কেমন আছেন কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের ফিরোজ?

প্রকাশ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১:০৭

আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস

তিন বছর আগে দেশব্যাপী শুরু হয় ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান। অভিযানে অনেক রাঘববোয়াল গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, যাদের মধ্যে অনেকে এখনও কারাগারে রয়েছেন। আবার অনেকে জামিনে বেরিয়ে মুক্ত জীবনযাপন করছেন। তাদের মধ্যে একজন শফিকুল আলম ফিরোজ ওরফে কালা ফিরোজ। গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে ধানমন্ডি থানায় মামলা করে র‌্যাব। আর জ্ঞাত আয় বজির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আরেকটি মামলা করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ধানমন্ডির কলাবাগান ক্রীড়াচক্র ক্লাব থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ফিরোজসহ পাঁচজনকে। তাদের মধ্যে ফিরোজ ছাড়া অন্য চারজন কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের বেতনভুক্ত কর্মচারী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেনি র‌্যাব। ফিরোজের কাছ থেকে অস্ত্র ও ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। অবৈধ অস্ত্র ও মাদক রাখার অভিযোগে ২১ সেপ্টেম্বর ভোরে দুটি মামলা করেন র‌্যাব-২ এর পরিদর্শক মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ খান। দুটি মামলায়ই অভিযোগপত্র দিয়েছে র‌্যাব। পরে দুই কোটি ৬৮ লাখ ২ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য পেয়ে ওই বছরের ৭ নভেম্বর দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম।

এসব মামলার বিচার শুরু হলেও ফিরোজ সব মামলায় জামিন পেয়ে কারামুক্ত জীবনযাপন করছেন।

র‌্যাবের একটি সূত্র জানায়, শফিকুল আলম ফিরোজের বিরুদ্ধে করা অবৈধ অস্ত্র ও মাদকের দুটি মামলায় অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিয়েছে র‌্যাব। মামলাগুলো এখন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

দুদকের মামলায়ও অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। এই মামলা এখন ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। ইতোমধ্যে মামলার বাদী সাইফুল ইসলাম সাক্ষ্য দেওয়া শেষ করেছেন। তবে এখনও তাকে জেরা করা হয়নি।

এ ব্যাপারে দুদকের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এই মামলার বিচার চলছে। আমি ইতোমধ্যে বাদী হিসেবে সাক্ষ্য দেওয়া শেষ করেছি।

শফিকুল আলম ফিরোজ একাদশ সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর-৫ (শাহরাস্তি-হাজীগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। তিনি কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বায়রার সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলেন। তবে তার দলীয় পদ সংক্রান্ত দাবি বরাবরই অস্বীকার করেছেন কৃষকলীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন।

দুদকের মামলায় ফিরোজের বিরুদ্ধে অভিযোগ: তিনি এক কোটি ৪০ লাখ ৪৩ হাজার ৪৭০ টাকার স্থাবর সম্পদ হিসেবে অকৃষি সম্পত্তি অর্জন করেছেন বলে আয়কর নথিতে তথ্য দিয়েছেন। অনুসন্ধানে এই সম্পদের পরিমাণ গোপন করেছেন বলে দুদকের কাছে তথ্য রয়েছে। অন্যদিকে তার ওই সম্পদ অর্জনের কোনো সুনির্দিষ্ট উৎস দেখাতে পারেননি দুদকের কাছে।

দুদকের অনুসন্ধানে জানা গেছে, শফিকুল আলম একসময় ধানমন্ডি ক্লাবের সভাপতি ছিলেন। ওই ক্লাবের সদস্য হওয়ার জন্য তিনি ৬০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন।

শফিকুল আলম ফিরোজের স্ত্রীর নামে ধানমন্ডিতে দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট থাকার তথ্যও পেয়েছে দুদক। সংস্থাটি বলছে, দেশে-বিদেশে শফিকুলের বিপুল সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।

এদিকে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, বিভিন্ন ব্যাংকে শফিকুল আলম ফিরোজের এক কোটি ২৩ লাখ ৩৯ হাজার ১২০ টাকা জমা থাকার তথ্য পাওয়া যায়। ওই টাকারও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পায়নি দুদক।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশেষ জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মীর আলী আহম্মেদ সালামের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি কলটি রিসিভ করেননি।

কে এই শফিকুল আলম ফিরোজ: ২০০৬ সালের ১৪ মে রাজধানীর পরীবাগে আলোচিত ‘দি তুর্কি অ্যাসোসিয়েটস’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে চাঁদা না পেয়ে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করা হয়েছিল রমজান আলী মাস্টার নামে এক ব্যক্তিকে। শীর্ষ সন্ত্রাসী তানভিরুল ইসলাম জয়ের নির্দেশে এ হামলা করা হয়। আর এই হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে সরাসরি নাম উল্লেখ করে যে কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছিল তাদের অন্যতম ছিলেন শফিকুল আলম ফিরোজ ওরফে কালা ফিরোজ, যিনি রাজধানীর কলাবাগান স্পোটির্ং ক্লাবের সভাপতি ও কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা। এই শফিকুল আলম ফিরোজ একযুগ আগেও সন্ত্রাসী কালা ফিরোজ নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে পরিচিত ছিলেন। সময়ের পালাবদলে অপরাধ জগতের এই মানুষ খোলস পাল্টে হয়ে যান আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় নেতা।

এ ছাড়াও তিনি জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রার সিনিয়র সহসভাপতির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে নেতৃত্বও দেন। শুধু তাই নয়, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর-৫ (শাহরাস্তি-হাজীগঞ্জ) আসনের নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনের জন্য ব্যাপক চেষ্টা-তদবির চালিয়েছিলেন তিনি। এই কালা ফিরোজ ওই সময়ে পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী জয় ও ইমনের চাঁদাবাজির কাজটি দেখভাল করতেন। এই শীর্ষ সন্ত্রাসীরা বিদেশ থেকে টেলিফোনে যাদের কাছে চাঁদা দাবি করতেন, পরবর্তী সময়ে কালা ফিরোজসহ অন্য সহযোগীরা সেই টাকা আদায়ের কাজটি সম্পন্ন করতেন। টাকা না দিলে হুমকি অনুসারেই অ্যাকশন শুরু হতো। কালা ফিরোজ শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের চাঁদাবাজির ক্যাশিয়ার ছিলেন বলেও জানা যায়।

শুধু জয় বা ইমন নয়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও মুরগি মিলনসহ অনেকের সঙ্গেই সেই সময়ে সরাসরি যোগাযোগ ছিল কালা ফিরোজের। জনশক্তি রফতানি বা ট্রাভেলস ব্যবসার আড়ালে ফিরোজ মূলত আন্ডারওয়ার্ল্ডের ভয়ঙ্কর ডনদের সঙ্গে মিলেমিশে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করতেন।

(ঢাকাটাইমস/২২সেপ্টেম্বর/এএ/এফএ)