৫০ বছরেও নির্মাণ হয়নি সেতু, ঝুঁকিতে নদী পারাপার শিক্ষার্থীদের

প্রকাশ | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১:৫৩ | আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:২৬

আল-কারিয়া চৌধুরী, জয়পুরহাট

যুগের পর যুগ পেরিয়ে গেলেও জয়পুরহাট সদর উপজেলার মুরারীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ঘাটে ৫০ বছরেও নির্মাণ হয়নি কোন সাঁকো বা ব্রিজ। তীরের এক প্রান্তে স্কুল আর অপর প্রান্তে তীরবর্তী গ্রাম। তাই কোনো সাঁকো বা ব্রিজ না থাকায় একটি মাত্র ডিঙি নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যাতায়াত করতে হয় কোমলমতি শিশুদের। এতে করে বর্ষা মৌসুম ও বৃষ্টি-বাদলের দিনগুলোতে স্কুলে উপস্থিত হতে না পাড়ায় লেখাপড়ায় ব্যাঘাত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 

এ ব্যাপারে বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ, তদবির আর অনুরোধ করেও কোনো ফল হয়নি বলে অভিযোগ করেছে শিক্ষার্থীদের অভিভাবক। 

সরেজমিন এলাকা ঘুরে জানা যায়, ১৯৭০ সালে স্থাপিত হয় জয়পুরহাট সদর উপজেলার মুরারীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তুলশী গঙ্গা নদীর কোল ঘেঁষে পূর্ব তীরে রয়েছে স্কুলটি। স্কুলের পূর্ব দিকে আমদই ইউনিয়নের মুরারীপুর, পাইকর, রাংতা, গোপালপুর, ঘোনাপাড়া, সুন্দরপুর, আর পশ্চিম দিকের পুরানাপৈল ইউনিয়নের পাইকপাড়া, গোবিন্দপুর ও গঙ্গা দাশপুরসহ ১৫টি গ্রাম থেকে আসে বিভিন্ন শ্রেণিতে অধ্যয়নরত প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী। তুলশী গঙ্গা নদীটি আগে তেমন খরস্রোতা ছিল না, ফলে শিক্ষার্থীরা খরা মৌসুমে বাঁশের সাঁকো ও ডিঙি নৌকায় পার হতো। 

কিন্তু নদীটি পুনঃখনন করায় নদীর গভীরতা ও স্রোতের তীব্রতা বেড়ে যায়। এতে করে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা চরম ঝুঁকিতে পড়ে যায়।  লেখাপড়া বিঘ্নিত হওয়ার ভয়ে চরম ঝুঁকিতে থাকার পড়েও স্কুলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

আমদই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহানুর আলম সাবু ও পুরানাপৈল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম সৈকত বলেন, এই ১৫টি গ্রামে প্রায় ১৬ হাজার মানুষ বাস রয়েছে। সবচেয়ে বেকায়দায় পড়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। রাতে জরুরি যোগাযোগ দুরূহ হয়ে পড়ে। তাই এখানে একটি ব্রিজ হলে এ দুটি ইউনিয়নের ১৫ গ্রামের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হবে। স্বাধীনতার পর এসব গ্রামে জনবসতি গড়ে ওঠে বলে এই জনপ্রতিনিধিরা জানান। 

মুরারীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আনিকা খাতুন বলে, ছোট একটি ডিঙি নৌকায় স্কুলে আসতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়।  অনেক সময় নৌকা থেকে নদীতে পড়ে বই-খাতা ভিজে যায়। বর্ষার সময় অনেকেই স্কুলে আসতে পারে না। 

চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী জেমি, পঞ্চম শ্রেণির রিয়াদ ও ওমর ফারুকসহ অনেক শিক্ষার্থী জানায়, যারা সাঁতার জানে না নদী পার হতে তারা খুব ভয়ে থাকে। আমরা যারা সাঁতার জানি অনেক সময় নদীতে পড়ে গিয়ে কাপড় চোপড় ভিজলে আর স্কুলে যাওয়া হয় না। 

পাইকপাড়া গ্রামের শিক্ষার্থীর অভিভাবক রেজুয়ান হোসেন, মেহেদী হাসান, সেলিনা বেগম বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েদের যখন স্কুলে পাঠাই আমরা তখন অনেক চিন্তায় থাকি, কারণ তাদের ডিঙি নৌকায় পার হতে হয়। গোবিন্দপুর গ্রামের ফারজানা আক্তার নামের আরেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক খাদিজা বেগম বলেন, অনেক সময় আমরা নিজেরা গিয়ে নৌকা দিয়ে পার করে স্কুলে দিয়ে আসি। সন্তানরা বাড়িতে না আসা পর্যন্ত  উৎকন্ঠায় থাকি।  এছাড়াও একটি মাত্র নৌকা থাকায় নৌকার অপেক্ষায় রোদের মধ্যে শিশুদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। নদী পার না হলে ৪-৫ কিঃমিঃ দূর দিয়ে ঘুরে স্কুলে যেতে হয়।  বাধ্য হয়ে নদী পার হতে হয়।

স্কুল কমিটির সভাপতি মেহেদী হাসান বলেন, বর্ষা মৌসুমে শিশুদের স্কুলে যেতে খুবই অসুবিধা হয়। এ সময় উপস্থিতি একেবারেই কমে যায়। তিনি স্কুলের কাছে একটু সেতু দাবি করেছেন।  তাহলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়বে।  এ অঞ্চলের মানুষের চলাফেরায় সুবিধা হবে। 

মুরারীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্রী প্রণব চন্দ্র মন্ডল বলেন, ব্রিজ ছাড়া নদী পারাপারের এমন দুর্ভোগ নিয়ে পঞ্চাশ বছর ধরে ভুগছে এই বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। এছাড়া এখানকার সাধারণ মানুষজনকে সব সরকারি বা অন্যান্য দাপ্তরিক কাজের জন্য এই ডিঙি নৌকায় যাওয়া আসা করতে হয়। ১৫টি গ্রামের মানুষের ওই একটি ডিঙি নৌকায় ভরসা। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিনয়ের সাথে ব্রিজ নির্মাণের আবেদন জানাচ্ছি। 

জয়পুরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরাফাত হোসেন বলেন, সদর উপজেলার আমদই ইউনিয়নের অন্তর্গত মুরারীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ডিঙি নৌকায় যাতায়াত করছে। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ছিলাম। আশা করি খুব শিগগিরই সেখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। 

(ঢাকাটাইমস/১৫সেপ্টেম্বর/এসএ)