মোবাইল ফোন সার্ভিসিং: মোতালেব প্লাজায় এক দোকানের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ!

প্রকাশ | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৯:৪৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

রাজধানীর মোতালেব প্লাজার ‘আইফিক্স ফাস্ট’ নামে একটি মোবাইল ফোন মেরামতকারী দোকানের বিরুদ্ধে ভয়াবহ প্রতারণার অভিযোগ ওঠেছে। ফোন সার্ভিসিং করতে দিলে নতুন সমস্যা তৈরি করে দেওয়া, মোবাইলের পার্টস খুলে রেখে দেওয়াসহ নানা রকম  প্রতারণার তথ্য পাওয়া গেছে এই দোকানটির বিরুদ্ধে। তাদের এসব অভিযোগ নিয়ে এবার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন কয়েকজন ভুক্তভোগী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মোতালেব প্লাজার বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, আইফিক্স ফাস্ট নামক এই দোকানটি সরকারের ভ্যাট টেক্স ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন নামে বেনামে ১২টির বেশি দোকান চালাচ্ছে। একটি দোকান ছাড়া বাকি দোকানগুলোর ট্রেড লাইসেন্স নেই। তাদের বিরুদ্ধে কাষ্টমারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ থেকে শুরু করে নানা রকম প্রতারণার অভিযোগের অভাব নেই। এরপরও গায়েবি কারণে মার্কেট কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না।

এর আগেও গত বছর সরকারি একটি সংস্থা এসে ভ্যাট টেক্স ফাঁকি দেওয়াসহ নানা রকম অভিযোগের কারণে এদের শপ বন্ধ করে দিয়েছিল। এরপরও আবার কিভাবে চালু হলো তা জানা যায়নি। গত মাসেও এই দোকানের মালিক এক গ্রাহককে মেরে আহত করে দিয়েছিল। তখন তাদের কর্মচারীরা পুরো মার্কেটে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রণক্ষেত্রে পরিনত করেছিল। সেই সময় শাহবাগ থানা পুলিশ এসে মালিককে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এরপরও গ্রহকদের সঙ্গে নানা রকম ভয়ঙ্কর প্রতারণা অহরহ করেই যাচ্ছে।

সাঈদ শিমুল ইসলাম নামে এক ভুক্তভোগী জানান, গত ফেব্রুয়ারি মাসে আইফিক্স ফাস্টের সার্ভিস সেন্টারে সামস্যাং মডেলের একটি ফোনের টাচ সমস্যা নিয়ে যাই। তখন ফোনের টাচটি ঠিক করতে দিলে উল্টা ফোনটির ডিসপ্লে নষ্ট করে ফেলে। তখনও আমি তাদের প্রতারণা বুঝতে পারিনি। তখন ডিসপ্লে ঠিক করতে গিয়ে আমাকে অরিজিনাল ডিসপ্লে লাগিয়ে দিবে বলে তিন হাজার ২০০ টাকা নেয়। কিন্তু ডিসপ্লেটি ঠিক করে দেওয়ার পর দেখি ফোনের স্পিকার নষ্ট করে দিয়েছে। তখন বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে রাগারাগি হয়। সঙ্গে সঙ্গে অন্য আরেকটি দোকানে দেখালে জানতে পারি তাদের দেওয়া ডিসপ্লেটি নকল ডিসপ্লে দিয়েছে এবং ফোনের অন্যান্য পার্টস খুলে রেখে দিয়েছে। ঠিকই দুই মাস পর দেখি ডিসপ্লেটি নষ্ট হয়ে যায়। সেই সঙ্গে ফোনটাই একেবারে নষ্ট হয়ে যায়। তাদের এমন ভয়ঙ্কর প্রতারণা শিকার হয়েছি। তাদের এই প্রতারণা ও হয়রানিমূলক ব্যবসা বন্ধ করার কি কোনো আইন নেই দেশে? আমি এর বিচার চাই।

সিরাজাম মুনিরা নামে আরেক ভুক্তভোগী জানান,আমি মোতালেব প্লাজার এই দোকান থেকে আমার ওয়ান প্লাস মডেলের একটি ফোনের ডিসপ্লে পরিবর্তন করেছি। তারা আমাকে দুই ধরনের দুইটি ডিসপ্লে দেখায়। সেখান থেকে আমি আসল ডিসপ্লেটি সিলেক্ট করে দেই। সেই ডিসপ্লেটির দাম ১৫ হাজার টাকা নিয়েছে। ডিসপ্লেটি পরিবর্তন করার পর দেখি আমার আঙ্গুলের ছাপ নিচ্ছে না। তখন তারা আমাকে বললো, আপনি কিছুক্ষণ পর নিয়ে যান ফোনটা ঠিক করে রাখতেছি।

কিছুক্ষণ পর গিয়ে ফোনটা নিয়ে আসার সময় চেক করলে এই ভুক্তভোগী দেখেন ফোনে আবারও আঙ্গুলের ছাপ কাজ করে না। তখন টেকনিশিয়ান বলেন, নিয়ে যান, কিছুক্ষণ সময় লাগবে কাজ করতে। বাসায় এসে দেখি আঙ্গুলের ছাপতো কাজ করেই না, উল্টা ব্যাটারির চার্জও থাকে না। অন্যান্য অপশনও কাজ করছে না। সাধারণ একটা সমস্যা নিয়ে তাদের কাছে গেলাম। তারা উল্টা আমার ফোনটা আরও বেশি নষ্ট করে দিয়েছে। 

সালমান নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, তার ফোন হঠাৎ হ্যাং হয়ে যায়। দোকানটিতে ফোনটি নিয়ে গেলে তারা বললো, আমার ফোনের মাদারবোর্ড নষ্ট হয়ে গেছে। মার্কেটে দেখে মাদারবোর্ডটি এনে ঠিক করে দিতে হবে। একদিন হঠাৎ করে তাদের টেকনিশিয়ান মারুফ আমাকে ফোন দিয়ে বলে, আমার ফোনটি ঠিক করে দিয়েছে। ফোনের মাদারবোর্ড ঠিক করে দেওয়া বাবদ এখন সাড়ে চার হাজার টাকা দিতে হবে। তখন তার সঙ্গে আমার বাকবিতণ্ডা হয়। আমাকে টাকার বিষয়ে জিজ্ঞেস না করে এতো টাকা দিয়ে কেন ফোনটি ঠিক করতে দিয়েছে। পরে ওই টেকনিশিয়ান আমাকে বললো আপনি দুই  হাজার ২০০ টাকা দিয়ে ফোনটি নিয়ে যান। আমি ঠিক করে রেখেছি। ফোনটি বাসায় আনার পর দেখলাম ফোনের নেটওয়ার্ক আইসি, স্পিকার নষ্ট করে দিয়েছে। একইভাবে একটি আইফোনের ডিসপ্লে ঠিক করতে দিলে সেটির স্পিকার, কান্ট্রি লক এবং হোম বাটন নষ্ট করে দেয়। ফোন ঠিক করতে দিয়ে তারা এভাবে পার্টস নষ্ট করে দেয়। নতুন নতুন সমস্যা তৈরি করে আমাদের থেকে যেভাবে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সেটি প্রতারণা। সংশ্লিষ্টরা তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানাই। কারণ মোবাইল ঠিক করতে দিয়ে তাদের কাছে হয়রানির শিকার হতে হয় সবচেয়ে বেশি।

এসব বিষয়ে মোতালেব প্লাজা শপিং কমপ্লেক্সের সভাপতি কামরুল ইসলাম বলেন, আমি গত মে মাসে দায়িত্ব নিয়েছি। এ কয়েকদিনে তাদের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ৫-৭ টি গুরুতর অভিযোগ এসেছে। এর আগেও তাদের বিরুদ্ধে কাষ্টমারদের সাথে নানা রকম প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। এখন পর্যন্ত শপের মালিককে ডেকে বেশ কয়েকটি বিচার করেছি। তাদেরকে ওয়ার্নিং দেওয়া আছে। তাদের বিরুদ্ধে আর কোনো  অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নিয়ে মার্কেট থেকে বের করে দেওয়া হবে। কারণ, তাদের কারণে আমাদের পুরো মার্কেটটির বদনাম হচ্ছে। সবাই মোতালেব প্লাজাকে গালি দিচ্ছে।

সভাপতি বলেন, কয়েকদিন আগেও এক কাস্টমারের সঙ্গে তাদের বিশাল গণ্ডগোল। তাদের দোকানের যতো কর্মচারী আছে সবাই মিলে মার্কেটে রণক্ষেত্র তৈরি করেছে। তখন দোকানের মালিককে শাহবাগ থানা পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে এতো অভিযোগের পরও যখন তারা একই রকম কার্যক্রম করছে, দোকান মালিক সমিতির আরও যারা আছেন তাদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেবো।

(ঢাকাটাইমস/১৯সেপ্টেম্বর/কেআর/কেএম)