চালের বাজারে মিল মালিকদের বড় সিন্ডিকেট

প্রকাশ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৭:৪৪

পুলক রাজ, ঢাকা টাইমস

বর্তমানে পাইকারি বাজারে চালের কোনো সংকট নেই। সেই সঙ্গে সরবরাহ ব্যবস্থাও পুরোপরি স্বাভাবিক। তারপরও অস্থির দেশের চালের বাজার। মূলত এর পেছনে রয়েছে মিল মালিকদের সিন্ডিকেটের কারসাজি।

দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন মিল ও গুদামে মজুদের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীদের। এদিকে ‘আপাতত’ চালের বাজারে নজর দিচ্ছে না বলে জানিয়েছে ভোক্তা অধিদপ্তর।

বুধবার সরেজমিনে কারওয়ান বাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারিতে মাঝারি আকারের (পাইজাম, আটাশ, লতা) চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫২ টাকা কেজি। ভোক্তারা খুচরা থেকে এই চাল কিনছেন ৫৫-৫৬ টাকা কেজিতে। আর পাইকারিতে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৪ টাকা কেজি, যা খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। পাইকারি বাজারে পোলাওয়ের চালের কেজি ১১০ টাকা, মিনিকেট ৭২ টাকা, আমন চাল ৬০ টাকা, নাজির শাইল ৭৮ টাকা, কাঠারি আতপ চাল কেজি প্রতি ৮০ টাকা।

কারওয়ান বাজারের চাল ক্রেতা স্বপন আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘চাল না কিনে থাকতে পারি না। কারণ আমরা মাছে-ভাতে ভাঙালি। আমাদের মূল জায়গায় আঘাত দেওয়া হয়েছে। সব ধরনের নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি। এর মধ্যে চালেও স্বস্তি নেই। আমি মনে করি এখনও সময় আছে সরকার থেকে বড় ধরনের অভিযান হোক। বাজারে যত ধরনের সিন্ডিকেট আছে সবকয়টাকে ধরে জরিমানা করা হোক।’

কারওয়ান বাজারের চাল পাইকারি ব্যবসায়ী আল্লাহ্র দান রাইস দোকানের মালিক মো. আব্দুল আওয়াল তালুকদার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা যারা রাজধানীতে পাইকারি চাল বিক্রি করছি খুব দুশ্চিন্তায় আছি। আড়ৎদার ধুম করে দাম বাড়িয়ে দেয়। তখন আমরা মানুষের প্রশ্নের মুখে পড়ি। আর ভোক্তা অধিকারের সরকারি কর্মকর্তারা আমাদেরকে জরিমানা করেন। অনেক কাস্টমার পরিচিত থাকায় আগের দামেই বিক্রি করতে হয়। আমাদের এই কষ্ট বুঝবে কে? আমরা পাইকাররা মহাবিপদে আছি।’

আব্দুল আওয়াল তালুকদার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মিলমালিকরা খুব জটিল করে দিয়েছে চালের ব্যবসা। ১৫ দিন আগে যে চাল কিনে এনেছি ২৪০০ টাকা বস্তা সেই চালের বস্তা ২০০ টাকা বাড়িয়ে ২৬০০ টাকা কিনতে হচ্ছে। কিন্তু আমরা আগের দামেই বিক্রি করছি।’

আব্দুল আওয়াল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ক্রেতারা আমাদের প্রাণ। ধরেন গতকাল যদি আপনার কাছে ২২০০ টাকা বস্তা চাল বিক্রি করি, আর আজকে একই চালের বস্তা ২৬০০ টাকা বলি আপনিতো তখন আমাকে মানুষ বলবেন না। আমরা অপারগ হয়ে আছি।’

আব্দুল আওয়াল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘খুচরা ব্যবসায়ীরা ২/৩ টাকা বেশিতে বিক্রি করবে এটাই স্বাভাবিক। তবে অতিরক্তি বেশি দামে বিক্রি করলে আমরা তা জানি না। কারণ এখন পর্যন্ত আমরা সীমিত লাভে চাল বিক্রি করছি।’

পাইকারি চাল ব্যবসায়ী হক রাইস এজেন্সির মালিক মো. মনছুর আহমদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মিল মালিকদের বড় সিন্ডিকেট। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া, নওগাঁ, বগুড়া, দিনাজপুর থেকে আমরা চাল কিনে আনি। মিলমালিকরা সিন্ডিকেটের মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওরা হুট করে দাম বাড়িয়ে দেয়। তখন আমাদের হিমশিম খেতে হয়।’

মো. মনছুর আহমদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কারওয়ান বাজারের চালের বাজারে ১/২ দিন পর পর ম্যাজিস্ট্রেট আসে। তারা আমাদের চালের দোকানে সবকিছু যাচাইবাচাই করে কোনো সমস্যা থাকলে জরিমানাও করে। কিন্তু বড় বড় মিল মালিকদের কিছু করে না। কারণ একটাই ওইসব আড়ৎদার সরকারি কর্মকর্তাদের চালের বস্তা দিয়ে মুখ বন্ধ রাখে। আমি মনে করি আগে মিল মালিকদের সিন্ডিকেট ভাঙা হোক। মিল মালিকদের সিন্ডিকেট ভাঙতে পারলে চালের বাজারে স্বস্তি আসবে নিশ্চিত।’

কুষ্টিয়া জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রশিদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কুষ্টিয়ায় চালের দাম এখনো বাড়েনি। দেড় মাস আগে যা দাম ছিল আজকে সেই দামেই বিক্রি হচ্ছে। চালের বাজারে দাম বাড়ছে আমরা শুনতেছি। আমাদের কুষ্টিয়া থেকে চাল বেশি দামে বিক্রি করছে না। আর কারওয়ান বাজারের পাইকারিরা চাল কিনে মোহাম্মদপুর বা কচুক্ষেত থেকে। তবে মোহাম্মদপুর বা কচুক্ষেত পাইকাররা আমাদের কাছ থেকে চাল কিনে। হাত বদল হওয়াতে ১/২ টাকা দাম একটু বেশি হতে পারে। আমাদের কোনো সিন্ডিকেট নেই।’

ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা এখন আপাতত চালের বাজারে মনিটরিংয়ে নেই।’

(ঢাকাটাইমস/২১সেপ্টেম্বর/কেএম)