তিন বছরের কারাজীবনে রোগে-শোকে অনেকটাই কাহিল জি কে শামীম!

প্রকাশ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১:৪১ | আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১:৪৪

আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস

ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেপ্তারের পর থেকে তিন বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে বন্দি রয়েছেন ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম। কারাবন্দি জীবনের বেশিরভাগ সময়ে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে হাসপাতালে কাটিয়েছেন বির্ততিক এই ঠিকাদার। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ‘নানা রোগে আক্রান্ত’ হয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।  

কারাসূত্র জানায়, জি কে শামীম গ্রেপ্তারের পর থেকে ঘনঘন ‘অসুস্থ’ হতেন। আর এই কারণে কারাগারের চেয়ে বেশি সময় ধরে হাসপাতালেই থাকতে হয়েছে তাকে। গ্রেপ্তারের পর অধিকাংশ সময় তিনি বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে কারা হেফাজতে চিকিৎসা নিয়েছেন।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি সূত্র জানায়, বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি কেবিনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন জি কে শামীম। তিনি অস্বাভাবিক রক্তচাপের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তার রক্তচাপ অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করতো। পরে হাসপাতালে যাওয়ার পর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে চিকিৎকসকেরা বলছেন, তিনি নিউমোনিয়া, যক্ষ্মাসহ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত।

ওই সূত্রটি জানায়, কারাগারে থাকাকালীন সময়ে সাধারণত অন্য বন্দিদের সঙ্গে গল্পগুজব করে, পেপার পত্রিকা পড়ে সময় কাটতো তার। এছাড়াও প্রতি সপ্তাহে মুঠোফোনে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন শামীম।

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের মধ্যে ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর গুলশানের নিকেতনে শামীমের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালায় র‌্যাব। সেখান থেকে নগদ এক কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার টাকা, ৯ হাজার ইউএস ডলার, ১৬৫ কোটি ২৭ লাখ ৬০ হাজার টাকার ১০টি এফডিআর, ৩২টি ব্যাংক হিসাবের চেক বই, আটটি আগ্নেয়াস্ত্র ও মদ পাওয়ার কথা বলা হয় র‌্যাবের পক্ষ থেকে।

একসময়ের যুবদল নেতা জি কে শামীম ক্ষমতার পরিবর্তনে বনে যান কেন্দ্রীয় যুবলীগের নেতা। রাজধানীর সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবে পরিচিত তিনি। গণপূর্ত ভবনের বেশির ভাগ ঠিকাদারি কাজই তার নিয়ন্ত্রণে ছিল।

জি কে শামীম গ্রেপ্তারের পর তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জি কে বিল্ডার্সের হাতে থাকা সরকারি প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার ২২টি নির্মাণ প্রকল্পের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়। তার বিরুদ্ধে অর্থপাচার এবং অস্ত্র ও মাদক আইনে তিনটি মামলা হয়েছে। সবকটি মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে আদালতে। বর্তমানে মামলাগুলো বিচারাধীন। সাতজন সশস্ত্র দেহরক্ষী নিয়ে চলাফেরা করা জি কে শামীম কাকে কাকে নিয়মিত চাঁদা দিতেন জিজ্ঞাসাবাদে সেসব তথ্য দিয়েছেন বলে তদন্ত সূত্রে জানা গেছে।

মাদক আইনে মামলা

মাদক আইনের মামলায় জি কে শামীমের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে মামলাটি ঢাকার অষ্টম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন।

দুদকের মামলা

২৯৭ কোটি ৮ লাখ ৯৯ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের উপ-পরিচালক সালাউদ্দিন বাদী হয়ে মামলটি করেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসে তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোপত্র দাখিল করা হয়েছে। সেখানে জি কে শামীমের ওইসব সম্পদ অর্জনের বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া জি কে শামীমের বাসা থেকে পাওয়া নগদ এক কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার টাকা ও ৭ লাখ ৪৭ হাজার টাকার বিদেশি মুদ্রারও বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি।

তদন্তে জি কে শামীম ও তার মা আয়েশা আক্তারের নামে ১৬৫ কোটি ২৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকার এফডিআর, মায়ের নামে আরও ৪৩ কোটি ৫৭ লাখ ৪০ হাজার টাকার ব্যবসার অংশীদারিত্বের বৈধ কোনো উৎসও খুঁজে পায়নি দুদক।

এছাড়া জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানির শেয়ার, গাড়ি ও এফডিআর বাবদ ৩৬ কোটি ৩৫ লাখ ১৮ হাজার ৭১৯ টাকার অস্থাবর সম্পদের বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি। মামলাটি বর্তমানে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

অর্থপাচারের মামলা

র‌্যাব-১ এর নায়েব সুবেদার মিজানুর রহমান বাদী হয়ে গুলশান থানায় জিকে শামীম ও তার ৭ জন সহযোগীর বিরুদ্ধে মানিলন্ডারি আইনে মামলাটি করেন। গত বছরের ৪ আগস্ট সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকোনমিক ক্রাইম স্কোয়াড আবু সাঈদ মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
২০২০ সালের ১০ নভেম্বর জি কে শামীম ও তার দেহরক্ষীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। মামলাটি বর্তমানে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক হাফিজুর রহমানের আদালতে বিচারাধীন।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘জি কে শামীমের বিরুদ্ধে মামলাগুলোর বিচার চলছে। সব মামলায় সাক্ষ্য নেওয়া হচ্ছে।’
 
(ঢাকাটাইমস/২২সেপ্টেম্বর/এএ/এফএ)