অসৎ উদ্দেশ্য আর টাকা কামাতে ইভ্যালি করে রাসেল: বিচারপতি মানিক

প্রকাশ | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৫:৪১ | আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৬:২১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে আলোচিত ইকমার্স প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালি প্রতিষ্ঠার পেছনে কোম্পানিটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেলের অসৎ উদ্দেশ্য ছিল।

ইভ্যালিকে ডোবানোর জন্য রাসেলকে দায়ী করে একথা বলেন কোম্পানিটির সদ্য পদত্যাগ করা পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।

ঢাকা টাইমসকে বিচারপতি মানিক বলেন, ‘রাসেল অসৎ উদ্দেশ্য নিয়েই ইভ্যালি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি নিজের খুশিমতো কোম্পানি চালিয়েছেন। কোম্পানির টাকায় বিলাসী জীবন যাপন করেছেন।’

বুধবার বিচারপতি এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের নেতৃত্বাধীন ইভ্যালির পাঁচ সদস্যের পরিচালনা বোর্ড পদত্যাগ করেছেন। ইভ্যালির নিরীক্ষা প্রতিবেদন ও ইভ্যালির বিষয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনও উচ্চ আদালতে দাখিল করেছেন তারা।

বেলা ১১টার দিকে তাদের পদত্যাগপত্র এবং প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করা হয় বলে ঢাকা টাইমসকে জানিয়েছেন বিচারপতি মানিক। বলেন, ‘ইভ্যালির বিষয়ে আমাদের পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট আকারে জমা দিয়েছি।’

ঢাকা টাইমসকে বিচারপতি মানিক বলেন, ‘ইভ্যালি বোর্ড গঠনের সময় আদালতের নির্দেশ ছিল আমাদের কাজ শেষ হবে অডিট রিপোর্ট পর্যন্ত। অর্থাৎ, অডিট রিপোর্ট শেষ হলে এবং তদন্ত রিপোর্ট শেষ হলে এরপর ইভ্যালিতে আমাদের আর কোনো কাজ নেই। আজকে আমরা অডিট রিপোর্ট এবং তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছি। এজন্য আমরা পদত্যাগ করলাম।’

২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল ও প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান রাসেলের স্ত্রী শামীমা নাসরিন গ্রেপ্তার হন। এরপর ১৮ অক্টোবর বিচারপতি এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের বোর্ড গঠন করে দেন উচ্চ আদালত।

বোর্ডের অন্য সদস্যরা ছিলেন স্থানীয় সরকার ও পল্লি উন্নয়ন বিভাগের সাবেক সচিব মোহাম্মদ রেজাউল আহসান, অবসরপ্রাপ্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফখরুদ্দিন আহম্মেদ ও আইনজীবী ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ।

এদিকে বৃহস্পতিবার ইভ্যালির নতুন পরিচালনা বোর্ড দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী এই বোর্ডে থাকছেন রাসেলের স্ত্রী শামীমা নাসরিনের নেতৃত্বে তার মা ও বোনের স্বামী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব কামরুন নাহার এবং ইক্যাবের সহসভাপতি সাহাব উদ্দিন শিপন।

ইভ্যালি নিয়ে তাদের পর্যবেক্ষণের বিষয়ে জানতে চাইলে বিচারপতি মানিক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা তদন্ত রিপোর্টে লিখেছি—ইভ্যালিকে ডুবিয়েছে রাসেল। কারণ তার প্রথম থেকেই উদ্দেশ্যে ছিল প্রতারণামূলক। প্রতারণার উদ্দেশ্য নিয়ে সে এই কোম্পানি গঠন করেছে, মানুষকে ফাঁকি দিয়ে। মানুষকে ভুল বুঝিয়ে, মানুষের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে টাকাপয়সা আত্মসাৎ করেছে।’

‘সারা বছরই রাসেল তাই করেছে। আর ইভ্যালির ইনভয়েসে উল্লেখ নেই—তাকে কে কত টাকা দিল; শুধু উল্লেখ আছে টাকার কথা। কে পেল সেই টাকা সেটা উল্লেখ নেই। এমনটি অডিটর সাহেবরা উল্লেখ করেছেন।’

বিচারপতি মানিক বলেন, ‘ইভ্যালিতে কোটি কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে কিন্তু সেই টাকা গেল কোথায়? সেই টাকার হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। এ থেকে আমরা মনে করতে পারি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে; মানিলন্ডারিং হয়েছে। সেটা তদন্ত করবে সরকার। আমরা না।’

রাসেল এককভাবেই কোম্পানি চালাতো জানিয়ে বিচারপতি মানিক বলেন, ‘কোম্পানির অন্য সবাই আমাদের বলেছেন রাসেল এককভাবে কোম্পানি চালাতেন। কারও প্রতি রাসেলের দায়বদ্ধতা ছিল না। ভালো অ্যাডমিনিস্ট্রেটর বা অ্যাকাউন্টেন্ট ছিল না।’

‘রাসেল কোনো বিধিবিধান মানত না। এসব না মেনেই নিজের মতো প্রতিষ্ঠান চালাত। কারণ তার উদ্দেশ্য ছিল পয়সা পকেটে ভরা। এবং সেটাই সে করেছে। এতে অনেকে প্রতারিত হয়ে পথে বসেছে। এজন্য কোম্পানিটি ডুবে গেছে।’

এই মুহূর্তে ইভ্যালির যে টাকা আছে তা দিয়ে কোম্পানি বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব নয়—প্রতিবেদনের এমন মত দেওয়া হয়েছে জানিয়ে বিচারপতি মানিক বলেন, ‘যদি নতুন কোনো বিনিয়োগ আসে তাহলে কোম্পানিটি বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হতে পারে। আর তা না হলে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। রাসেল প্রতারণার উদ্দেশ্য নিয়েই কোম্পানি চালাত, বারবার তা তদন্তে উঠে এসেছে।’

ঢাকা টাইমসকে শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘পরিচালনা বোর্ড গঠনের সময় আদালত আমাদের বলেছিলেন, যদি আমরা মনে করি কোম্পানি চলবে না, তাহলে কোম্পানিকে দেউলিয়া করতে পারি। কিন্তু সেটা আমরা করিনি।’

‘বহু ছোট ছোট বিনিয়োগকারী মানুষের কথা বিবেচনা করে আমরা ইভ্যালি দেউলিয়া করে দিইনি। কোম্পানিটি চালানো সম্ভব হলে যারা পাওনাদার আছেন তারা টাকা ফেরত পাবেন। তবে এগুলো নির্ভর করছে ভবিষ্যতের ওপর। কিন্তু এখন যে অবস্থায় আছে এই কোম্পানি চলবে না’’— যোগ করেন বিচারপতি মানিক।

(ঢাকাটাইমস/২১সেপ্টেম্বর/এসএস/ডিএম)