ডিবি পরিচয়ে ব্যবসায়ীর ২০ লাখ টাকা লুট, গ্রেপ্তার ৫

প্রকাশ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৯:৫৫ | আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২১:২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকাটাইমস

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে স্বর্ণ ব্যবসায়ীর ২০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় মূল হোতাসহ পাঁচ ‘ডাকাতকে’ গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। বুধবার রাজধানীর উত্তরা, কলাবাগান ও নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

গ্রেপ্তাররা হলেন- গোলাম মোস্তফা শাহীন, মো. শাহাদৎ হোসেন, সাইদ মনির আল মাহমুদ, মো. রুবেল ইসলাম ও মো. জাকির হোসেন। এ সময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাই-ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি প্রাডো জীপগাড়ি, নগদ এক লাখ ১০ হাজার টাকা, একটি ওয়াকিটকি, এক জোড়া হাতকড়া, দুটি কালো কটি, একটি স্টিলের লাঠি, একটি হাতুড়ি, একটি প্লাস, একটি স্পার্কার (পিস্তল সাদৃশ্য) ও একটি র‌্যাত উদ্ধার করা হয় বলে দাবি করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

গোয়েন্দা প্রধান বলেন, এ চক্রের মূল হোতা গোলাম মোস্তফা শাহীন। তিনি পুলিশের কনস্টেবল ছিলেন। ২০০৮ সালে অনৈতিক কাজে তিনি চাকরি হারিয়ে ছিনতাই-ডাকাতি পেশায় লিপ্ত হন। শাহীনের বিরুদ্ধে ২০টি মামলা রয়েছে বলে জানতে পেরেছে গোয়েন্দারা।

মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ১৫ দিন কাজ করে রমনা বিভাগের জোনাল টিম এই চক্রটিকে গ্রেপ্তার করেছে। এ চক্রের মূল হোতা শাহীন কোনো একসময় পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি করতো। অনৈতিক কারণে  চাকরি যাওয়ার পর থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাই-ডাকাতি করে আসছে দীর্ঘ দিন ধরে।

ডিএমপির ডিবি প্রধান বলেন, চক্রটি ছিনতাই ডাকাতিতে একটি প্রাডো গাড়ি ব্যবহার করতো। গাড়িটিতে একেক সময় একেক নেমপ্লেট ব্যবহার করতো। আবার বিভিন্ন সময় একই গাড়িতে বিভিন্ন ধরনের রঙ করিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে ছিনতাই ডাকাতি করতো।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, শাহীন ছাড়া এ চক্রের সঙ্গে অন্য কোনো পুলিশ সদস্যের নাম পাওয়া যায়নি। তিনি একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছেন। জেল থেকে বেরিয়ে ফের ছিনতাই ও ডাকাতিতে লিপ্ত হন। তার বিরুদ্ধে ২০টি মামলা রয়েছে।

গোয়েন্দা পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ৩ সেপ্টেম্বর নিউমার্কেটের স্বর্ণ ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন তাঁতিবাজার থেকে ২০ লাখ টাকা নিয়ে পাঠাও মোটর সাইকেলযোগে নিউমার্কেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। পথিমধ্যে দুজন ডাকাত মোটরসাইকেলযোগে ব্যবসায়ীকে অনুসরণ করে।

মহিউদ্দিন বিকাল ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের মূল প্রবেশ গেটের সামনে আসামাত্র ডাকাতরা জিপগাড়ি দিয়ে তার মোটরসাইকেল বেরিকেড দেয়। গাড়ির ভেতর থেকে তিনজন ডাকাত নেমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোক পরিচয় দিয়ে মোটরসাইকেল থেকে তাকে জাপটে ধরে গাড়িতে তুলে নেয়। গাড়ির ভিতরে ভিকটিমকে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে চোখে মুখে আঘাত করে।

পরবর্তীতে ভুক্তোভোগী ব্যবসায়ীর সঙ্গে থাকা ২০ লাখ টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে তার হাত, পা, চোখ বেধে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের পাশে দক্ষিন কেরানীগঞ্জ থানাধীন আব্দুল্লাপুরে রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ভুক্তোভোগী ব্যবসায়ী শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন। এরপর ডিবি ছায়া তদন্ত শুরু করে।

গোয়েন্দা পুলিশের রমনা বিভাগের ডিসি হুমায়ুন কবীরের দিক নির্দেশনায় এডিসি জুয়েল রানার সার্বিক তত্ত্বাবধানে রমনা জোনাল টিমের টিম লিডার মিশু বিশ্বাসের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, এই ২০ লাখ টাকার তদন্ত করতে গিয়ে অন্য একটি ডাকাত চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা রমনা বিভাগ।

বুধবার রাতে পল্টন মডেল থানাধীন জোনাকি সুপার মার্কেট এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন- ইমরান হোসেন শাহীদ, হিরা ব্যাপারী, জাবেদ আহমেদ বাবু, আরিফ ইকবাল ও আবুল খায়ের রানা।

এ সময় তাদর কাছ থেকে চারটি চাপাতি, একটি ছুরি, ১টি হাতুড়ি জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তাররা ওই এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিলো মর্মে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে।

(ঢাকাটাইমস/২২সেপ্টম্বর/এএইচ/কেএম)