কাজে আসছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লাইব্রেরি, সরকারি অর্থ লোপাট

মোস্তফা কাদের, বরগুনা
 | প্রকাশিত : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৩:৪২

বই, পুস্তিকা ও অন্যান্য তথ্য সামগ্রির একটি সংগ্রহশালা হলো লাইব্রেরি, গ্রন্থাগার বা পাঠাগার। যেখানে শিক্ষার্থী বা পাঠকের প্রবেশাধিকার থাকে এবং তারা পাঠ, গবেষণা কিংবা তথ্যানুসন্ধান করতে পারেন। অথচ এমনটা হওয়ার কথা থাকলেও বরগুনার বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখন শুধুমাত্র নামে আছে লাইব্রেরি। প্রতিষ্ঠানগুলোতে লাইব্রেরিয়ান পদে নিয়োগপ্রাপ্ত লোক থাকলেও দেখভাল করার কেউ নেই বললেই চলে।

বেতাগীতে মাধ্যমিক ও কলেজ শাখা মিলিয়ে প্রায় ৩৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লাইব্রেরিয়ান থাকলেও শুধুমাত্র নামে আছে লাইব্রেরি। এক প্রকার বসে বসেই বেতন নিচ্ছেন লাইব্রেরিয়ান পদে কর্মরত ব্যক্তিরা। সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলেও শিক্ষার্থীদের কোনও কাজেই আসছে না এসব লাইব্রেরি।

সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, অযত্নে, অবহেলায় পড়ে আছে অধিকাংশ বিদ্যালয়ের লাইব্রেরি। কাজ না করেই বসে বসে বেতন নিচ্ছেন লাইব্রেরিয়ানরা।

সদ্য এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একটি বেতাগীর সবুজ কানন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। যেখানে লাইব্রেরির কোন অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এদিকে বেতাগী সদরে অবস্থিত বেতাগী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ। যেখানে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার নামে একটি তালাবদ্ধ কক্ষ থাকলেও নেই লাইব্রেরির জন্য নির্দিষ্ট কক্ষ কিংবা শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণের জন্য কোনও রেজিষ্টার। বিবিচিনি স্কুল অ্যান্ড কলেজে নামে মাত্র লাইব্রেরি আছে কিন্তু নেই কোনও কার্যক্রম।

এ ছাড়াও বেতাগী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে লাইব্রেরিয়ান থাকা সত্ত্বেও লাইব্রেরি থাকে তালাবদ্ধ। হোসনাবাদ আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লাইব্রেরিয়ান পদে থাকা ব্যক্তি লাইব্রেরির কার্যক্রম পরিচালনা না করে বরং শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করান। মোকামিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লাইব্রেরি না থাকলেও লাইব্রেরিয়ান আছে। তবে সেও পাঠদান করান।

স্থানীয়রা জানান, এ সকল বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে লাইব্রেরি শুধু নামেই এর কোন ধরনের কার্যক্রম নেই। অধিকাংশ বিদ্যালয়ে লাইব্রেরির জন্য নেই নির্দিষ্ট কোন কক্ষ। বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ে গেলে লাইব্রেরির কক্ষ তালাবদ্ধ থাকলেও চাবি খুঁজে পাননি কর্তৃপক্ষ।

অভিযোগ রয়েছে, লাইব্রেরির জন্য এসব প্রতিষ্ঠানে বরাদ্দ আসলে সেটি লাইব্রেরির খাতে ব্যয় করা হয় না। তা দিয়ে অন্য কাজ করা হয় কিংবা পুরো অর্থই লোপাট করা হয়। দীর্ঘদিন এসব লাইব্রেরি তালাবদ্ধ থাকায় পোকা-মাকড়ের ঘর হয়েছে।

বেশ কয়েকজন প্রতিষ্ঠান প্রধান বলেন, লাইব্রেরিয়ান দিয়ে ক্লাশ নেওয়া হয়। লাইব্রেরির কোন কার্যক্রম নেই। বড় বড় নেতাদের সুপারিশে লাইব্রেরিয়ানদের চাকরি হয়। তাদের যদি কিছু বলতে যাই তাহলে উল্টো আমাদের সমস্যা হয়।

বেতাগী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. রফিকুল আমিন জানান, বর্তমানে লাইব্রেরি নামে মাত্র। বড় স্কেলের বেতন পান লাইব্রেরিয়ানরা। কিন্তু স্থানীয় জটিলতা থাকায় তাদের দিয়ে কোন কাজ করানো সম্ভব হয় না।

এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা মো. শহিদুর রহমান জানান, প্রতিটি বিদ্যালয়ে লাইব্রেরির দিকে নজর দিতে নির্দেশনা দেওয়া হলেও তেমন কোন ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এজন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সুহৃদ সালেহীন জানান, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইব্রেরিকে সুন্দর করা এবং শিক্ষার্থীদের লাইব্রেরিমুখী করে গড়ে তোলার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৬সেপ্টেম্বর/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :