কুড়িগ্রামে বিভিন্ন উপজেলায় শিক্ষকতায় জাল সনদে চাকরি

প্রকাশ | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৮:০৫ | আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৮:১৮

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

কুড়িগ্রামে শিক্ষকতা পেশায় বিভিন্ন উপজেলায় জাল সনদে দীর্ঘদিন ধরে চাকরির অভিযোগ উঠেছে। জাল সনদে চাকরির সত্যতা পেয়ে বেতন ভাতা বন্ধের সুপারিশ করা হলেও তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। তবে জেলা শিক্ষা অফিস এই বিষয়ে কোন নির্দেশনা পায়নি বলে জানানো হয়।

অনুসন্ধানে দেখাযায়, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলার সুজনের কুঠি রুহুল আমিন দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক নাসরিন সুলতানা কম্পিউটারের শিক্ষকতা শুরু করেন ২০০৯সালে। তার এমপিও হয় ২০১০সালে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বেতন ভাতা নিয়মিত তুলছেন। এছাড়াও উপজেলার কাশিপুর বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক আসমা খাতুনেরও সনদটি জাল। তিনি ২০১৩ সালে যোগদান করলেও তার এমপিও হয়নি। গত বছর ২৪ জুন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের (শিক্ষা ও কল্যাণ শাখা) কুড়িগ্রামের স্বারক নং-০৫.৪৭.৪৯০০.০১৫.০২.০১৪.২১-১৩৩ ফুলবাড়ি উপজেলার ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩জন শিক্ষকের নিবন্ধন সনদ যাচাই করার জন্য পত্র দেয়া হয়। উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে আহ্বায়ক করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত দল গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা যায় উক্ত শিক্ষকদের নিবন্ধন সনদ সঠিক নয়। ফলে নিবন্ধন সনদটি জাল প্রমাণিত হওয়ায় চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি ০৫.৪৭.৪৯১৮.০০০.০২.০৬১.২১.৬৮ স্বারক নং এ ফুলবাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে উক্ত শিক্ষকের বেতন ভাতা বন্ধের সুপারিশ করে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি পত্র দেয়া হয়।

একই অবস্থা নাগেশ্বরী উপজেলার নেওয়াশি ইসলামিয়া আলিম মাদ্ররাসার শরীর চর্চার সহকারী শিক্ষক হারুনুর রশিদও জাল সনদ ভুক্ত তালিকায় নাম রয়েছে। তিনি এমপিও ভুক্ত হয়ে নিয়মিত বেতন পেয়ে আসছেন। তদন্তে জাল সনদের বিষয়টি প্রমাণিত হবার পরও বহাল তবিয়তে আছেন জেলার অনেক শিক্ষক। জাল সনদের বিষয়টি প্রকাশ পেলেও তাদের বিরুদ্ধে জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে কোনো পত্র বা নির্দেশনা আসেনি। এছাড়াও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০১৬সালে সরকার ঘোষিত বাতিলকৃত দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ দিয়ে এখনো চাকরি করে নিয়মিত বেতন ভাতা উত্তোলন করছেন। এই সনদে নাগেশ্বরী ডিগ্রি কলেজের গ্রন্থাগার পদে হালিমা খাতুন চাকরি করছেন। তার সনদ অনুযায়ী ২০১৩ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় হতে পাশ করেন বলে জানা যায়।

এছাড়াও অনুসন্ধানে দেখাযায়, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) ২০২১সালে ১০৫জন শিক্ষকের নিবন্ধন সনদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। যার স্বারক নং-ডিআইএ/এনটিআরসিএ/ রাজশাহী/৯৭৭ তারিখ-২৯সেপ্টেম্বর ২০১৬। এই স্বারকে সহকারি পরিচালক (শিক্ষাতত্ব ও শিক্ষা মান) লোকমান হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয় ৪,৬ হতে ২১,২৫,২৬,২৮ হতে ৩২, ৩৫ হতে ৪২,৪৪ হতে ৬৪ এবং ৬৭ হতে ১০৫নং তালিকা ভুক্ত ব্যক্তিগণ জাল সনদের আশ্রয় নিয়েছেন মর্মে প্রতিয়মান হয়। তাই সনদধারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে প্রয়োজনী পদক্ষেপ নেবার জন্য জেলার শিক্ষা অফিসার নির্দেশ প্রদান করে।

শিক্ষক নাসরিন সুলতানা বলেন,আমি জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে ২০০৮-০৯সালে এই সনদ সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু এগুলো জাল নাকি সে বিষয়ে তারা কিছুই জানে না। এখন অনলাইনের মাধ্যমে জানতে পারছেন তার সনদটি সঠিক নয়।

শিক্ষক হারুনুর রশিদ বলেন,তার সনদটি সঠিক। কিভাবে জাল সনদের তালিকায় নাম এসেছে সেটি তার জানা নেই। 

তালিকা ভুক্ত শিক্ষকরা নিয়মিত বেতন ভাতা উত্তোলন করার কথা স্বীকার করে সুজনের কুঠি রুহুল আমিন দাখিল মাদ্রাসার সুপারিন্টেনডেন্ট মিজানুর রহমান বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে একাধিকবার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অডিট হলেও জাল সনদের বিষয়টি প্রকাশ পায়নি। এছাড়াও বেতন ভাতা বন্ধের জন্য মন্ত্রণালয় কিংবা স্থানীয় প্রশাসন থেকে কোন লিখিত চিঠি না আসায় ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি।

জেলা শিক্ষা অফিসার  শামছুল আলম বলেন,জাল সনদধারীদের বিষয়ে এনটিআরসি থেকে সনদ যাচাইয়ের কোন নিদের্শনা আসেনি। তালিকা পেলে সেগুলো যাচাই বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করবেন বলে জানান তিনি। এছাড়াও তালিকাভুক্ত শিক্ষকের বেতন বন্ধ করার সুপারিশের কোনো চিঠি তার বিভাগে আসেনি।

(ঢাকাটাইমস/২৪সেপ্টম্বর/এআর)