গ্রাহকের ৮০০ কোটি আত্মসাৎ

ফারইস্টের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে

প্রকাশ | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২০:০২

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

গ্রাহকের ৮০০ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলামের আরও এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

দুদিনের রিমান্ড শেষে শুক্রবার তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ আরও ১৩ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রশিদুল আলম তার এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে গত মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আহম্মেদের আদালতে তাকে  হাজির করে পুলিশ। এরপর শাহবাগ থানায় করা মামলায় তার বিরুদ্ধে ১৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। অপরদিকে আসামির পক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

একইদিন মামলার অপর আসামি কোম্পানিটির সাবেক পরিচালক ও শিল্পপতি এমএ খালেক এবং তার ছেলে রুবায়াত খালেককে আদালতে হাজির করা হয়। এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে ১৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। অপরদিকে আসামির পক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে দুদিন জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন।

গ্রাহকের ৮০০ কোটি টাকার বেশি আত্মসাতের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে চলতি মাসের শুরুতে শাহবাগ থানায় মামলা হয়। মামলার পর তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

জানা গেছে, বিমা গ্রাহকদের জমাকৃত ৮০০ কোটি টাকার বেশি আত্মসাতের অভিযোগে চলতি সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে শাহবাগ থানায় মামলায় দায়ের করে সিআইডি। মামলা নং ১৫(৯)২২। এরপর ১১ সেপ্টেম্বর রাতে গুলশানের বাসা থেকে নজরুল ইসলাম, শিল্পপতি আব্দুল খালেক ও তার ছেলেকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্রাহকের হাজার কোটি টাকা যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করে বিশাল সাম্রাজ্য গড়েছেন ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম। এই টাকায় ফ্লোরিডায় নিজেদের নামে প্রসাদসমান বাড়ি এবং নিজের ও স্ত্রীর নামে তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন। কিন্তু বিমার টাকা না পেয়ে প্রতিষ্ঠানটির হাজার হাজার গ্রাহক নিয়ন্ত্রক সংস্থার দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। মূল লুটপাট হয় ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে। এ সময়ে কোম্পানির লাইফ ফান্ড ও এফডিআর ভেঙে যুক্তরাষ্ট্রে বিশাল সাম্রাজ্য গড়েছেন ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম। দুটি জমি ক্রয় দেখিয়ে সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। আর বিমার টাকা না পেয়ে প্রতিষ্ঠানটির হাজার হাজার প্রাহক নিয়ন্ত্রকসংস্থার দ্বারে দ্বারে ঘুরছে।

এর সঙ্গে সাবেক অডিট কোম্পানির চেয়ারম্যান এমএ খালেকের সম্পৃক্ততা পেয়েছে এ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। এছাড়াও লুটপাটের সময় অর্থাৎ ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত কোম্পানিটির স্বতন্ত্র পরিচালক ছিলেন আইডিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন। এছাড়া গ্রাহকদের দাবি পরিশোধ না করাসহ নানা আর্থিক অনিয়ম খতিয়ে দেখতে চলতি বছরের জুন মাসে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএসইসি। তদন্তে অর্থপাচারের প্রমাণ মেলার পর দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন নজরুল।

অন্যদিকে তদন্তে অর্থ আত্মসাত ও পাচারের প্রমাণ পেয়ে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির পর্ষদ ভেঙে দেয় শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সরকারের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) প্রতিবেদনেও দুর্নীতির বিষয়টি উঠে আসে।

(ঢাকাটাইমস/১৬সেপ্টেম্বর/আরআর/ইএস)