওয়ানো যাবে না। তাই সাবধান হোন।

চকলেট, চিপস, আচার, চানাচুর, ফাস্টফুড ইত্যাদি বাইরের খাবার শিশুর খাবারের রুচিকে অনেকটাই নষ্ট করে দেয়। তাই এ ধরনের খাবার শিশুকে খাওয়ানো থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

শিশুদেহের কাঠামো তৈরি হয় অস্থি বা কঙ্কাল দিয়ে। তাই হাড়ের গুরুত্ব অনেক বেশি। শিশুদের পুষ্টিকর খাদ্য দেয়া না হলে তাদের হাড়ে বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশুকে খুব ছোটবেলা থেকে চিপস বা ওই জাতীয় প্যাকেটের ভাজাভুজি বেশি মাত্রায় খাওয়ানো হয়, পরবর্তী কালে তাদের হাড়ের দুর্বলতা দেখা দেয়। ছোট থেকে তাদের হাড়ের গঠনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ‘ফাস্ট ফুড’ ও ভাজাভুজি খাওয়ার অভ্যাস।

তবে হাড়ের গঠন দুর্বল হওয়াই নয়, যেসব শিশু ছোট থেকে বেশি মাত্রায় এসব জিনিস খায়, তাদের বৃদ্ধিও কম হয় বলে দাবি করা হয়েছে সমীক্ষায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হাড়ের রোগগুলোর মধ্যে অস্টিওপোরোসিস বর্তমানে বেশি দেখা যায়। যার কারণে হাড়ের দৃঢ় গঠন ক্ষয়ে যেতে থাকে। কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো হাড় ক্ষয় করে আবার কিছু খাবার গঠনে সহায়তা করে। হাড়ের দৃঢ় গঠনে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, ফসফরাস গুরুত্বপূর্ণ। এসব খাবারের পরিমাণে ব্যতিক্রম হলে হাড়ের ক্ষয় হয়ে থাকে। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক শিশুকে ভুলেও কোন খাবারগুলো দেবেন না, আর সেগুলো খেলে কী হতে পারে-

চিপস

বাজারে শিশুদের চিপস খাওয়া অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। বাজারে মুখরোচক চিপসের মধ্যেই রয়েছে এমন এক রকমের রাসায়নিক উপাদান, যা ক্যানসারের মতো মারণ রোগ হতে পারে। একই ক্ষতিকর ফাস্ট ফুড। খাবারগুলো শিশুদের শরীর থেকে ক্যালসিয়াম বের করে দেয়, তাই কৌশলে বার্গার, পিৎজা, সেন্ডউইচের মতো ফাস্ট ফুড থেকে দূরে রাখুন আপনার শিশুকে।

৯২% সিরিয়াল পণ্যে চিনি

লন্ডনের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটির গবেষকরা শিশুদের জন্য বাজারে পাওয়া খাদ্যপণ্যের বিশুদ্ধতা নিয়ে গবেষণা করেছেন।  এর মাধ্যমে দেখা গেছে, শিশুদের খাওয়ানো খাদ্যশস্যের (সিরিয়ালজ) ৯২ শতাংশে উচ্চমাত্রার চিনি রয়েছে।  বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে কিছু জনপ্রিয় পণ্যে এত বেশি চিনি থাকে যে দীর্ঘ সময় ধরে সেগুলো খেলে শিশুরা মোটা হতে পারে বা ডায়াবেটিস হতে পারে।

বাদাম

চিনাবাদাম বা এ ধরনের কিছু বাদাম অ্যালার্জির সৃষ্টি করে থাকে তাই সবচেয়ে ভালো হয় এসব খাবার শিশুর এক বছর বয়স হওয়ার আগে না দেয়া। আর যদি পরিবারের কোনো সদস্যের বাদামে অ্যালার্জি থাকে তাহলে বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করে দিতে হবে বা ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে দিতে হবে।

লবন

শিশুদের কিডনি লবন ও সোডিয়াম সহ্য করতে পারে না। কারণ লবণেই রয়েছে প্রচুর সোডিয়াম যা শিশুর পাকস্থলিতে খাবার পরিপাকে সমস্যার সৃষ্টি করে। তাই শিশুর খাবারে লবন না মেশানোই ভালো। তবে এক বছর পরে শিশুর খাবারে অল্প অল্প করে লবন মেশাতে পারেন। কিন্তু এক বছরের আগে মোটেও শিশুর খাবার তৈরিতে লবন ব্যবহার করা যাবে না।

পাঁচটি বিস্কুটের সমান চিনি

কিছু ব্র্যান্ডের ৩০ গ্রাম উপাদানে ১২ গ্রাম চিনি পাওয়া গেছে, যা সকালের নাস্তায় পাঁচটি বিস্কুট খাওয়ার সমতুল্য।  অথবা বলা যায় রেডিমেড সিরিয়ালের বাটিতে তিন চামচ চিনি রাখা হয়েছে।  গবেষকরা বলেছেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিশুদের খাবার থেকে এই পণ্যগুলো বাদ দিতে হবে।

সফট ড্রিঙ্কস
শিশুদের পছন্দের জিনিস সফট ড্রিঙ্কস। এগুলো সুপ্তভাবে হাড়কে ক্ষয় করে যাচ্ছে। এসব ড্রিঙ্কসে রয়েছে ফসফরিক এসিড যা মূত্রের মাধ্যমে ক্যালসিয়ামকে বের করে দেয়, অস্থি ক্ষয় করে অনেক বেশি।

চর্বিযুক্ত খাবার

শিশুদের চর্বিযুক্ত, প্রাণিজ চর্বি জাতীয় খাবার কম দেবেন। কারণ এসব খাবার শিশুর মেধা বিকাশ করে ঠিকই, পাশাপাশি শিশুকে মুটিয়ে দেয়।

চা- কফি

চা ও কফিতে ক্যাফিন রয়েছে। তবে চা বা কফি পান মোটেও অপকারী নয়। শুধু পরিমাণটা ঠিক রাখতে হবে। কফি পান দৈনিক বড় জোর এক বা দুই কাপ, এর বেশি নয়। চা তুলনামূলক কম ক্যাফিন ধারন করে, তাই চা পানে তেমন সমস্যা নেই।

মাংস

শিশুদের অতিরিক্ত লাল মাংস খাওয়ানো যাবে না। অতিরিক্ত মাংস মানে অতিরিক্ত প্রোটিন আর এ প্রোটিন দেহে তৈরি করে অতিরিক্ত এসিড যাকে নিষ্ক্রিয় করতে শরীর থেকে ক্যালসিয়াম বের করে দেয়।

চকোলেট আরও বিপজ্জনক

চকলেট ফ্লেভারে তৈরি রেডিমেড বেবি ফুড পণ্যে প্রতি বাটিতে ৮.৭ গ্রাম চিনি থাকে।  এছাড়াও, ৬০ শতাংশ পণ্যেও মাঝারি বা উচ্চ মাত্রার লবন থাকে।  এছাড়াও, তাদের মধ্যে প্রয়োজনীয় ফাইবারের পরিমাণও কম।

শিশুদের ছয় মাস শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো উচিৎ, কিন্তু উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে এই বয়সের মধ্যে মাত্র এক-তৃতীয়াংশের কিছু বেশি শিশু মায়ের দুধ খাওয়ানো হয়।

(ঢাকাটাইমস/৯ সেপ্টেম্বর/আরজেড/এফএ)