খুন করে অটোরিকশা চালক বেশে ৯ বছর, অবশেষে গ্রেপ্তার

প্রকাশ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৬:০৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর। যশোরের একটি স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে ২০০৯ সালে ঢাকায় আসেন তারেক। স্কুলজীবন থেকেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন তিনি। পরে মাদকসহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তারের পেছনে নিহত রানা গ্রুপের হাত ছিল বলে ধারণা তার। সেখান থেকে প্রতিশোধ নিতে ডিস মালিকের নির্দেশে রানা হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন তারেক।

হত্যাকাণ্ডের পরে নয় বছর আত্মগোপনে ছিলেন তারেক। এই সময়রে মধ্যে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক, কার্টন ব্যবসায়ী ও কৃষি কাজসহ বিভিন্ন কাজ করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন নাম ব্যবহার করে চলেছেন। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও জানতে পরেনি তারেক খুনের মামলার আসামি।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থেকে ২০১৪ সালে চাঞ্চল্যকর রমনা থানার তৎকালীন সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমান করবে রানা হত্যা মামলার অন্যতম পলাতক আসামি ইকবাল হোসেন তারেককে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৩।

শুক্রবার সকাল ১১টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর হলেও বেড়ে ওঠা যশোরে। যে কারণে নিজ এলাকার মানুষ খুব একটা চিনতো না। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে হত্যাকাণ্ডের পর চাঁদপুরে গিয়ে গা ঢাকা দেন। তবে শেষ পর্যন্ত নিজেকে গোপন রাখতে পারলেন না। ধরা পড়লেন র‌্যাবের হাতে। এর মধ্যে ২০০৭ সালে বিয়ে করেন তিনি। তার একটি ছেলেও রয়েছে। ‍২০১১ সাল থেকে হত্যাকাণ্ডের পূর্ব পর্যন্ত তারেক তৎকালীন সুইফ ক্যাবল লিমিটেড নামক ডিস ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। চাকরির পাশাপাশি তিনি মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন।

র‌্যাব-৩ এর সিও বলেন, পলাতক আসামি চাঁদপুরে নিজের নাম-পরিচয় গোপন রাখে। সেখানে চাষাবাদ শুরু করে, কিন্তু চাষাবাদের কোনো অভিজ্ঞতা না থাকায় সে পুনরায় যশোর চলে যায়। সেখানেও কিছুদিন পরিবহন শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। তারপর মাদক ব্যবসা শুরু করে।

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, ২০১৯ সালে আবারও ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় নিজেকে আব্দুর রহিমের ছেলে তাহের পরিচয় দিয়ে বসবাস শুরু করে। শুরুতে গার্মেন্টস থেকে পরিত্যক্ত কার্টন সংগ্রহ করে বিক্রি করত। এ ব্যবসার আড়ালে ছিল মাদক ব্যবসা। সে ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করত। সর্বশেষ দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে তার প্রকৃত পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার র‌্যাবের গোয়েন্দা দলের তাকে গ্রেপ্তার করে।

তিনি বলেন, আসামি তৎকালীন সুইফ ক্যাবল লিমিটেড নামক ডিস ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করত। ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক ছিলেন কামরুল ইসলাম ও তানভিরুজ্জামান রনি। তাদের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা মাহবুবুর রহমান রানার ব্যবসায়িক বিরোধ ছিল। ওই বিরোধ নিয়ে এক পক্ষ অন্য পক্ষের ডিস ক্যাবল সংযোগ কেটে দিত। এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে মাঝেমধ্যেই মারামারি হত।

ওই ঘটনার জেরে ২০১৪ সালের ২৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় রানা মোটরসাইকেল করে মগবাজার চৌরাস্তা সংলগ্ন মসজিদের পাশের গলিতে প্রবেশ করলে বাটার গলির মুখে তার গতিরোধ করে তারেকসহ দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে এলোপাথাড়ি কোপায়। স্থানীয়রা রানাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই সময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুটি বোমা ও রক্তমাখা চাপাতি উদ্ধার করে।

ওই সময় স্থানীয় লোকজন সাহায্যের জন্য এগিয়ে এলে তারা বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় ও গুলি ছুড়তে ছুড়তে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরে ওই ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় একটি হত্যা মামলা হয়। মামলার পরই জড়িতরা আত্মগোপনে চলে যায় আসামিরা।

পরে এ হত্যা মামলায় সুইফ ক্যাবল লিমিটেডের মালিক কামরুল ইসলাম অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন। মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা ১৪ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। এর মধ্যে ১০ জন গ্রেপ্তার রয়েছে। আর চার আসামি পলাতক রয়েছে। তার মধ্য থেকে পলাতক আসামি ইকবাল হোসেন তারেক অন্যতম। তার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলেও আত্মগোপনে ছিলেন তিনি।

আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, ২০১১ সাল থেকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার আগ পর্যন্ত আসামি তারেক তৎকালীন সুইফ ক্যাবল লিমিটেড নামক ডিস ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতো। এসময় সে গাঁজা ছেড়ে ইয়াবায় আসক্ত হয়ে পড়ে এবং চাকরির পাশাপাশি মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে।

২০১১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তাকে মাদকসহ রমনা থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ওই সময় নিজেকে ইকবাল হোসেন তারেক পরিচয় দেয়। তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরিয়ে দেয়ায় রানা গ্রুপের লোকদের হাত ছিল। সে থেকেই রানা গ্রুপের প্রতি তার ক্ষোভ তৈরি হয়। ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও ডিস মালিকের নির্দেশে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় তারেক। মাদকসহ এর আগেও একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। তবে নাম-পরিচয় গোপন করাই হত্যা মামলা সম্পার্কে জানতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা।

র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তার তারেকের বিরুদ্ধে হত্যা ও মাদকসহ চারটি মামলা রয়েছে। তাকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৩সেপ্টেম্বর/এএইচ/কেএম)