চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যার বিচার কবে?

প্রকাশ | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৬:২৩ | আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৬:৪৯

আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস

চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার বিচার শেষ হবে কবে? দুই যুগ আগের এই চাঞ্চল্যকর হত্যার মামলার বিচার চলছে ঢাকা দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল-২ আদালতে। এতদিনে মাত্র মামলাটির স্বাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে মামলায় বাদী তার স্বাক্ষ্য শেষ করেছেন। পরে আরেকজনের স্বাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে।

ঘটনার শুরু ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর ভোর।  রাজধানীর বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে অবস্থিত ট্রাম্পস ক্লাবের নিচের দরজার সামনে উপুড় হয়ে পড়ে ছিল সোহেল চৌধুরীর দেহ। চারপাশ রক্তে ভেসে যাচ্ছে। রক্তের ছাপ শুরু হয়েছিল ক্লাবের সিঁড়ির সামনে থেকে।  

আশির দশকের মাঝামাঝি ঢাকাই চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় সোহেল চৌধুরীর। বিয়ে করেছিলেন আরেক জনপ্রিয় তারকা দিতিকে, যদিও পরে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। উপুড় হয়ে পড়ে থাকা শরীরটা তুলে পুলিশ তাকে নিয়ে গিয়েছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন হাসপাতালে আনার অনেক আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। সোহেল চৌধুরীর  বুকে মাত্র একটা গুলির চিহ্ন ছিল। ট্রাম্পস ক্লাবের নীচে সেইদিন সোহেল চৌধুরীর সঙ্গে থাকা আরো দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। ঘটনার প্রায় ২৪ বছর পর চলতি বছরের ৫ এপ্রিল রাতে ওই হত্যাকাণ্ডের চার্জশিটভুক্ত একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গ্রেপ্তার আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী  চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি।

গ্রেপ্তার অশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরীর বরাত দিয়ে র‌্যাব বলছে,  বনানীর যে ক্লাবের নিচে সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল, সেই ট্রাম্পস ক্লাবের যৌথ অংশীদার ছিলেন আশীষ রায় চৌধুরী। বোতল চৌধুরী একাধিক বেসরকারি এয়ারলাইনসের ঊর্ধ্বতন পদে কর্মরত ছিলেন। সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় তিনি একবার আদালত থেকে জামিন নিয়েছিলেন। বোতল চৌধুরীর বরাত দিয়ে র‌্যাব জানায়, ১৯৯৮ সালের ২৪ জুলাই ট্রাম্পস ক্লাবে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর বিভিন্ন ইস্যুতে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। এজন্য আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও বান্টি ইসলাম সোহেল চৌধুরীকে 'শিক্ষা দিতে' চান।

২৪ জুলাই  ছাড়াও কয়েকবারই সোহেল চৌধুরীর সঙ্গে ট্রাম্পস ক্লাবের অতিথি এবং কর্মীদের ‘গোলমাল’ হয়েছিল। ক্লাবটিতে ‘অসামাজিক কার্যকলাপ, নাচ গান, মদ্যপান’ করা হত। সোহেল চৌধুরী এসবের প্রতিবাদ করায় বোতল চৌধুরী, আজিজ মোহাম্মদ ভাই এবং বান্টি ইসলাম তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনকে দিয়ে তাকে হত্যা করানো হয়।

 

মামলাটি এখন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর সৈয়দ শামসুল হক বাদল ঢাকাটাইমসকে বলেন, এই মামলায় ইতোমধ্যে স্বাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে মামলার বাদী ও নিহত সোহেল চৌধুরীর ভাই তরিকুল ইসলাম চৌধুরী মামলায় স্বাক্ষ্য দেওয়া শেষ করেছেন।

মামলার নথি গায়েব, ১৫ বছর দীর্ঘায়িত কার্যক্রম: মামলায় অভিযোগ গঠন হবার পর বিচারের জন্য মামলাটি পাঠানো হয় ২ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে। কিন্তু মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একজন আসামি ২০০৩ সালে হাইকোর্টে একটি রিট করেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০০৪ সালে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুলসহ আদেশ দেয়। কিন্তু ২০১৫ সালের ৫ আগস্ট আদালত রুলটি খারিজ করে হাইকোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করার আদেশ দেয়।  এর ফলে মামলার বিচার কাজ চালাতে আইনি বাধা দূর হয়। কিন্তু সেই আদেশ আর নিম্ন আদালতে পৌঁছায়নি।

চলতি বছরের শুরুতে নতুন করে গায়েব নথি উদ্ধারে একটি রিট করা হয়, আর তারপরই নতুন করে শুরু হয় মামলার কার্যক্রম।

(ঢাকাটাইমস/১৯সেপ্টেম্বর/এএ/কেএম)