ব্রেস্ট ক্যানসারের কোষ ধ্বংস করে মৌমাছির বিষ

প্রকাশ | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:০০ | আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:৫৬

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

মৌমাছির হুল ফুটানো বিষ খুবই যন্ত্রণাদায়ক। কিন্তু মৌমাছির হুল থেকে সংগৃহীত বিষ রোগ নিরাময়ের উপাদান হিসাবে কাজ করতে পারে বলে গবেষকরা দাবি করেছেন।

সাম্প্রতিক একটি গবেষণা জানাচ্ছে, মৌমাছির বিষ ব্রেস্ট ক্যানসারের কোষ ধ্বংস করতে সক্ষম। মৌমাছির বিষে থাকা ‘মেলিটিন’ নামক উপাদান ব্যবহার করে ‘ট্রিপল নেগেটিভ’ এবং ‘এইচআর২’ নামে দু’ধরনের ব্রেস্ট ক্যানসারের কোষ ধব্বংস করতে পারে বলে জানাচ্ছে গবেষকরা।

মৌমাছির বিষে থাকা মেলিটিন উপাদান ক্যানসার কোষ, এইডস ভাইরাসকে ধ্বংস করতে পারে। মৌমাছির বিষে থাকা মেলিটিন দুরারোগ্য ‘ট্রিপল-নেগেটিভ’ (টিএনবিসি) এবং ‘এইচইআর২-এনরিচড’ ব্রেস্ট ক্যান্সারের কোষ ধ্বংসে কাজ করে। মেলিটিন ২৬টি অ্যামিনো এসিড দিয়ে গঠিত একটি ‘বেসিক পেপটাইড; যা ওই দুই ধরনের ব্রেস্ট ক্যানসার কোষের বিরুদ্ধে কাজ করে।

অস্ট্রেলিয়ার ‘হ্যারি পারকিন্স ইনস্টিউট অফ মেডিক্যাল রিসার্চ’-এর একটি গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই একটি তথ্য। তারা জানাচ্ছেন, মৌমাছির বিষে এমন অসংখ্য উপাদান রয়েছে, যা ক্যানসারের কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এর আগেও অবশ্য মৌমাছির বিষ নিয়ে একটি গবেষণায় দাবি করা হয়েছিল, এতে ত্বকের ক্যানসারের অন্যতম কারণ মেলানোমা নিরোধক উপাদান রয়েছে।

উল্লেখ্য, স্ত্রী কর্মী মৌমাছি ও রানী মৌমাছির বিষ থাকে। মৌমাছির বিষকে বলা হয় এপিটক্সিন। একটি পূর্ণাঙ্গ মৌমাছি একবার কামড় দিয়ে ০.১ মি.গ্রাম বিষ প্রবেশ করাতে পারে। মৌমাছির বিষে প্রধান উপাদানগুলো হলো – পানি ৮৮%, বিষ ১%, মেলিটিন ৪০-৬০%, এপামিন ২-৫%, এমসিডি ২-৩%, এডোলাপিন ১%, ফসফোলাইপেজ ১২-১৫%, হায়ালুরোনিডেজ ১.৫-২%।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে বিশ্বে প্রতি আটজনে একজনের ব্রেস্ট ক্যানসার!  বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৫ হাজারের বেশি মানুষ ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। এদের মধ্যে শতকরা ৯৮ শতাংশের বেশি নারী, তবে খুব অল্প সংখ্যক পুরুষও স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন।

চিকিৎসকদের মতে, ব্রেস্ট ক্যানসারের ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ের চাবিটি থাকে আক্রান্তের কাছেই। শারীরিক কোনও পরিবর্তন চোখে পড়লেই তৎক্ষনাৎ চিকিৎসকের কাছে যাওয়া প্রয়োজন। প্রথম থেকেই এই অসুখ নিয়ে সচেতন থাকতে হবে। বয়স ৩০ পেরোলেই শারীরিক কোনও অস্বস্তি অনুভব করলে যেতে হবে চিকিৎসকের কাছে। তবে মনে রাখা প্রয়োজন, ব্রেস্টের সব লাম্প বা টিউমারেই কিন্তু ক্যানসার নয়। বরং ১০-১৫ শতাংশ টিউমারের ক্ষেত্রে এই ভয় থাকে। তবে তার চিকিৎসা দ্রুত শুরু হওয়া দরকার।

 

যেভাবে বুঝবেন এমন ঘোরতর অসুখ শরীরে বাসা বাঁধছে কি না?

১) ব্রেস্টে তৈরি হওয়া মাংসের পিণ্ড সব সময় চামড়ার আড়ালেই থাকে। এ ছাড়া ব্রেস্ট বৃন্তের আশপাশেও এই ধরনের মাংসের দলা থাকলে তা এড়িয়ে যাবেন না। মাংসপিণ্ডগুলো টিপলে যদি শক্ত লাগে তা হলে অতি অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যান।

২) ব্রেস্টে কোনও রকম র‌্যাশ কিংবা চুলকানির মতো অস্বস্তি হচ্ছে কি? এমন হলে কিন্তু ফেলে রাখা ঠিক হবে না। ব্রেস্ট ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে এগুলো।

৩) কাঁধ এবং ঘাড়ের ব্যথাও কিন্তু ব্রেস্ট ক্যানসারের অন্যতম উপসর্গ। কোনও কারণ ছাড়াই কাঁধে ব্যথা হলে নিজের মতো ব্যথার উপশমের পথ না খুঁজে, চিকিৎসককে দেখিয়ে নিন।

৪) ব্রেস্টের আকার বদলে যাওয়াও, ব্রেস্ট ক্যানসারের অন্যতম ইঙ্গিত। ব্রেস্টের আকার বিকৃত হলে কখনও ফেলে রাখবেন না।

৫) অন্তর্বাস পরে থাকার সময় যদি কোনও ঘর্ষণ বা ছড়ে যাওয়ার মতো অনুভূতি হয় কিংবা উপুড় হয়ে শুলে যদি ব্যথা লাগে, তবে চিকিৎসকের কাছে যেতে দেরি করবেন না।

 

ব্রেস্ট ক্যানসারের প্রধান কারণ হলো- বংশগত, তারপর অতিরিক্ত পরিমাণে ভারী ও চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণ, নিয়মিত চেকআপ না করানো, ব্যায়াম না করা ইত্যাদি। এর বাইরেও আরও বহু কারণে ব্রেস্ট ক্যানসার হয়ে থাকে। অনেক সময় ব্রেস্টে সিস্ট হয়।

ক্যানসার প্রতিরোধের বড় মাধ্যম হলো সুস্থ জীবন যাপন এবং স্বাস্থ্যকর ডায়েট। কিছু খাবার আছে যা ব্রেস্ট ক্যানসার প্রতিরোধ করে। যেমন- সবুজ শাক-সবজি, লেবু, টক ফল, মাশরুম, রসুন,ডার্ক চকলেট, ওটমিল, দেশি মুরগি, কালজিরা, আদা, পেঁয়াজ, গ্রিন টি, গাজর, লালশাক-সবজি, বেদানা, সামুদ্রিক মাছ, করলা, ব্ল্যাক কফি, টকদই, দুধ, ডিম, টমেটো, শসা ও পেঁয়াজ।

ব্রেস্ট ক্যানসার চিকিৎসকের পরামর্শের পাশাপাশি খাবার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু ব্যবস্থা না নিলে সিস্ট থেকে টিউমার হয়ে যায় এবং পরবর্তী সময়ে এটি ক্যানসার ছড়ায়। সে জন্য সময় থাকতেই একজন ভালো গাইনোকলজিস্ট, অনকোলজিস্ট ও দক্ষ ডায়েটিশিয়ানের কাছে পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৪ সেপ্টেম্বর/আরজেড)