কেমন আছে ভোলায় নুর আলমের পরিবার

প্রকাশ | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২৩:১৬

আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস

ভোলায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিহত জেলা ছাত্রদল সভাপতি নুরে আলমের হত্যার সঠিক বিচার পাবে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে তার পরিবার।

শনিবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে ঢাকা টাইমসের সঙ্গে আলাপকালে নিহত নুর আলমের বড় ভাই আবুল কাশেম এই সংশয় প্রকাশ করেন।

ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘সাড়ে তিন বছরের মধ্যে বাবা-মা আর সবচেয়ে আদরের ছোট ভাইটাকে হারালাম। এটা আমাদের পরিবারের সবচেয়ে বড় একটি ট্রাজেডি। ওর ছোট পাঁচ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। মেয়েটি এখনও বোঝে না যে ওর বাবা আর নেই, সে কখনও ফিরে আসবে না।’

নূর আলমের সংসার কিভাবে চলছে? প্রশ্নের জবাবে আবুল কাশেম বলেন, ‘আমার ভাই ঠিকাদারি করতো। কিন্তু ও ছাত্রদল করতো বলে ওকে সরকারি দপ্তর থেকে কোন কাজ দেওয়া হতো না। ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাওয়া কাজ কিনে তাদের নামের ঠিকাদারি লাইসেন্সে কাজ করে কিছু টাকা আয় করতো। আর ওই টাকায় ওর সংসার চলতো। এখন ওর কোন টাকা জমা নেই। আমার আর ওর শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সহযোগিতা নিয়ে এখনও ওর স্ত্রী আর মেয়েকে চলতে হবে।’

নুর আলম হত্যার বিচার নিয়ে ভাই আবুল কাশেম বলেন, ‘আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই। কিন্তু এই সরকারের আমলে কতটুকু সঠিক বিচার পাবো, তা নিয়ে আমাদের সংশয় রয়েছে।’

গত ৩১ জুলাই বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে লোডশেডিং ও জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে ভোলা জেলা বিএনপি। প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সদর রোডে যাওয়ার সময় পুলিশ ও বিএনপির সংঘর্ষ বাঁধে।

এতে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী এবং পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে আব্দুর রহিম নামে স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতা নিহত হন। একই দিন আহত জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নুরে আলম আহত হন। ঢাকার গ্রীনরোড ধানমন্ডি কমফোর্ট হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিন দিন পর নুরে আলমের মৃত্যু হয়

সেদিনের ঘটনার বিষয়ে আবুল কাশেম বলেন, ‘ওইদিন আমার ভাই রাস্তায় শান্তভাবে দাঁড়িয়েছিলো। পুলিশ এসে ওর পায়ের পিছনে আঘাত করে, এতেই  ও মাটিতে পড়ে যায়। তখন পুলিশ গুলি করে ওকে হত্যা করে। কী নির্মমভাবে মেরেছে, আপনারাতো দেখেছেন, মাথা থেকে মগজ বেরিয়ে গেছে।’

এদিকে গত ২২ সেপ্টেম্বর নুর আলমের স্ত্রী  ইফফাত জাহান বাদী হয়ে ৪৬ পুলিশ সদস্যের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন। ভোলায় বিএনপির সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিহত জেলা ছাত্রদল সভাপতি নুর আলম নিহত হন।

ভোলার জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আলী হায়দার কামালের আদালতে সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক  (এসআই) আনিস উদ্দিনকে প্রধান আসামি করে ৪৬ পুলিশ সদস্যেকে আসামী করে এ মামলা করা হয়।

ইফফাত জাহানের পক্ষে আইনজীবী অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম বাছেত বলেন, গত ৩১ জুলাই বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন জেলা ছাত্রদল সভাপতি নুরে আলম। ঢাকার গ্রীনরোড ধানমন্ডি কমফোর্ট হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩ দিন পর নুরে আলমের মৃত্যু হয়।

নুরে আলমের স্ত্রী ইফাত জাহানের দাবি, পুলিশের গুলিতে তার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। আদালত তার এজাহার  আমলে নিয়ে ৮ সেপ্টেম্বর মধ্যে তথ্য প্রমাণাদি আদালতে দাখিলের জন্য সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ  দিয়েছিলেন।

বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, নুরে আলম ও আব্দুর রহিম পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। এর আগে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আব্দুর রহিম নিহত হওয়ার ঘটনায় তার স্ত্রী ভোলা মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আরমান হোসেনকে প্রধান আসামি করে ৩৬ পুলিশের বিরুদ্ধে ভোলার আদালতে একটি হত্যা মামলা করেন।

নুরে আলমের বড় আবুল কাশেম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এ ঘটনায় নুর আলমের স্ত্রী  ৪৬ জন পুলিশের নামে আদালতে একটি মামলা করেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা চার ভাই চার বোন। নুর আলম মধ্যে সবার ছোট ছিল। সাড়ে তিন বছরের মধ্যে বাবা-মা আর ছোট ভাইকে হারিয়েছি। আল্লাহ ওকে মাত্র ৩৭ বছরের আয়ু দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। ও খুব সাহসী ছিলো। কিন্তু ওর চিন্তাও ছিলো না যে পুলিশের গুলিতে তার প্রাণ যাবে।’

(ঢাকাটাইমস/২৫সেপ্টেম্বর/এএ/ডিএম)