রংতুলির শেষ আঁচড়ে মূর্ত হচ্ছে দেবী দুর্গার রূপ

আহমাদ সোহান সিরাজী, সাভার
| আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৫:২১ | প্রকাশিত : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৫:১২
মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে প্রতিমাশিল্পীদের রংতুলির আঁচড়ে দেবীকে মূর্ত করে তোলার কাজ (ছবি: ঢাকাটাইমস)

সারা বছরের অপেক্ষা, শরৎ এলেই সাজ সাজ রব। অবশেষে দুয়ারে পা ফেলবেন দেবী দুর্গা, মাঝে মাত্র আর কয়েকটা দিন। ঢাকেও কাঠি পড়ল বলে। সপ্তাহ শেষেই আগামী ১ অক্টোবর শনিবার ষষ্ঠীর বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।

স্বাভাবিকভাবেই এখন পূজার তোড়জোড় চরমে। সব জায়গায় প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। এখন চলছে রংতুলির আঁচড়ে দেবীকে মূর্ত করে তোলার কাজ। আর এ কারণে মণ্ডপে মণ্ডপে প্রতিমাশিল্পীদের এখন খাওয়ারই যেন ফুরসত নেই।

সনাতন ধর্ম মতে, দেবী দুর্গা অসুর দমনের শুভ শক্তি নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করবেন। দুষ্টের দমন আর সৃষ্টের পালনের জন্যই দশ হস্তে দেবী দুর্গা স্বর্গ থেকে মর্ত্যলোকে আগমন করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষগুলো প্রতি বছর শারদীয় উৎসব হিসেবে দুর্গাপূজা উদযাপন করে আসছে। তাই পরিবার পরিজনের জন্য এখন কেনা কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

ঘরে বাইরে পূজাকে ঘিরে চলছে ব্যস্ততা। জামা কাপড় তৈরি, কেনা-কাটায় সরগরম শহরের বিপণী বিতানগুলোতে। শারদীয় দুর্গা উৎসবকে কেন্দ্র করে চারপাশে চলছে এখন উৎসবের আমেজ।

‘‘ উৎসবের সব আয়োজন শেষের দিকে। তবে বিদ্যুৎ ব্যবহারে কিছু বিধিনিষেধ থাকায় আলোকসজ্জায় সামান্য ঘাটতি হলেও উৎসবের আনন্দে ঘাটতি হবে না।

- উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নন্দ গোপাল সেন

এবার ঢাকার সাভারে ২২৪টি ও ধামরাইয়ে ২০৪টি পূজামণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে শারদীয় দুর্গোৎসব। গত দুই বছর করোনার কারণে বিধিনিষেধের মধ্য দিয়ে সীমিত পরিসরে উৎসবটি পালন করা হয়। তাই এবারের আয়োজন হচ্ছে বেশ ঘটা করে। এক মাস ধরে মণ্ডপগুলোতে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ।

অধিকাংশ মণ্ডপে প্রতিমা নির্মাণের কাজ শেষ। প্রতিমাশিল্পীদের রংতুলির কাজ বাকি। শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার সঙ্গে রাত-দিন সমান তালে কাজ করছেন তারা। মনের মাধুরী মিশিয়ে নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলছেন দুর্গা দেবীর আকৃতি। পাশাপাশি চলছে লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ ও কার্তিকের প্রতিমা তৈরির কাজ। তবে এবার পূজার সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু বাজেট তেমন বাড়েনি বলে জানান প্রতিমাশিল্পীরা।

সাভারের বিভিন্ন মন্দিরে প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন রিপন পাল ও তার সহযোগীরা। শেষ মুহুর্তের ব্যস্ততায় দম ফেলবার ফুরসত নেই তাদের। রিপন পাল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এ বছর ১৩টি প্রতিমার কাজ শুরু করেছি। সামনে বেশি সময় না থাকায় দিনরাত কাজ করতে হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘এ বছর প্রতিটি প্রতিমা তৈরির খরচ ৮০-৯০ হাজার টাকা নিলেও আমাদের পোষাবে না। কারণ প্রয়োজনীয় উপকরণের মধ্যে রং, কাপড়, পুঁথির মালা, পরচুলা, চুমকি, শোলা ও কারিগরের মজুরিসহ সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে।’

এদিকে এবার বিধিনিষেধ না থাকায় আনন্দের মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজা উদযাপন করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। সাভার উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার দাস ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘করোনা মহামারির পর আশা করছি এবার অত্যন্ত সুন্দর ও আনন্দের মধ্য দিয়ে সবাই মিলে উৎসবটি পালন করতে পারব।’

তবে বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে এ বছর সরকারের বিধিনিষেধের কারণে আলোকসজ্জায় কিছুটা ঘাটতি থাকবে বলে মনে করছেন পূজা সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু এতেকরে আনন্দে কোনো ঘাটতি পরবেনা বলে জানান ধামরাই উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নন্দ গোপাল সেন। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘উৎসবের সব আয়োজন শেষের দিকে। তবে বিদ্যুৎ ব্যবহারে কিছু বিধিনিষেধ থাকায় আলোকসজ্জায় সামান্য ঘাটতি হলেও উৎসবের আনন্দে ঘাটতি হবে না।’