২৯টি বই ও ভারত থেকে কী পেলাম

অধ্যাপক ড. ফরিদ আহমেদ
| আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:৫০ | প্রকাশিত : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:৪৮

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শুরুর আগে থেকেই রাজনীতিবিদের কাছ থেকে নানা প্রশ্ন আমরা শুনছিলাম। সফলতার সঙ্গে সফর শেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে আসার পর প্রশ্ন- ভারত থেকে কী পেলাম? বিরোধী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি এমন প্রশ্ন করেছিল। আর পথে ঘাটে নাগরিকের প্রশ্ন ছিল- কেন ভারতকে ইলিশ দিলাম?

আসলে ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা কী? সহজ উত্তর- প্রতিবেশী রাষ্ট্র। ১৯৭১ সালে ভারতের নাগরিক ও সৈন্যরা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় লড়াই করে প্রাণ দিয়েছে। যখন আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার ছিল শুন্য তখন তারা দিয়েছে ডলার। সুতরাং তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক রক্তের বন্ধনে বাধা। সেই বন্ধন অটুট থাকবে সেটা আমাদের সকলের প্রত্যাশা।

এভাবে যদি ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ককে দেখি তাহলে কেন প্রশ্ন ইলিশ দিলাম কিংবা কেন প্রশ্ন ভারত থেকে কী পেলাম? কেন বা প্রত্যাশা ভারত কিছু দেবে, যখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন? আমরা কী দিয়েছিলাম যখন মোদি বাংলাদেশ সফর করেছিলেন? আর মোদিকে ভারতের জনগণ কি প্রশ্ন করেছিল যখন তিনি বাংলাদেশ সফর করে ভারত ফিরে গিয়েছিলেন?

অনেকেরই প্রশ্ন: আমাদের অনেকেই এক টুকরো মাছ খেতে পায় না সেখানে কেন এভাবে প্রোটিন রপ্তানি। ভারত থেকে একসময় গরু আসতো। সেগুলো আসতে ওরা বাধা দিতো, সফর নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শেষ না হতেই সীমান্তে হত্যাকাণ্ড! আশাব্যাঞ্জক খবর না থাকলেও হত্যার ঘটনা সকলকে হতাশ করেছে। ভারত কি তবে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে চিরদিনের বন্ধু আওয়ামী লীগ তথা বাংলাদেশ থেকে। পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ, চালের উপর ট্যাক্স বসানো, কথা দিয়ে ভ্যাকসিন রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা, রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে জোরালো অবস্থান গ্রহণ না করা এবং মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব আব্দুল মোমেনের বক্তব্য কি এই সিগন্যাল দেয় যে ভারত বাংলাদেশের সরকার পরিবর্তনে প্রভাবকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে?

ভারতে এখন মোদি সরকার। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক সবচেয়ে ভালো। সেই বিবেচনায় বিএনপি-জামায়াত ভেবেছিল, ওই পরিবর্তনের ছোঁয়া বাংলাদেশে পড়বে। কিন্তু মোদি দ্বিতীয় দফায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়ে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সরকারকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে আসছে। সেই সমর্থনে কি তবে ভাটা পড়েছে? কলকাতার বুদ্ধিজীবীরা নাকি চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে উদ্বিগ্ন। ভারতের মোদি সরকার আওয়ামী লীগকে কি আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না? সেই শঙ্কা কি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সফরে দূর হয়েছে?

আমরা বেশ কিছু দিন ধরে বিএনপিকে যুক্তরাষ্ট্রের তোষামোদি করতে দেখছি। বাইডেন প্রশাসনকে কি তারা বোঝাতে চায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ? গুম, মানবাধিকার বিষয়ে জাতিসংঘের কাছে তুলে ধরে তারা সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করে আসছে। জাতিসংঘও আওয়ামী লীগের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। তবে সেসব প্রচারণা আন্তর্জাতিক মহলকে কি বিভ্ৰান্ত করতে সফল হয়েছে? এমন সব প্ৰশ্ন যখন ঘুরপাক খাচ্চে তখন বিদেশ থেকে বন্ধুরা টেলিফোনে বাংলাদেশের অবস্থা জানতে চেয়েছে। তাদের আমি বলেছি- রাজনীতিতে অনুকরণের মূল্য তেমন নেই। বঙ্গবন্ধুকে জিয়া অনুকরণ করে জনপ্রিয় হওয়ার চেষ্টা করতেন। ২০০৭ সালে জাতিসংঘকে প্রভাবিত করে সামরিক শাসন এড়াতে আওয়ামী লীগ সফল হয়েছিল যখন বিএনপির কাছ থেকে নানাভাবে সেনাদেরকে ক্ষমতা দখলের উস্কানি ছিল।

বিশ্ব দরবারই নয়, বাংলাদেশের জনগণের ভরসা এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারা নানা দুর্নীতি, নিপীড়ণের শিকার হলেও শেষ বিচারে তারা মনে করে আওয়ামী লীগ যা করতে পারে বা করে তার ধারের কাছেও বিএনপি করে না। তাদের নেতা বিদেশে থেকে রাজনীতি করছেন। সেটা বাংলাদেশের জনগণ মেনে নেয়নি। সুতরাং বিএনপির প্রতি এখনই আস্থার জায়গা খুঁজে কেউই পায়নি।

বিদেশিদের কাছে প্রচারণা করে কিছু জনকল্যাণ বিএনপি করতে সমর্থ হয়েছে। সরকার গুম, মানবাধিকার বিষয়ে নড়েচড়ে বসেছে। এরই মাঝে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য যাবেন। এই সফর বাংলাদেশের জন্য কী সংবাদ বয়ে আনবে জানা যাবে খুব শিগগিরই। তবে আপাতভাবে মনে হয় বিএনপি রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টিতে ব্যস্ত। সরকার তাদেরকে আরেকটু জায়গা দিতে চায়। আর সে জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আন্দোলন করতে সমর্থন দিয়েছেন। তবে সেই সমর্থনকে কাজে লাগাতে পারবে বলে মনে হয় না। বিএনপিকে আরও সংগ্রাম করতে হবে। বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালালেও জনগণ আশাবাদী। সত্যিকার পরিবর্তন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগই আনবে- যেভাবে তারা দেশের স্বাধীনতা এনেছে- উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভারতের ব্যবসায়ীদেরকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের কথা বলেছেন। যেখানে কিছু টাকা হলে একজন মানুষ দেশে ছেড়ে চলে যাচ্ছে। পাচার হয়ে যাচ্ছে মেধা-টাকা। সেই পাচার রোধ না করে কেন সরকার বিদেশি পুঁজির আমন্ত্রণ করছে সেটা বুঝতে পারছি না। কেনই বা বিশ্বব্যাংকের দুয়ারে ঘুরছে অথবা চীনের ঋণের ফাঁদে পড়ছে?

কেন সরকার চিন্তা করে না মানুষ মাতৃভূমি ছেড়ে বিদেশ চলে যায়? সহজ উত্তর দেশ বসবাসের উপযোগী নয়। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবাতে জনগণ কোনো ভরসা পায় না। আর সেই ভরসার জায়গাটি সরকার সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছে।

যদিও সরকার বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ করেছে। আমার প্রশ্ন- তবে কি চিকিৎসা নিতে এমপি-মন্ত্রীরা আর বিদেশ যাবেন না? যদি তারা বিদেশ না যান তবে জনগণ ভরসা পাবে। বিশ্বাস ফিরে আসবে? শুধু ভবন নির্মাণ আর যন্ত্রপাতি আনলেই হবে না- সেখানে যে মানুষগুলো কাজ করবে তারা হবেন সৎ। সেখানেই রয়েছে অন্ধকার। সেই অন্ধকারে আলো জ্বালাতে ভালো মানুষ খুঁজতে হবে।

দ্বিতীয় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিরাপত্তা। দেশের একটি শহর নেই যেখানে একজন ভালো শিক্ষক আছে বা একজন ভালো ডাক্তার আছে যার কাছে বিশ্বাস করে সপে দিতে পারে নিজের সন্তান বা নিজের চিকিৎসাকে। এখানে একটি দুষ্ট চক্র আছে। তারা আপনাকে শান্তিতে থাকতে দেবে না। সেই জায়গাটির কথা বারবার সরকারকে বোঝাতে চাই আমার নানা লেখার মাধ্যমে।

আমি বিগত ২২ বছর দুটি বিশ্বসেরা শহর মেলবোর্ন ও সিডনিতে বসবাস করেছি। মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর গবেষকদের সঙ্গে বিগত ১৬ বছর থাকছি, গবেষণা করছি, বিশ্বের সেরা গবেষকদের সঙ্গে কথা বলছি, তাদের লেখা পড়ছি অথবা তাদের লেকচার শুনছি এবং বারবার সেই লব্ধ জ্ঞানকে বিস্তৃত করছি আমার দেশের বেলায়।

আগেও লিখেছি নাইন-ইলেভেন আমার চিন্তায় মস্তবড় পরিবর্তন এনেছে। বিদেশিরা আমাদের কতটা ভালোবাসে সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। তার পরেও আমরা নিরাপদ মনে করে সেই বিদেশ পাড়ি দিচ্ছি? কিন্তু কেন? কারণ তারা যা দিতে পারে আমরা তা পারি না। আমাদের আজ সম্পদের অভাব নেই। আমাদের মানুষের আছে হাজার হাজার কোটি টাকা। তারা বিদেশে সেই টাকা পাচার করে নিয়ে যায়। কারণ সে এ দেশকে নিরাপদ মনে করে না।

উন্নত বিশ্বের সরকারদের গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ নগরের নিরাপত্তা। একটি বাংলাদেশের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দেশের একজন ধনী ব্যক্তি চাইলেও বাস্তবতা এমন যে সন্তানকে লালন পালন করতে ড্রাইভারের উপর ভরসা করতে হয়। সে ভয় পায় তার সন্তানকে এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যারা বিদেশ থেকে ভালো পড়াশোনা করে আসেন তারা নানাভাবে নিপীড়িত। সেই নিপীড়ণের বিষয়টি আমলে না নিয়ে দুষ্ট লোকেদের প্ররোচনায় বিদেশে যারা উচ্চশিক্ষায় যাবেন তাদেরকে পদত্যাগপত্র দিয়ে যাবার পরামর্শ দিচ্ছেন একটি মহল । আবার বিদেশ থেকে শিক্ষক আমদানির কথাও বলছেন। আমাদের উপাচার্যরাও সন্তানদেরকে বিদেশে পাঠান, তাদের পড়শোনা খরচ জোগাতে হুন্ডি করে টাকা পাঠান বলে জনশ্রুতি আছে। এমনকি তাদেরকে সেখানে বসবাসের ঠিকানা খুঁজতে বলেন। অথবা নিজেও বিদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে বসে আছেন।

কিন্তু কেন? কারণ ওই নিরাপত্তা। এখানে টাকা থাকলেও ভালো শিক্ষা বা ভালো স্বাস্থ্যসেবা পাবেন এমন গ্যারান্টি নেই। তেমনি নেই নিরাপত্তার গ্যারান্টি। কেবল দেশত্যাগীদেরকে দোষ দিলেই চলবে না। দুষ্টর দমন না করে তাদের লালন পালন করছে আমাদেরই মাঝে বসবাসকারী একটি মহল। দেশের সকল উন্নয়ন ধ্বংস হয়ে যাবে যদি সরকার নিরাপত্তা নিয়ে না ভাবে। দেশের ভেতর ভালো নিরাপত্তা ব্যবস্থা করে দিন- কেউই বিদেশ টাকা পাচার করবে না বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বা আমার মতো অনেকে আছেন বিদেশ ছেড়ে দেশে আছি- বিদেশে আমি একটি গাড়ি কিনতে পারি ২০ লাখ টাকায়, সেই গাড়ি কিনতে আমাকে দিতে হবে ৪৫ লাখ টাকা। বিদেশে আমি বাড়ি কিনতে গেলে দেয়া লাগবে ৫ শতাংশ টাকা, সেখানে আমাকে দিতে হবে অনেক অনেক বেশি। আমার কর্মস্থলে যেতে আসতে আমার দিন ও শক্তি শেষ। এই রকম একটি অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। দেশত্যাগীদের থাকতে হবে দেশপ্রেম। আমাদের এগুলোতে এখনো অভাব আছে। সেটার অন্যতম কারণ সত্যিকার মেধাবী ও দেশপ্রেমীদের মর্যাদা না দেয়ার প্রবণতা। আশা করি সকলে বিষয়টি নিয়ে ভাববেন।

আমাদের আরেকটি প্রবণতা, তথ্য যাচাই না করে কথা বলা। তিনি কি আসলেই ২৯টি বই কিনতে সুপারিশ করেছিলেন? আমার জানতে ইচ্ছে হলো। সামান্য একটু পরিচয় ছিল। তাই চলে গেলাম। দেখাও হয়ে গেল। একটি ভালো উদ্যোগের মৃত্যু হলো বলেই গিয়েছিলাম। জানলাম ভেতরের কাহিনি। আমরা শিক্ষকরা অনেকেই না জেনে অনেক কিছু বলি। তার নতুন একটি প্রমাণ ২৯টি বই কেনার সমালোচনা। উদ্যোগটিকে স্বাগত জানিয়ে সমালোচনায় মুখর হওয়া যেত কি?

২০০৮ সালের কথা। তখন অর্থনৈতিক মন্দা বিরাজ করছে অস্ট্রেলিয়াতে। তখন তারা সিদ্ধান্ত নিল, প্রতিটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একটি লাইব্রেরি করবে এবং বিদ্যালয়গুলো সংস্কার করবে। তাতে করে অর্থনীতি সচল থাকবে, উন্নয়ন হবে এবং কর্মসংস্থান হবে। ২৯টি বই কেনাকে আমাদের স্বাগত জানানো প্ৰয়োজন ছিল। দেশে এখন বেশি হয় দোয়া মাহফিল বা ওয়াজ মাহফিল। সেই সময় পাঠাগার সম্প্রসারণের চিন্তা থেকেই বই কেনা প্রকল্প। আশা করি সরকার শিক্ষার বিস্তারে বই কেনার প্রকল্প আরও প্রশস্ত ও দীর্ঘ করবেন। জ্ঞান নির্ভর সমাজ গড়বার প্রত্যয় হোক আগামী নির্বাচনী শ্লোগান।

পত্রিকা থেকে জানতে পারলাম- পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বাংলাদেশের দেয়া ত্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছে। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে বিবেচনায় এই ফেরত দেয়া। আসলেই কি তাই? জানবার বাকি আছে। পাকিস্তানের কাছে আমার দাবি আছে- আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার ভাগ কবে তারা বুঝিয়ে দেবে? দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদরা সহিংসতার পথ ছেড়ে এই বিষয়টির প্রতি মনোযোগ দেবেন কি? আমাদের ন্যায্য পাওনাগুলোকে আদায় করতে পারলে কারো কাছে পুঁজির জন্য ধর্ণা দিতে হবে না। যারা আমাদের সম্পদের লুণ্ঠন, শোষণ, নিপীড়ন ও হত্যায় লিপ্ত ছিল, বাংলাদেশকে তাদের কলোনি বানিয়ে রেখে তাদের আশীর্বাদে থেকে বিএনপি কিভাবে দেশের কল্যাণ করবে? গোলামীর প্রবণতা থেকে মুক্ত হয়ে আসুন দেশসেবায়। আমলা বন্ধুদেরকে বলি, জনগণের উপর ট্যাক্স চাপিয়ে দিয়ে নয়, সুষম বন্টনের নীতিমালা প্রবর্তন করুন। দেশ থেকে তাহলে মেধা ও অর্থ পাচার হবে না। মেধা ও অর্থ পাচারের দায়ভার কেবল রাজনীতিবিদদের উপর চাপালে চলবে না। আপনারা যেমন ৩০ লাখ টাকা নিচ্ছেন, রাজনীতিবিদদেরকে যেভাবে শুল্কমুক্ত গাড়ি দিচ্ছেন, তেমনি আপনার জনগণের কথাও আপনাদের ভাবতে হবে।

কেবল আপনাদের সাহিত্য প্রতিভা বিকাশে কিংবা আপনাদের যোগ্যতা ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে অর্থ যোগান দিলেই উন্নয়ন হবে না- বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও একটু নজর দিন।

এক গ্রাম্য শিক্ষক একদিন পাঠদান শেষে একটি ইলিশ মাছ কিনে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে এক মোড়ল ফোড়ন কেটে বলেছিলেন- মাস্টার সাহেবও দেখি ইলিশ মাছ কেনে? সেই মাস্টারদের অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে কি? সরকারি অফিসে গিয়ে দেখা যায় জুনিয়ররা দাঁড়িয়ে কথা বলেন। কিন্তু কেন? কেন কথায় কথায় স্যার বলতে হয়? তাদেরকে সন্মান দিন। দেশকে বদলাতে আগে নিজেকে বদলাতে হবে।

হ্যা, শেষ সইটা রাজনীতিবিদ করেন। তবে আপনি কিন্তু দায় এড়াতে পারেন না। জনগণের উপর থেকে করের বোঝা কমিয়ে জনজীবনে শান্তি ফিরিয়ে আনুন। মানুষ কষ্টে আছে, তাদের কষ্ট বুঝতে চেষ্টা করবেন কি? শুধু নিজের শিক্ষককেই কদমবুছি করে দায় সারবেন না। সকল শিক্ষককেই সালাম দিন। ইলিশ রপ্তানির আগে ভাবুন আপনার সকল নাগরিক এক টুকরো মাছ খেতে পারল কিনা। বঙ্গবন্ধু যেই সোনার বাংলা চেয়েছিলেন, আমরা সেই গন্তব্যে যেতে পারছি কি?

লেখক: অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :