‘প্রথম মা ডাক শুনে চিৎকার করে কেঁদেছিলাম’

মেহেরুন রুমা
| আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২২:৩৬ | প্রকাশিত : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২২:১৫
মেহেরুন রুমা ও মেয়ে সারাহ। ছবি: সংগৃহীত

মাতৃত্ব পৃথিবীর প্রতিটা মেয়ের কাছেই এক আরাধ্য ধন। কেউ পায় আবার কেউ পায় না। সারাহ, আমার সেই আরাধ্য ধন, আমার ভালোবাসার রাজকুমারী। প্রথম যেদিন ওর অস্তিত্বের খবর শুনি, খুশিতে আমি কেঁদে ফেলেছিলাম। তবে আমার চেয়েও বেশি খুশি হয়েছিলেন আমার মা। তার চোখেমুখে খুশির যে আলোকচ্ছটা আমি দেখেছিলাম তা রঙধনুর সব রঙকেও হার মানিয়েছিল। গর্ভকালীন প্রতিটা প্রহর কাটত এক অদ্ভুত আনন্দমাখা ভালোলাগায়। তারপর একদিন আমার কোল আলো করে সে আসে। অপারেশন থিয়েটারে প্রথম যখন মেয়েকে দেখি তখনই প্রথমবারের মতো উপলব্ধি করি মায়ের সঙ্গে সন্তানের অদৃশ্য মায়াময় ভালোবাসার বন্ধনটাকে।

দুনিয়ার সবকিছুর বদৌলতে আমার মেয়েকেই আমি চাই। আমার মেয়ে ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আমার ভালোবাসা। প্রথম মা ডাক শুনে চিৎকার করে কেঁদেছিলাম। কেঁদেছি আনন্দে। অন্যরকম আনন্দ। মনে হয়েছিল সবাইকে ডেকে বলি, দেখো কেউ একজন আছে আমার, একান্তই আমার। কেউ কখনো সেখানে ভাগ বসাতে পারবে না। তারপর একসময় সারাহ হাঁটতে শিখলো। এরপর পুরো ঘরজুড়ে দৌড়াতেও শিখে গেলো। তারপর শিখলো দুষ্টুমি করতে। এখন আমার মেয়ের বয়স চার বছর। সে আমাকে গল্প শোনায়। কত গল্প যে শুনি । গল্পের যেন শেষ নেই। তার গল্প বেশিরভাগই কাল্পনিক। অদ্ভুত ভালো লাগার একেকটি গল্প।

আমি একজন চাকরিজীবী মা। মেয়েকে একটা দীর্ঘ সময় নিজের কাছ থেকে দূরে রেখে আসতে হয়। সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হলো, ছয় মাসের মেয়েকে রেখে যখন প্রথমবার অফিসে আসি, আমি অফিসে এসে সারাহর জন্য কেঁদেছিলাম। কিন্তু বাসায় গিয়ে শুনি সে তেমন একটা কান্না করেনি। খাইয়ে দিলেই চুপচাপ ঘুমাতো। আমিসহ সবাই-ই অবাক হয়ে গিয়েছিলো। আর এখনতো আরো বড় হয়ে গেছে। আরো যেন বুঝদার হয়ে গেছে। অফিসে আসার সময় আমাকে সাবধানে থাকতে বলে। যদি কখনও আকাশে ঝড়-বৃষ্টি হয়, সে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে তার কচি হাত দুটি তুলে আল্লাহর কাছে বলে, যেন তিনি আমাকে নিরাপদে রাখেন। বৃষ্টিকে বলে তুমি এসো না, আমার মা ভিজে যাবে। বজ্রপাত (তার ভাষায় গুরুম) হলে সে বলে, তুমি আমার মাকে ভয় দেখিও না। একজন মায়ের প্রতি অবুঝ একটি শিশুর এই যে দুশ্চিন্তা এটা আমাকে আরো বেশি আত্মনির্ভরশীল হতে শেখায়, আরো বেশি সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা যোগায়। আমি ধন্য মা হতে পেরে, আমি আনন্দিত চমৎকার একটি শিশুকে পৃথিবীতে আনতে পেরেছি বলে।

মেয়েকে নিয়ে আরো অনেক না বলা কথা বলতে ইচ্ছে করে। যদি কখনও আবার সুযোগ পাই তো আরো অনেক কিছুই লিখবো তাকে নিয়ে। আমার মেয়েকে যেন যোগ্য মানুষ করে গড়ে তুলতে পারি, সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রতিনিয়ত একটাই প্রার্থনা।

(ঢাকাটাইমস/২০সেপ্টেম্বর/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :