ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে মাষকলাই ডাল
যুগ যুগ ধরে বাঙালি রসনায় ডালের কদর। খাওয়ার শেষ পাতে ডাল না হলে হয়তো অনেকেই তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে পারেন না। রুচিবদলে মাষকলাই ডালের মধ্যেও রয়েছে বৈচিত্র্য। স্বাদবর্ধক ফোড়ন দিয়ে রান্না করা এক বাটি মাষকলাইয়ের ডাল সত্যি তৃপ্তি এনে দেয়। মাছ-মাংস-সবজি—এসবের সঙ্গে এ ডালযোগে রান্না হয় উপাদেয়।
মাষকলাই ডাল অত্যন্ত সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর। মাষকলাই একধরনের ডাল জাতীয় শস্য। মাষকলাই উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম ভিগনা মুনগো। বাংলাদেশ এবং ভারতের মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয় এই মাষকলাইয়ের ডাল। এটি বিউলির ডাল বা উড়াড ডাল নামেও পরিচিত। ইংরেজিতে স্পিলিট ব্লাক গ্রাম এবং আয়ুর্বেদিক নাম ‘মাশা’।
মাষকলাই ডাল প্রচুর পুষ্টি গুণসম্পন্ন ডাল। মাষকলাই ডালে প্রতি ১০০ গ্রামে আছে ক্যালরি- ৩৪১, পটাসিয়াম- ৯৮৩ মি. গ্রা. প্রোটিন- ২৫ গ্রাম, সোডিয়াম- ৩৮ মি.গ্রা., ক্যালসিয়াম- ১৩৮ মি. গ্রা. আয়রন- ৭.৫৭ মি. গ্রা।
পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, মাষকলাইয়ের ডালে শতকরা ২০ থেকে ২৩ ভাগ আমিষ থাকে। প্রোটিন ও ভিটামিন বি-এর সমৃদ্ধ উৎস হলো এই ডাল। এ ডাল পেট কেচে বর্জ্য নামিয়ে দেয়। সঙ্গে পুরুষের শুক্রাণুও বাড়ায়। রুচিকর ও বলবর্ধক বলে শরীরে প্রয়োজনীয় প্রোটিনের জোগানদাতা এই ডাল।
প্রোটিন, আয়রণ এবং কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ মাষকলাইয়ের ডাল অনেকগুলি স্বাস্থ্য উপকারিতা সরবরাহ করে। তদুপরি, মাষকলাইয়ের ডাল প্রোটিন এবং ভিটামিন “বি” এর অন্যতম উৎস এবং এটি মহিলাদের জন্য উপকারী। এই ডালটি আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়ামে পূর্ণ ফলে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এই ডাল খুবই স্বাস্থ্যকর। জেনে নিন মাষকলাই ডালের স্বাস্থ্য উপকারিতা
শক্তি বাড়ায়
মাষকলাইয়ের ডালতে আয়রণের পরিমাণ বেশি থাকে যা আমাদের দেহে সামগ্রিক শক্তির মাত্রা বৃদ্ধি করে এবং সক্রিয় রাখে। আয়রণ একটি খনিজ যা লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সহায়তা করে যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে অক্সিজেন প্রবাহকে বাড়িয়ে তোলে, এর ফলে শক্তি বৃদ্ধি করে এবং ক্লান্তি হ্রাস করে। এটি গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে আয়রণের ঘাটতি পূরণ করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল নিয়ন্ত্রিত ডায়েটের মাধ্যমে রক্তে গ্লূকোজের মাত্রা ঠিক রাখা। মাষকলাইয়ের ডাল প্রচুর পরিমাণে ফাইবারযুক্ত, মাষকলাই রক্তে চিনি এবং গ্লূকোজের মাত্রা ঠিক রাখতে সহায়তা করে।
শুক্রবর্ধক
মাষকলাই ডাল শুক্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে। ‘প্রাকৃতিক উদ্দীপক’ হিসেবে এই ডাল শুক্রসংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করতে পারে। পানিতে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে ঘি দিয়ে ভেজে খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
হজমের উন্নতি করে
মাষকলাইয়ের ডাল দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় উভয় ফাইবার সমৃদ্ধ, যা আমাদের হজমের উন্নতি করে। মাষকলাইয়ের ডালের ডায়েট্রি ফাইবার হজমের উন্নতি করে মলের পরিমান বৃদ্ধি করে। আপনি যদি ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, বাধা বা ফোলা রোগে ভুগছেন তবে এই সমস্ত ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে আপনার ডায়েটে মাষকলাইয়ের ডাল অন্তর্ভুক্ত করুন।
হার্টকে সুরক্ষা দেয়
মাষকলাইয়ের ডাল প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়াম থাকে যা আমাদের হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কোলেস্টেরলের মাত্রা বজায় রেখে এথেরোস্ক্লেরোসিস প্রতিরোধ করে এটি আমাদের কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমকে সুস্থ্য রাখে। পটাশিয়াম আপনার দেহের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া উন্নত করে। রক্তচাপ হ্রাস করে এবং হার্টকে সুস্থ্য রাখে।
হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নত করে
ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, পটাসিয়াম, ফসফরাস এবং ক্যালসিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রয়েছে মাষকলাইয়ের ডালে যা হাড়ের ঘনত্বকে বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত মাষকলাইয়ের ডাল খাওয়া আপনাকে হাড় সম্পর্কিত সমস্যা রোধ করতে এবং হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করবে।
নার্ভ সিস্টেমকে শক্তিশালী করে
স্নায়ুতন্ত্রকে শক্তিশালী করে এবং মস্তিষ্ককে সুস্থ করে তোলে মাষকলাইয়ের ডাল। এটি বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক ওষুধে নার্ভাল ডেবেলিটি, আংশিক পক্ষাঘাত, ফেসিয়াল পক্ষাঘাত এবং অন্যান্য রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যবহৃত হয়।
ব্যথা কমায়
ব্যথা এবং প্রদাহজনিত উপশমের জন্য আয়ুর্বেদিক ওষুধে মাষকলাইয়ের ডাল বা ব্ল্যাক গ্রাম ব্যবহার করা হয়। মাষকলাইয়ের ডাল -এ অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলোর উপস্থিতি শরীরে ব্যথা এবং প্রদাহ হ্রাস করতে পরিচিত। সন্ধি ও পেশীগুলিতে ব্যথা হওয়ার জন্য কেবল এটির একটি পেস্ট লাগালে তাৎক্ষণিকভাবে স্বস্তি পাওয়া যায়।
পেশি গঠনে
পেশির কোষের বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে মাষকলাই ডাল। শরীরের বৃদ্ধিতে ডালে থাকা প্রোটিন খুবই দরকারি।
স্নায়বিক রোগ সারাতে
স্নায়বিক দুর্বলতা, স্মৃতি দুর্বলতা, সিজোফ্রেনিয়ার, হিস্টিরিয়ার মতো সমস্যা দূর করতে পারে মাষকলাই।
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
আয়ুর্বেদশাস্ত্রের পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ের গবেষণাতে দেখা গেছে মাষকলাই ডালের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
চুলের জন্য উপকারি
মাষকলাইয়ের ডাল চুলের জন্যও উপকারী, কারণ এটি খনিজ এবং প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ যা আপনার শুষ্ক এবং ভঙ্গুর চুল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
ত্বকের সুরক্ষায়
দারুণ স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করা যায় মাষকলাই। ত্বক থেকে ময়লা, মৃত কোষ সারিয়ে ত্বকের সতেজতা ও ঔজ্জ্বল্য বাড়ায় মাষকলাই। রোদে পোড়া ত্বকের ক্ষেত্রেও এই ডাল উপকারী। এতে আছে প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক ক্ষমতা। তাই মুখের ব্রণ দূর করতে পারে এটি। মুখের দাগ দূর করতেও মাষকলাইয়ের ডালের ব্যবহার দেখা যায়।