মুখোমুখি আ.লীগ-বিএনপি, দুই দলই ছাড়ে নারাজ

প্রকাশ | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৭:৪৭

জাফর আহমেদ, ঢাকাটাইমস

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে সরকার পতনে আন্দোলন করছে দলটি। আর এই সরকারের অধীনেই নির্বাচন আয়োজনে অনঢ় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বিদ্যমান এই রাজনৈতিক সংকট সমাধানে সংলাপ-সমঝোতায় জোর দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।

বিএনপির অভিযোগ, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার বিরোধী দলকে রাজনীতির মাঠ থেকে সরিয়ে দিতে আক্রমণ শুরু করেছে। আর তারই ফলাফল হিসেবে দেশে সহিংসতা শুরু হয়েছে। তবে বিএনপির এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা বলছেন, বিএনপির কোনো কর্মসূচিতে তারা বাধা দিচ্ছে না। বরং বিএনপি লাশ ফেলে রাজনীতি জমাতে চাইছে বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

দেশের রাজনীতিতে এমন সংঘাতময় পরিস্থিতি শুরু হয় ভোলায় বিএনপির কর্মসূচিতে সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে। জুলাই মাসের শেষ দিকে ভোলার ঘটনায় গুলিতে বিএনপির দুজন নেতাকর্মীর মৃত্যু হয়। এরপর দেশের নানা জায়গায় বিএনপির সমাবেশ ঘিরে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়েছে। তবে ১ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে একজন নিহত হলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ওইদিনই আরও কয়েকটি জেলায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

সম্প্রতি ঢাকার বনানী এবং মিরপুর এলাকায় বিএনপির কর্মসূচি পণ্ড হয় এবং দলটির কয়েকজন শীর্ষনেতা আহত হন। সবশেষ গত বুধবার মুন্সীগঞ্জে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ এক যুবদলকর্মীর মৃত্যু হয়।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ  নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার এখনো প্রায় ১৫ মাস বাকি। তবে এই নির্বাচন ঘিরে এমন বিএনপি-আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি অবস্থান রাজনীতিকে সহিংসতাপূর্ণ করে তুলতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

তারা বলছেন, প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটলেও কোনো দল নমনীয় না হওয়ায় রাজনৈতিক পরিবেশের অবস্থা আরও অবনতি হতে পারে। এই অবস্থা থেকে দ্রুত পরিত্রাণের লক্ষ্যে রাজনৈতিক সংলাপের বিকল্পও নেই। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী মুখোমুখি অবস্থানে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক পরিবেশেরও অবনতি হবে। এতে করে জনগণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হবে। ফলে জনগণ আরও অসহায় হয়ে পড়বে।
তাই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নিজেদের বোঝাপড়াসহ সংলাপের কোনো বিকল্প নেই। কারণ সংলাপ হলে আলোচনার মাধ্যমে সবকিছুর সমাধান হওয়া সম্ভব। কিন্তু রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বক্তব্য তেমন কোনো আভাস ইঙ্গিত নেই।

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সভা সমাবেশে বাঁধা দেওয়ার অভিযোগ করছে বিএনপি। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বিএনপির কোনো কর্মসূচিতে বাঁধা দিচ্ছে না। বিএনপির আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা করে দেশের শান্তি বিনষ্ট করছে তাই জনগণের নিরাপত্তা দিতেই তাদের প্রতিরোধ করা হচ্ছে।

চলতি মাসেই বিএনপির আন্দোলনে বাঁধা দেওয়ার কয়েকটি ঘটনায় সংঘর্ষেও জড়িয়েছে আওয়ামী লীগ। এতে সারাদেশে বেশ কয়েকজনের প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। তবে এরপরও দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেওয়া দিন দিন বাড়ছে। আর এর ফলে রাজনৈতিক পরিবেশের অবনতি হচ্ছে।

এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ঢাকা টাইমসকে বলেন, দরাজনৈতিক সংকট দুই দলের মুখোমুখি সংঘর্ষের পরিণতি খুব ভালো হবে না। সরকারি দলই বিরোধী দলের ওপর আক্রমণ করছে বিষয়টা ঠিক এমন না। এখন এসব পুলিশি যোগসাজশে করা হচ্ছে।’

সুজন সম্পাদক মনে করেন, এমন পরিস্থিতি বজায় থাকলে পরবর্তী সময়ে বিরোধী দলের নির্বাচন করার কোনো অবস্থাই থাকবে না। আর এভাবে বিরোধীদের দমন করে ক্ষমতাসীন দলের জনসমর্থন বাড়বে না বরং কমবে।

বদিউল আলম মজুমদার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এভাবে বিএনপিকে নিঃশ্চিন্ন করা হলে, সেটি উগ্রবাদীদের জন্য সুবিধা হবে। নতুন করে উগ্রবাদ জন্ম নেবে। এটা কোনো গণতান্ত্রিক উপায় হতে পারে না।’

বিরোধী দলের বিরুদ্ধে হামলা মামলা যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেখানে নির্বাচন কমিশন সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন বদিউল। বলেন, ‘কিন্তু ইসি দেখেও দেখছে না শুনেও শুনছে না। আমরা জানি না তারা কার স্বার্থ রক্ষা করছে। আমি মনে করি জনভোগান্তি বা সংকট কমাতে সরকার এটা চাইলে বন্ধ করতেই পারে।’

সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহিদ খান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘গনতন্ত্রের জন্য অবশ্যই কথা বলতে হবে। সেটা সংলাপ হোক বা অন্য কিছু। তবে আলাপ আলোচনার জন্য কোনো পক্ষ শর্ত দিলে সেটি কঠিন হয়ে যাবে। এখন দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কি করবে। তাদের অনেকগুলো প্রশ্ন আছে সেগুলোর সমাধান হতে হবে। না হলে তো আলাপ আলোচনা হবে না।’

এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই সচিব বলেন, ‘দুই দলকেই ছাড় দিতে হবে। প্রধান দুই রাজনৈতিক দলকে নিজেদের ভুলভ্রান্তি জনগণের সামনে খোলাসা করতে হবে, যাতে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি না হয়। ১৯৯০ সালে একটা রূপরেখা দেওয়া হয়েছিল। এবারও আলোচনা হোক বা সংলাপ হোক এর একটা রূপরেখা থাকতে হবে। নইলে কোনো দৃশ্যমান ফল হবে না।’

দুদলের নেতারা যা বলছেন:

আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য খায়রুজ্জামান লিটন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে কোনো বাধা দিচ্ছে না। যখন আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা করবে, জনগণের জানমাল রক্ষায় আওয়ামী লীগ তখন মাঠে থাকে।’

জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সংলাপের প্রয়োজন মনে করেন কি না প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সংলাপ হতে পারে। তবে সেটা কোনো শর্ত ছাড়া।’

আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন হতে এখন অনেক সময় বাকি আছে। তাই দলীয় রোডম্যাপ তৈরি করা হয়নি, সামনে হবে। আর বিএনপির কোনো সভা-সমাবেশ আওয়ামী লীগ বাধা দিচ্ছে না। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। তবে আওয়ামী লীগ সবসময় শান্তির পক্ষে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বিএনপি কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে না। সরকার পতনে আমাদের আন্দোলন চলবেই। আওয়ামী লীগ আমাদের বাধা দিয়ে দমাতে পারবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের এখনো অনেক সময় বাকি। আর জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আমরা কোনো সংলাপ চাই না। কিসের সংলাপ? সরকার পতন আমরা করবোই।’

(ঢাকাটাইমস/২৫সেপ্টেম্বর/ডিএম)