চিকিৎসাসেবায় নতুন মাইলস্টোন সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল

প্রকাশ | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:০৪ | আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:১৬

অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন দেশের মানুষ যাতে দেশেই স্বল্পমূল্যে সব ধরনের রোগের উন্নত চিকিৎসাসেবা পান। জাতির পিতার সেই স্বপ্ন পূরণে বিরাট ভূমিকা রাখবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল। দেশের মানুষের জন্য চিকিৎসাসেবায় নতুন মাইলস্টোন হলো বাংলাদেশের সর্বপ্রথম সেন্টার বেইজড সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল। আর এটা সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সদিচ্ছা ও সাহসী পদক্ষেপের ফলে।

বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ দিয়েছেন। আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছেন বিশ্বের বিস্ময় মাথা উঁচু করে এগিয়ে চলা বিশ্বদরবারে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিত আজকের উন্নয়নশীল বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শিতাতেই আমরা কোটি কোটি মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু পেয়েছি। মেট্রোরেলসহ অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে।

বর্তমানে দেশে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা পাঁচটি। সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ৩৭টি। সামরিক বাহিনী পরিচালিত মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে ছয়টি। এবার নির্মাণ করা হলো স্বাস্থ্য খাতের বিস্ময়কর অর্জন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয় সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই উন্নয়নশীল বাংলাদেশ একদিন উন্নত বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে।

সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল নিয়ে কেন আমরা এতটা আশাবাদী, এত আলোচনা, এবার সেই প্রসঙ্গে কিছু বলতে চাই। জনগণের জন্য বিশ^মানের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকল্পে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা কার্যক্রমের যাত্রা শুরু ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, একনেকে এই হাসপাতালের প্রকল্প অনুমোদনের মাধ্যমে। দেড় হাজার কোটি টাকার এই হাসপাতালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থের জোগান রয়েছে।

এই হাসপাতালের রয়েছে ৯টি ফ্লোর, ৩টি বেজমেন্ট। ৭৫০ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালে আছে ১০০টি আইসিইউ বেড, ১০০টি ইমার্জেন্সি বেড। আইটি বেইজড মাল্টি ডিসিপ্লিনারি স্পেশালাইজড হেলথকেয়ার সার্ভিস প্রদানকারী এই হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল সেন্টার, কার্ডিও অ্যান্ড সেরেব্রো-ভাসকুলার সেন্টার, হেপাটোবিলিয়ারি অ্যান্ড লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেন্টার, কিডনি ডিজিজেস সেন্টার, ম্যাটার্নাল অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ কেয়ার সেন্টারে সমৃদ্ধ হাসপাতালে রয়েছে ১১টি মড্যুলার অপারেশন থিয়েটার।
 
ভিভিআইপি, ভিআইপি কেবিনসহ রয়েছে আইসোলেটেড কেবিন, ওয়ার্ড, এসআইসিইউ, এনআইসিইউ, পিআইসিইউ, সিসিইউ, এমআইসিইউ ইত্যাদি। এর সঙ্গে রয়েছে বিশে^র সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি, প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ উন্নত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবল।

শতভাগ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এবং অত্যাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে মেগা হসপিটাল ইনফরমেশন সিস্টেমসমৃদ্ধ এই হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসাসেবার সব সুযোগ-সুবিধাসহ রোগী ও তাদের স্বজনদের (অ্যাটেনডেন্ট) প্রয়োজনীয় অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও হাসপাতালের মধ্যেই রয়েছে। রোগীদের হাসপাতালে অবস্থানকালে তার দৈনন্দিন প্রয়োজনে কোনো কিছুর জন্য যাতে হাসপাতালের বাইরে যেতে না হয় সে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

এক কথায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের জন্য একটি বিস্ময়কর হাসপাতাল। আবার এই হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যয়ও রাখা হয়েছে মানুষের সামর্থ্যরে মধ্যে। আমাদের লক্ষ্য স্বল্প ব্যয়ে সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসাসেবা প্রদান। কারণ এই লক্ষ্য পূরণ করতে পারলে বঙ্গবন্ধুর আত্মা শান্তি পাবে বলে দৃঢ়বিশ্বাস।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় দিন দিন আরও এগিয়ে যাবে। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নকাজ চলমান রয়েছে। গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। করোনা মহামারি মোকাবিলায় বিরাট সফলতা দেখিয়েছে জাতির পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত এই মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়। করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা এবং করোনাভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট নির্ধারণের একাধিক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। ২০ হাজার লিটার ধারণক্ষমতার অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। বন্ধ টিএসসি চালু করা হয়েছে। নন রেসিডেন্ট ছাত্রছাত্রীদের মাসিক ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইমার্জেন্সি ল্যাব চালু করা হয়েছে। সাধারণ জরুরি বিভাগ চালু করা হয়েছে। হেলথ কার্ড চালু করা হয়েছে। বিভিন্ন বিভাগে বিশেষায়িত ইউনিট, ডিভিশন ও বিশেষ বিশেষ ক্লিনিক চালু করা হয়েছে।

প্রতি বছর গবেষণা দিবস উদযাপন করা হচ্ছে। আগামী ২৭ অক্টোবর এই গবেষণা দিবস উদযাপন করা হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে গবেষণা অনুদান প্রদান অব্যাহত রয়েছে। বিশে^র বিভিন্ন দেশের বিশ^বিদ্যালয়ের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পিএইচডি ডিগ্রি চালু করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু চেয়ার চালুর কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ইনস্টিটিউশনাল প্রাকটিস চালু, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের বাসভবন নির্মাণ, বেতার ভবনে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল-২ নির্মাণ, কার্ডিওভাসকুলার, চর্ম ও যৌন, কমিউনিটি অফথালমোলজি ইনস্টিটিউট স্থাপন, বঙ্গবন্ধু রিসার্চ সেন্টার স্থাপন, বিশুদ্ধ পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, আরও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বাস্তবায়ন করা ইত্যাদি পরিকল্পনা যত শিগগির বাস্তবায়ন করা হবে।

পরিশেষে বলব, বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন, রক্ত দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শুধু নিজের জীবনই দেননি তাঁর পরিবারের সদস্যরা, আত্মীয়স্বজনরা জীবন দিয়েছেন, রক্ত দিয়ে গেছেন। আমরা বঙ্গবন্ধুর এই ঋণ কোনোদিন শোধ করতে পারব না। তবে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে পারি। আর এটা বাস্তবায়ন করতে পারলে সেটা হবে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধা নিবেদন।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। আজ ১৪ সেপ্টেম্বর ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে উদ্বোধন হবে স্বাস্থ্যসেবা খাতের বিস্ময়কর অর্জন সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল। এজন্য বিশ্বনেতা, মানবতার জননী, দেশরত্ন শেখ হাসিনার প্রতি রইল আমার সশ্রদ্ধ সালাম ও চিরকৃতজ্ঞতা।

সফল হোক, সার্থক হোক, সুন্দর হোক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের নতুন পথচলা। আরও এগিয়ে যাক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়। পূরণ হোক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বাস্থ্য খাতের স্বপ্নসমূহ। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয় চিরজীবী হোক।

লেখক: অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ; এবং কোষাধ্যক্ষ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়।