ড্রামের ভেলাই একমাত্র ভরসা

প্রকাশ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৪:৫১

মমিনুল ইসলাম বাবু, কুড়িগ্রাম

 

‘হামার ড্রামের ভেলাই একমাত্র ভরসা, কাউয়ো হামাক ব্রিজ করি দেয় না। ছাওয়া-পাওয়া গুলে স্কুল যায় ঝুঁকি নিয়ে, কখন জানি পানিতে পরি কোন দুর্ঘটনা ঘটে।’

এ কথাগুলো বলছিলেন চিলমারী উপজেলার অষ্টমীর চর ইউনিয়নের ডাটিয়ার চর এলাকায় রহিম, খাদিজাসহ অনেকে। 

জানা যায়, কুড়িগ্রামের চিলমারীর দুর্গম চরে বন্যার পানি নেমে যেতে সড়কের কিছু অংশ কেটে দেয় স্থানীয়রা। কিন্তু সেটাই এখন দীর্ঘ ২৫ বছর থেকে তিন গ্রামের মানুষের চলাচলে বড় অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন দুর্ভোগ দেখে সম্প্রতি এপ্রিল মাসে ড্রামের ভেলা করে দেন উপজেলা যুবলীগের সম্মেলন কমিটির সদস্য জাহিদ আনোয়ার পলাশ।

তবে বিগত ২৪ বছর থেকে বন্যা ও বর্ষা মৌসুমে ছোট ডিঙি নৌকা দিয়ে পারাপার হতেন স্থানীয়রা। এই দীর্ঘ সময়ে চোখে পড়েনি কিংবা আমলে নেয়নি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। নির্বাচন এলেই শুধু আশ্বাসই দিয়েছেন এমন অভিযোগ ওই এলাকার বাসিন্দাদের।

এদিকে সরেজমিন পরিদর্শন শেষে মাটি ভরাট করে ব্রিজ করার কথা জানিয়েছেন প্রশাসন। তবে কি আদৌউ বাস্তবায়ন হবে এমন আশঙ্কা দেখা গেছে ওই এলাকার লোকজনের মাঝে।

চিলমারী উপজেলার অষ্টমীর চর ইউনিয়নের ডাটিয়ার চর (৬নং ওর্য়াড) এলাকায় রাস্তাসহ ব্রিজের অভাবে ২৫ বছর থেকে দুই গ্রামের হাজারও মানুষের চলাচলের দেখা দিয়েছে দুর্ভোগ। শুকনো মৌসুমে পায়ে হেঁটে গেলেও ঘোড়ার গাড়ি চলাচলে পোহাতে হয় ভোগান্তি। তবে বন্যা ও বর্ষা মৌসুমে চলাচলের একমাত্র মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায় ডিঙি নৌকা। বর্তমানে ড্রামের ভেলাই চলাচল করছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। যাতায়াত করতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছে ওই এলাকার শিক্ষার্থীরা।

স্থানীয়রা বলছেন দ্রুত সমস্যার সমাধান যেন হয়।

দক্ষিণ নটারকান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেরিনা, মিদুল, মহিবুল ও জেমি বলেন, আমাদের  প্রতিদিন এই ড্রামের ভেলায় করে পাড় হয়ে স্কুলে যেতে হয়। ভেলায় উঠতে ভয় হয়। এখন আমাদের রাস্তা করে দিলে ভালো হতো।  

 একই এলাকার বাসিন্দা সোলাইমান বলেন, ২৫ বছর থেকে এখানে রাস্তা নাই, আমরা চলাচল করতে পারি না ঠিকভাবে। বৃষ্টির সময়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হয় চলাচল করতে। সামনে বাজার কিন্তু ভারী জিনিস নিয়ে আসতে কষ্ট হচ্ছে।

চাঁন মিয়া  বলেন, এখানে নির্বাচন আসলে সবাই রাস্তা ঘাট ঠিক করে দিতে চায়। কিন্তু নির্বাচন শেষ হলে আমাদের আর খোঁজ-খবর নেন না কেউ। কিছু দিন আগে এক ভাই ড্রামের ভেলা করে দিছে। এখন একটু পারাপার হওয়া যায়।  

ইউএনও স্যার আসছিলো এখানে ব্রিজ করে দিতে চাইছে কিন্তু সেই ব্রিজ কবে পাবো জানিনা সঙ্খায় আছি বলে। 

উপজেলা যুবলীগের সম্মেলন কমিটির সদস্য জাহিদ আনোয়ার পলাশ জানান, ওই এলাকার সমস্যা টা অনেক দিনের। কিন্তু জনপ্রতিনিধিরা কেনো কাজটি করছেন না সেটা বুঝে আসে না। পরে আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে ওই এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে পারাপারে জন্য আপাতত একটি ড্রামের ভেলা করে দিয়েছি। এখন মোটামুটি লোকজন পারাপার হচ্ছে। তবে ওখানে স্থায়ী ভাবে ব্রিজ কিংবা রাস্তা হলে এই সমস্যা থাকবে না।  

অষ্টমীরচর ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বলেন, আমি ডাটিয়ার চরের ওই রাস্তার ব্যাপারে ইউএনও স্যার সহ বিভিন্ন দপ্তরে জানিয়েছি। 

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, আমি জায়গাটি সরেজমিন পরির্দশন করেছি। ওখানে একটি ব্রিজ করে দিলে স্থায়ীভাবে সমস্যার সমাধান হবে। আমরা চেষ্টা করছি খুব দ্রুত রাস্তাসহ ব্রিজ করে দেওয়ার।

(ঢাকাটাইমস/২৩সেপ্টেম্বর/এসএ)