ত্রাণ নয় টেকসই বেড়িবাঁধ চান তারা
সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা। এই জেলায় ৮০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্ট রয়েছে ৩৫টি।
তবে জনপ্রতিনিধিরা বলছে সব চেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বুড়িগোয়ালিনী ইউপির দূর্গাবাটিসহ সব বেড়িবাঁধ পাউবোর মাধ্যমে মেরামত করা হয়েছে।
৬০ এর দশকে নির্মিত এই বেড়িবাঁধে বড় ধরনের কোন দুর্যোগ না হলে ভাঙার আশঙ্কা নেই।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, এখন বেড়িবাঁধকে অত্যাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বাঁধ রক্ষায় তারা সব সময় প্রস্তুত রয়েছে। আর স্থানীদের দাবি টেকসই বেড়িবাঁধ ।
জানা যায়, সাতক্ষীরা সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় জেলা। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নদী তলদেশ উচ্চ হচ্ছে। ফলে পানির উচ্চতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার কারণে নদী রক্ষা বেড়িবাঁধ ভেঙে লোনা পানিতে ডুবে যাচ্ছে উপকূলীয় এলাকার মানুষ। সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় ৬০ এর দশকে নির্মিত বেড়িবাঁধ রয়েছে ৮০০ কিলোমিটার। ৬০ দশকের পরে আর বেড়িবাঁধ সেভাবে মেরামত করা হয়নি। এবছর বেশির ভাগ বেড়িবাঁধ মেরামত করা হয়েছে। তারপরও ৬২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে জরাজীর্ণ অবস্থা। আবার এই জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধে ৩৫ টি পয়েন্ট খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
বুড়িগোয়ালিনি এলাকার আব্দুল মতিন, আমিনুর রহমান, নীলকান্ত, সঞ্জয় মন্ডল জানান, উপকূল এলাকার মানুষ ভাল নেই। আইলা, সিডর, আম্পানের মত প্রাকৃতিক দুযোগ মোকাবেলা করতে হয়েছে এই জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ দিয়ে। লোনা পানির কারণে তাদের এলাকায় হয় না কোন ফসল। নেই কোন কর্মসংস্থান। এর মধ্যে প্রতিবছর বেড়িবাঁধ ভেঙে লোনা পানি তাদের সব শেষ করে দিয়ে যাচ্ছে।
দূর্গাবাটি গ্রামের কাকুলি, উষারাণী তরফদার, মালতি, মলিনা রানী জানায়, কিছুদিন আগে তাদের এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। এই বেড়িবাঁধ ভেঙে ভেসে গেছে চিংড়ি ঘের, পুকুর, জমির ফসল। ভেঙে গেছে কাঁচা ঘরবাড়ি। এখনও তাদের পুকুরে নোনা পানি। ঘরে খাবার নেই। তারা সর্বস্ব হারিয়ে সরকারের দেওয়া ত্রাণ খেয়ে বেঁচে থাকে। তারা আর ত্রাণ চান না, তারা টেকসই বেড়িবাঁধ চান।
বুড়িগোয়ালিনি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জানান, সম্প্রতি খোলপেটুয়া নদীর দূর্গাবাটি ওয়াবদা বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা মিলিত হয়ে দ্রুত ভাঙন কবলিত এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে। ঝুকিপূর্ণ সব বেড়িবাঁধ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে মেরামত করা হয়েছে। বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দুযোগ না হলে বেড়িবাঁধ ভাঙার আশঙ্কা নেই। আর পানি উন্নয়ন বোর্ড বেড়িবাঁধ পর্যবেক্ষণ করছে।
শ্যামনগর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউল হক দোলন জানান, দূর্গাবাটি ভাঙন কবলিত এলাকা। এই এলাকায় প্রতিবছর বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। এবছর ভেঙে যাওয়ার সাথে সাথে পাউবো বেড়িবাঁধ মেরামত করে দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, বেড়িবাঁধ মেরামত করলে হবে না। উপকূলীয় এলাকায় মানুষের বসবাসের উপযোগী করতে হলে টেকসহ বেড়িবাঁধের বিকল্প নেই।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড- ১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের জানান, আইলার সময় যে পরিমাণ পানির লেবেল ছিল, এখন সাধারণ জোয়ারে সেই পরিমাণ পানির লেবেল থাকে। এখন বেড়িবাঁধকে অত্যাধিক গুরুত্ব দেওয়ায় পানি প্রবেশ করছে না। সারাক্ষণ বেড়িবাঁধকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এবছর একটি মাত্র পয়েন্ট ভেঙে গিয়েছিল। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন কবলিত এলাকা মেরামত করা হয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/২০সেপ্টেম্বর/এসএ)