মিতু হত্যা: সেদিন ভোরে আসলে কী ঘটেছিল

প্রকাশ | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৯:০৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

২০১৬ সালের ৫ জুন। ভোরের চট্টগ্রাম শহর। বন্দরনগর তখনো পুরোপুরি কর্মব্যস্ত হয়নি। ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাচ্ছিলেন মা মাহমুদা খানম মিতু। জিইসি মোড়। গুলি করে আর কুপিয়ে মর্মান্তিকভাবে হত্যা করা হয় এই মাকে।

প্রকাশ্যে সংঘটিত এই হত্যার খবর রাষ্ট্র হতে সময় লাগেনি। জানা গেল, হত্যার শিকার মিতু আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী। জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালিয়ে পরিচিতি পাওয়া পুলিশ সুপার পদমর্যাদার বাবুল তখন পদোন্নতি পেয়ে ঢাকায়।

স্ত্রী হত্যার খবরে ছুটে আসেন চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে স্ত্রী হত্যার মামলা করেন। মামলায় তিনি বলেন, তার জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রী আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে থাকতে পারেন।

এই মামলায় নানা নাটকীয়তার জন্ম নেয়। বাবুলের শ্বশুর-শাশুড়ি তাদের মেয়ে হত্যায় জামাতা বাবুলকে দায়ী করতে থাকেন। এরমধ্যে চাকরি থেকে ইস্তফাও নিয়েছেন সেইসময়ে এসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তা বাবুল।

পুলিশের চাকরি ছেড়ে প্রথমে ঢাকার আদ–দ্বীন হাসপাতালে যোগ দেন। এরপর তিনি চীন থেকে পানি পরিশোধনকারী যন্ত্র এনে বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন। মিতু হত্যার পর বাবুল আক্তার প্রথমে ঢাকার মেরাদিয়ায় শ্বশুরবাড়িতে উঠেছিলেন।

শুরু থেকে চট্টগ্রামের ডিবি পুলিশ মামলাটির তদন্ত করে। ২০১৬ সালের ২৪ জুন বাবুল আক্তারকে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে এনে প্রায় ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। প্রায় তিন বছর তদন্ত করেও অভিযোগপত্র দিতে ব্যর্থ হয় ডিবি। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আদালত মামলাটির তদন্তের ভার দেয় পিবিআইকে।

তদন্ত করতে গিয়ে মিতু হত্যায় বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়ার কথা জানায় পিবিআই। ২০২১ সালের মে মাসে মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সংস্থাটি। এরপরই বাবুলকে আসামি করে নতুন একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন।

হত্যাকাণ্ডের পাঁচ বছর পর ২০২১ সালের মে মাসে ওই মামলায় বাবুলকে গ্রেপ্তার করে পাঁচ দিনের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। তিনি এখন ফেনী কারাগারে বন্দি।

তবে পিবিআইয়ের চূড়ান্ত প্রতিবেদন নিয়ে আপত্তি জানিয়ে সিআইডি বা অন্য কোনো সংস্থার কোনো জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার মাধ্যমে মিতু হত্যার ঘটনায় নিজের করা মামলাটির পুনঃতদন্ত চেয়েছিলেন বাবুল আক্তার। গেল বছরের ৩ নভেম্বর আবেদনটির শুনানি করে বিচারক পিবিআইকে অধিকতর তদন্ত করার আদেশ দেন।

গত বছরের জানুয়ারিতে আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্তভার পাওয়ার পর মিতু হত্যায় ‘সম্পৃক্ত’ মুছাকে ঘিরে কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে থাকে তদন্তকারীরা। শেষে পিবিআই তথ্য পায়, মিতুকে হত্যা করা হয়েছিল স্বামী বাবুল আক্তারের ‘পরিকল্পনায়’। আর এজন্য খুনিদের লোক মারফত তিন লাখ ‘টাকাও দিয়েছিলেন’ বাবুল।

চট্টগ্রামের আলোচিত এই হত্যা মামলায় সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি আর ৬ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দিয়েছে পিবিআই। ছয় আসামি হলেন—মো. কামরুল ইসলাম সিকদার মুসা, এহতেশামুল হক ওরফে ভোলা, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, খাইরুল ইসলাম কালু ও শাহাজাহান মিয়া। তাদের মধ্যে কামরুল ইসলাম সিকদার মুসা ও খাইরুল ইসলাম কালু পলাতক।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক (মেট্রো) আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক মঙ্গলবার বিকাল তিনটার দিকে আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় চার্জশিট জমা দেন। চার্জশিটটি নথিতে সংযুক্ত করে শিগগির আদালতে উপস্থাপন করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৩সেপ্টেম্বর/এসএস/আরআর/ডিএম)