ময়মনসিংহের সেই লাশটি মরিয়মের মায়ের কিনা জানতে ডিএনএ পরীক্ষা

প্রকাশ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২০:৪১ | আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২১:৫৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

ময়মনসিংহে উদ্ধার হওয়া নারীর মরদেহটি মায়ের বলে জানিয়েছিলেন প্রায় এক মাস ধরে মাকে হন্য হয়ে খুঁজে বেড়ানো মরিয়ম মান্নান। বৃহস্পতিবার মায়ের মরদেহ পাওয়ার খবর জানান তিনি। লাশের পরনে থাকা কাপড় দেখে সেটি চিহ্নিত করেন মরিয়ম। তবে লাশটি আসলেই মরিয়মের মায়ের কিনা তা নিশ্চিত হতে ডিএনএ পরীক্ষার উদ্যোগ নিচ্ছে পুলিশ। রবিবার ফুলপুর থানা পুলিশ দুজনের ডিএনএ মিলিয়ে দেখার জন্য আদালতে আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই খুলনার পরিদর্শক আবদুল মান্নান।

শুক্রবার মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই খুলনার ইন্সপেক্টর আবদুল মান্নান এ তথ্য জানান।

অপহরণ মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই খুলনার ইন্সপেক্টর আবদুল মান্নান জানান, ফেসবুক স্ট্যাটাসের বিষয়টি জানতে পেরে তিনি রাতে বাদীপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। রহিমার মেয়ে মরিয়ম মান্নান দাবি করেন যে, ময়মনসিংহে উদ্ধার হওয়া লাশটি তার মায়ের। এরপর শুক্রবার সকালে মরিয়মসহ তার চার বোন ও কয়েকজন আত্মীয়-স্বজন ময়মনসিংহের ফুলপুর থানায় যান। লাশের ছবি, পরনের কাপড় ও লাশ উদ্ধারের সময় থাকা কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে মরিয়ম দাবি করেন যে, লাশটি তার মায়ের।

আবদুল মান্নান বলেন, মরিয়ম মান্নান উদ্ধার হওয়া লাশের ডিএনএর সঙ্গে তার ডিএনএ মিলিয়ে দেখার জন্য ফুলপুর থানায় লিখিত আবেদন করেছেন। লাশ উদ্ধারের সময় ময়মনসিংহ পিবিআইয়ের একটি দল সেখানে যায়। এছাড়া মরিয়ম ও তার পরিবারের সদস্যরা ফুলপুর থানায় যাওয়ার পর পিবিআইয়ের ওই দলও সেখানে যায়। এই দলের সঙ্গে মরিয়ম নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।

আগামী রবিবার ফুলপুর থানা পুলিশ দু জনের ডিএনএ মিলিয়ে দেখার জন্য আদালতে আবেদন করবে জানিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, আদালত অনুমতি দিলে দুজনের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ঢাকায় সিআইডির ল্যাবে পাঠানো হবে। ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল পেতে সাধারণত ১৫/২০ দিন থেকে এক মাস পর্যন্ত সময় লাগে। ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া নিশ্চিত হওয়া যাবে না যে ওই মরদেহ মরিয়মের মায়ের কিনা।

ময়মনসিংহের ফুলপুর থানার ওসি মো. আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, গত ১০ সেপ্টেম্বর ফুলপুর থানার বওলা ইউনিয়নের কুকাইল গ্রামের একটি কবরস্থান থেকে বস্তাবন্দি এক নারীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার হয়। এরপর ময়নাতদন্ত শেষে অজ্ঞাত পরিচয় হিসেবে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে মরদেহটি দাফন করা হয়। এ ঘটনায় এসআই সবুজ মিয়া বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মরিয়ম মান্নান শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফুলপুর থানায় আসেন।

এরপর জব্দকৃত সালোয়ারের রং দেখে ধারণা করছেন যে, সালোয়ারটি তার মায়ের হতে পারে। তিনি লাশের ডিএনএ প্রোফাইল ম্যাচ করতে আগ্রহী এবং সেজন্য আবেদন জমা দিয়েছেন। এখন ডিএনএ প্রোফাইল ম্যাচ করে দেখা হবে।

বয়সের কথা উল্যেখ করে আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, গত ১০ সেপ্টেম্বর মরদেহটি উদ্ধারের পর দাফনের সময় বয়স উল্লেখ করা হয়েছিল ৩২ বছরের কাছাকাছি, আর নিখোঁজ রহিমা বেগমের বয়স ৫২ বছর। ডিএনএ পরীক্ষা করা হলেই নিশ্চিত হওয়া যাবে যে, লাশটি মরিয়ম মান্নানের মায়ের নাকি অন্য কারও।

এর আগে গত ২৭ আগস্ট রাত ১০টার দিকে খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার বাসার উঠানের নলকূপে পানি আনতে যান রহিমা বেগম। কিন্তু এক ঘণ্টা পরও তিনি বাসায় না ফেরায় তাঁর সন্তানেরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। নলকূপের পাশে তাঁদের মায়ের জুতা, ওড়না ও পানির পাত্র পড়ে থাকলেও মাকে তাঁরা খুঁজে পাননি। এ ঘটনায় ওই রাতেই রহিমা বেগমের ছেলে দৌলতপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরদিন তাঁর মেয়ে আদুরী আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা পরিচয়ের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় অপহরণ মামলা করেন। এ ছাড়া বিষয়টি র‌্যাবকেও জানানো হয়। এ মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মায়ের সন্ধান চেয়ে ঢাকায় মানববন্ধনের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে দৌড়ঝাঁপ করে আসছেন সন্তানেরা।

(ঢাকাটাইমস/২৩সেপ্টেম্বর/কেআর/কেএম)