ফারুকী হত্যা: তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত, জমা অক্টোবরে
প্রকাশ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯:২৪ | আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০:৪৫
রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারে নিজের বাসায় খুন হন টেলিভিশনে ইসলামি অনুষ্ঠান উপস্থাপক ও হাইকোর্ট মাজার মসজিদের খতিব মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী। হত্যাকাণ্ডের আট বছরে আটজন তদন্ত কর্মকর্তার হাত বদল হয়েছে। বর্তমান মামলাটির তদন্ত সংস্থা সিআইডি এখনও অভিযোগপত্র জমা দিতে পারেনি। অবশেষে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত। আগামী অক্টোবরেই এই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিআইডির এক কর্মকর্তা।
ফারুকী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কয়েকবার নাটকীয় মোড় নিলেও থানা-পুলিশ, ডিবি ও সিআইডির মধ্যে ঘুরপাক খেয়েছে। তবে তদন্ত সংস্থাগুলো তার হত্যাকাণ্ডের পেছনে ধর্মীয় ‘ভুল ব্যাখ্যা’র যে অভিযোগ সেটাকেই প্রধান কারণ হিসেবে মনে করছে।
বর্তমান মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিসানুল হক জিসান। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ফারুকী হত্যা মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়। আগামী মাসের মধ্যে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হবে।
সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন, মামলার আগের সন্দেহ ঠিক থাকলেও নতুন কিছু তথ্য মিলেছে, যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগ মূহুর্তের পর্যালোচনা চলছে। তবে মামলাটির তদন্তে বেশ বেগ পেতে হয়েছে সংস্থাগুলোর।
ফারুকী হত্যাকাণ্ডের পরের দিন ২০১৪ সালের ২৮ আগস্ট ফারুকীর ছেলে ফয়সাল ফারুকী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আট-নয়জনকে আসামি করে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা ও ডাকাতির অভিযোগে মামলা করেন। বিভিন্ন সময় সন্দেহভাজন হিসেবে জেএমবি, আনসারুল্লাহ ও হুজির ১৩ সদস্যসহ ১৬ জন গ্রেপ্তার হয়। যাদের এই মামলার আসামি করে আদালতে হাজির করা হয়।
সিআইডির একটি সূত্র জানান, এই হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন— আব্দুল গফ্ফার, রিয়াজ ওরফে ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজ, হাদিসুর রহমান সাগর, আবু রায়হান, আব্দুল্লাহ আল তাসনীম ওরফে নাহিদ, খালেক ব্যাপারী, মোজাফ্ফর হোসেন ওরফে সাঈদ, মিঠু প্রধান, খোরশেদ আলম ও তারিকুল ইসলাম ওরফে মিঠু।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে দুই আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের জবানবন্দিতেই বেরিয়ে আসে, হত্যার পরিকল্পনা করে জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। আর হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়ন করেছে আনসার আল ইসলাম বা আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি)।
জানা যায়, ঘটনার দিন এশার নামাজের পর ছয়-সাতজন যুবক মাওলানা ফারুকীর বাসায় ঢোকেন। এরপর তার স্ত্রী, ছেলেসহ তিনজনের হাত-পা বেঁধে তাদের আলাদা কক্ষে আটকে রাখে। তারপর দুর্বৃত্তরা ফারুকীকে গলা কেটে হত্যা করে। চারটি বিষয় সামনে রেখে মামলার তদন্ত কাজ করেছে সংস্থাগুলো।
সিআইডি সূত্র জানায়, ফারুকী হত্যা মামলাটি প্রথমে শেরেবাংলা নগর থানা-পুলিশ তদন্ত করলেও ওই বছরেই ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগে স্থানান্তর করা হয়। ডিবিতে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় ইন্সপেক্টর জুলহাস উদ্দিন আকন্দকে। ২০১৫ সালে মামলার তদন্তভার সিআইডিকে দেয়া হয়। সেখানে তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডির পরিদর্শক আরশেদ আলী মণ্ডল। সেখান থেকে মামলাটি আবার তদন্তের দায়িত্ব পায় ডিবি। ২০১৬ সালে মামলার তদন্তভার সিআইডিতে স্থানান্তর করা হয়। কয়েক মাস পর মামলার তদন্তভার সেখান থেকে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমে দেওয়া হয়। ২০১৮ সালে সেখান থেকে মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির ঢাকা মহানগর পশ্চিম বিভাগ। ২০২১ সালে সেখান থেকে মামলার তদন্তভার সিআইডির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিভাগ পায়। এ নিয়ে আটবার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয় ফারুকী হত্যা মামলায়।
এরপর আরও দুবার ফারুকী হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়। সিআইডিতে এই মামলার দ্বিতীয় তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন সিরিয়াস ক্রাইম স্কোয়াডের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার রাজীব ফরহান। তার বদলির পর চলতি মাসে তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিসানুল হক জিসান।
সিআইডির ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার জিসানুল হক বলেন, আগে গ্রেপ্তার ১৬ জঙ্গির ফারুকী হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। জেএমবির মধ্যম সারির কয়েক নেতা ফারুকীর মতাদর্শে ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ডাকাতি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে দীক্ষা পাওয়া ছয় জঙ্গি জামিনে বেরিয়ে এলে তাদের দিয়ে ফারুকীকে হত্যা করিয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন জেএমবির শির্ষ্য নেতারা। আর জঙ্গি ডাকাতেরা ফারুকীকে হত্যা করে তার বাসায় ডাকাতি করে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও মূল্যবান সামগ্রীও নিয়ে যায়।
জিসানুল হক বলেন, ফারুকীকে হত্যায় অংশ নেওয়া জঙ্গিরা গা ঢাকা দিয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজনের পূর্ণাঙ্গ নাম–ঠিকানা পাওয়া গেছে। এখন তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। অবশ্য গত বছরে জিসানুল হক বলেছিলেন, কোনো গ্রুপ বা ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এক জঙ্গির দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিনির্ভর তদন্ত এগোচ্ছে না। বিষয়টি জঙ্গিদের কাজ, এখনো বলা যাবে না।
হত্যা মামলার বাদি নুরুল ইসলাম ফারুকীর ছেলে ফায়সাল ফারুকী মামলার তদন্ত নিয়ে হতাশা প্রকাশ করলেও, এখন পিতা হত্যার বিচার পাবেন বলে আশাবাদী। কারণ সম্প্রতি সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা ফোন করে তদন্ত শেষ পর্যায় বলে জানিয়েছেন। এখন যেহেতু মামলার তদন্ত শেষ। সেহেতু বিচার পাবো বলে বিশ্বাস করি।
কী কারণে ফারুকীকে হত্যা করা হয়েছিল বলে ধারনা করছেন। এমন প্রশ্নের জবাবে নিহত ফারুকীর ছেলে ফায়সাল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ধর্মীয় মতবিরোধের কারণেই আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে ধারণা। এছাড়া আমার বাবাকে করোর সঙ্গে হত্যা করার মতো এমন শত্রুতা ছিল না।
(ঢাকাটাইমস/২৩সেপ্টেম্বর/এএইচ/কেএম)